হিজাব না পরায় ইরানের ২০ অভিনেত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞা
- আপডেট সময় : ০৪:২৬:৫১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৫ বার পড়া হয়েছে
যথাযথভাবে হিজাব না পরে বাইরে যাওয়ায় ২০ অভিনেত্রীর ওপর নিষেধাজ্ঞার খড়গ আরোপ করেছে ইরান। অক্টোবরের শেষ দিকে ওই সব অভিনেত্রীর নাম প্রকাশ করে দেশটির সংস্কৃতি ও ইসলামি নির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) জার্মানির সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের প্রতিবেদনে বলা হয়, সংস্কৃতি ও ইসলামি নির্দেশনা বিষয়ক মন্ত্রী মোহাম্মদ মেহদি এসমাইলি জানান, বাধ্যতামূলক হিজাব আইন না মানায়, তাদের সঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।
তালিকাভুক্ত অভিনেত্রীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন অভিনেত্রী তারানেহ আলিদুস্তি রয়েছেন। ২০১৬ সালে মুক্তি পাওয়া ‘দ্য সেলসম্যান’ মুভিতে আলিদুস্তি অভিনয় করেছিলেন। এই চলচ্চিত্রের পরিচালক আসগার ফারহাদি সেরা বিদেশি ভাষার মুভি ক্যাটাগরিতে অস্কার জিতেছিলেন।
আলিদুস্তি আগে হেডস্কার্ফ পরতেন। বিদেশে গেলেও এর ব্যতিক্রম করতেন না। কিন্তু গতবছর নীতি পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার পর ২২ বছর বয়সি মাশা আমিনির মৃত্যু হলে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই সময় বিক্ষোভের প্রতি সমর্থন ও সংহতি জানাতে আলিদুস্তি ইনস্টাগ্রামে তার একটি ছবি প্রকাশ করেছিলেন, যেটিতে তার মাথায় হিজাব ছিল না। আর তার হাতে ধরা কাগজে লেখা ছিল ‘নারী, জীবন ও স্বাধীনতা`।
ছবিটি প্রকাশের পর আলিদুস্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। দুই সপ্তাহ পর তিনি জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। কাজের উপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় আলিদুস্তি সামাজিক মাধ্যমে লিখেছেন, ‘`আমি তোমাদের হেডস্কার্ফ পরার বাধ্যবাধকতা মানছি না, যেটা থেকে এখনও আমার বোনদের রক্তে ঝরছে।`
এদিকে, অক্টোবর মাসের শুরুতে ১৭ বছর বয়সি আরমিতা জেরাভান্দ নামের এক শিক্ষার্থী হিজাব না পরে স্কুলে যাচ্ছিলেন। সেই সময় নীতি পুলিশ তাকে হেনস্তা করে। এক পর্যায়ে জেরাভান্দ জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ সেখানে কয়েকদিন কোমায় থাকার পর তাকে ‘ব্রেন ডেড’ ঘোষণা করা হয়। ২৯ অক্টোবর জেরাভান্দকে সমাহিত করা হয়।
তেহরানের এক শিক্ষার্থী ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, `বাইরে বের হওয়ার সময় হেডস্কার্ফ না পরে আমরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছি৷ অনেক অভিনেত্রীকে এখনও হিজাব পরতে দেখাটা কষ্টকর। এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি ইরানে সাম্প্রতিক সময়ে আয়োজিত এক শেষকৃত্য অনুষ্ঠানের কথা উল্লেখ করেছেন৷ ইরানের চলচ্চিত্র পরিচালক দারিউশ মেরজুই ও তার স্ত্রী চিত্রনাট্যকার ভাহিদেহ মোহাম্মাদিফারের শেষকৃত্যের অনুষ্ঠান ছিল সেটি। সেখানে চলচ্চিত্র জগতের মানুষেরা অংশ নিয়েছিলেন।
দারিউশ মেরজুই ও ভাহিদেহ মোহাম্মাদিফারকে ১৮ অক্টোবর নিজ বাড়িতে মৃত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল৷ তাদের শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন ছিল। কর্তৃপক্ষ বলছে, ঐ দম্পতির বাড়িতে কাজ করা সাবেক মালি ডাকাতি করতে গিয়ে এই ঘটনা ঘটেছে৷ তবে অনেকেই এতে সন্দেহ পোষণ করেছেন৷ কারণ ইরানি অনেক পরিচালকের মতো মেরজুইও প্রায়ই সরকারের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন৷ ২০২২ সালের মার্চে তার পরিচালিত শেষ ছবি ‘লা মাইনর’ এর উপর সেন্সর আরোপের পর ৮৩ বছর বয়সি মেরজুই সামাজিক মাধ্যমে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্দেশে একটি কঠোর বার্তা দিয়েছিলেন: ‘‘আমাকে মেরে ফেলুন, যা করতে ইচ্ছা করে করুন… কিন্তু আমি আমার অধিকার চাই৷”
মেরজুই ও মোহাম্মাদিফারের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে অনেক পরিচিত অভিনেত্রী হেডস্কার্ফ পরে উপস্থিত হয়েছিলেন৷ একমাত্র একজন নারী হিজার পরেননি। তিনি হচ্ছেন, ঐ দম্পতির ১৬ বছর বয়সি মেয়ে মোনা মেরজুই।
২০১৭ সাল থেকে জার্মানিতে বাস করছেন ইরানি মঞ্চ অভিনেত্রী ও লেখিকা শোলে পাকরাভান। ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, `আমি জানি, তরুণ প্রজন্ম আমাদের ওপর ক্ষুব্ধ। আমাদের প্রজন্ম রক্ষণশীল এবং সতর্ক।` জার্মানিতে আসার তিন বছর আগে তার মেয়ে রায়হানেহ জব্বারি তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করা ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল৷ পরে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। পাকরাভান তার মেয়েকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সফল হননি। এখন তিনি অন্যদের হয়ে কথা বলার চেষ্টা করছেন। ‘আমি জানি বর্তমানে ইরানে প্রতিরোধের জন্য অনেক মূল্য দিতে হয়,” বলেন পাকরাভান। ‘আপনি যদি দৃষ্টির বাইরে অদৃশ্য হতে না চান, তাহলে আপনাকে অবশ্যই অনিচ্ছা সত্ত্বেও হেডস্কার্ফ পরতে হবে।`