০৭:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

থমথমে গাজীপুর, অর্ধশত গার্মেন্টস ছুটি

বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তুসুকা গার্মেন্টসসহ একাধিক কারখানায় নির্বিচারে ভাংচুর চালায় শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে পুলিশের গাড়িসহ বেশ কিছু গণপরিবহনে হামলা চালিয়ে কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ, র‍্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, জরুন, ভোগরাসহ বেশকিছু এলাকার কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যসব এলাকায় কারখানা স্বাভাবিকভাবে চলছে।

শ্রমিক আন্দোলনের কারণে থম থমে পরিবেশ বিরাজ করছে কোনাবাড়িতে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, শ্রমিকদের অশান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছে একটি কুচক্রী মহল।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, তুসুকা কারখানার ভেতর শ্রমিকরা ভাংচুর করে অবস্থান করছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে অবরোধ এবং যানবাহন ভাঙচুর করতে পারে। তাই পুলিশ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ বলেন, ‘সকালে চান্দনা এলাকায় একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে এরপরই নাওজোড় এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ভাঙচুর করেন এবং সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কোনাবাড়ি এলাকাতেও।’

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের কারণে কোনাবাড়ি, নাওজোড় ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অন্তত ২০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

এদিকে, গত কয়েক দিনের সহিংসতা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে একটি চক্র এমন দাবি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে এরই মধ্যে বেশ কিছু আন্দোলন কারীকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে কোনাবাড়ি এলাকায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন দাবি করেন র‌্যাব-১ এর সিইও লে.কর্ণেল মো.মোশতাক আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় এক মিলিয়নের বেশি শ্রমিক কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। ইতোমধ্যে সরকার তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে।এতে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট থাকবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এক ধাপেই তাদের বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। শান্তিপ্রিয় শ্রমিকরা এরকম ভাঙচুর করতে পারে, রাস্তাঘাট অবরোধ করে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে তা আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, একটি কুচক্রি মহল পরিস্থিতিকে অশান্ত করার জন্য, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এরকম করছে। ‘

গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে আসছেন। এরপর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চান্দনা চৌরাস্তায় লিবাস নিটওয়্যার, হাসান তানভীর ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন।

এখন পর্যন্ত ভাঙচুর ও সহিংসতার অভিযোগে এ পর্যন্ত র্যাব ২৭ জনকে আটক করেছে। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলা যুবদলের এক নেতা সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আন্দোলন চলাকালে শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মারা গেছেন দুই জন শ্রমিক।

থমথমে গাজীপুর, অর্ধশত গার্মেন্টস ছুটি

আপডেট : ০৩:৫৭:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ নভেম্বর ২০২৩

বেতন বাড়ানোর দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় দিনভর বিক্ষোভ করছেন পোশাক শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে কোনাবাড়িসহ আশপাশের এলাকায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় তুসুকা গার্মেন্টসসহ একাধিক কারখানায় নির্বিচারে ভাংচুর চালায় শ্রমিকরা। এক পর্যায়ে পুলিশের গাড়িসহ বেশ কিছু গণপরিবহনে হামলা চালিয়ে কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। পুলিশ, র‍্যাব ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

পরিস্থিতি বিবেচনা করে গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর, কোনাবাড়ি, জরুন, ভোগরাসহ বেশকিছু এলাকার কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে অন্যসব এলাকায় কারখানা স্বাভাবিকভাবে চলছে।

শ্রমিক আন্দোলনের কারণে থম থমে পরিবেশ বিরাজ করছে কোনাবাড়িতে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছে বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ সদস্যরা। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি, শ্রমিকদের অশান্ত করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করতে চাইছে একটি কুচক্রী মহল।

গাজীপুর মেট্রোপলিটনের কোনাবাড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম আশরাফ উদ্দিন জানান, তুসুকা কারখানার ভেতর শ্রমিকরা ভাংচুর করে অবস্থান করছে। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা মহাসড়কে নেমে অবরোধ এবং যানবাহন ভাঙচুর করতে পারে। তাই পুলিশ কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ওই কারখানার সামনে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছে।

গাজীপুর শিল্প পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইমরান আহম্মেদ বলেন, ‘সকালে চান্দনা এলাকায় একটি কারখানায় শ্রমিকরা বিক্ষোভ শুরু করলে তাদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়। তবে এরপরই নাওজোড় এলাকাসহ আশপাশের কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা ভাঙচুর করেন এবং সড়কে টায়ারে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।তাদের আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে কোনাবাড়ি এলাকাতেও।’

গাজীপুর শিল্পাঞ্চল-২ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম বলেন, ‘শ্রমিকদের বিক্ষোভ ও আন্দোলনের কারণে কোনাবাড়ি, নাওজোড় ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় অন্তত ২০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।’

এদিকে, গত কয়েক দিনের সহিংসতা, ভাঙচুর ও সড়ক অবরোধের ঘটনায় রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছে একটি চক্র এমন দাবি করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী বলছে, নাশকতা সৃষ্টির অভিযোগে এরই মধ্যে বেশ কিছু আন্দোলন কারীকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে কোনাবাড়ি এলাকায় এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে এমন দাবি করেন র‌্যাব-১ এর সিইও লে.কর্ণেল মো.মোশতাক আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় এক মিলিয়নের বেশি শ্রমিক কাজ করে জীবন জীবিকা নির্বাহ করেন। ইতোমধ্যে সরকার তাদের বেতন বৃদ্ধি করেছে।এতে শ্রমিকরা সন্তুষ্ট থাকবে বলে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এক ধাপেই তাদের বেতন সাড়ে ৪ হাজার টাকা বাড়ানো হয়েছে। শান্তিপ্রিয় শ্রমিকরা এরকম ভাঙচুর করতে পারে, রাস্তাঘাট অবরোধ করে সরকারি সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে তা আমরা মনে করি না। আমরা মনে করি, একটি কুচক্রি মহল পরিস্থিতিকে অশান্ত করার জন্য, রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য এরকম করছে। ‘

গত ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় মজুরি বাড়ানোর দাবিতে পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিক্ষোভ করে আসছেন। এরপর নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণা করে সরকার। এতে সন্তুষ্ট না হয়ে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে চান্দনা চৌরাস্তায় লিবাস নিটওয়্যার, হাসান তানভীর ফ্যাশনসহ কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা আবারও বিক্ষোভ শুরু করেন।

এখন পর্যন্ত ভাঙচুর ও সহিংসতার অভিযোগে এ পর্যন্ত র্যাব ২৭ জনকে আটক করেছে। এছাড়া কালিয়াকৈর উপজেলা যুবদলের এক নেতা সহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আন্দোলন চলাকালে শ্রমিক পুলিশ সংঘর্ষে এ পর্যন্ত মারা গেছেন দুই জন শ্রমিক।