১১:৪৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলি হামলায় বিলীনের শঙ্কায় গাজার খ্রিষ্টানরা

গত ৭ নভেম্বর হামাসের রকেট হামলার পর গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হামলা করা হয় গাজা শহরের রাস্তায়। সেই হামলা থেকে রক্ষা পেতে গাজার একমাত্র রোমান ক্যাথলিক চার্চে গিয়ে আশ্রয় নেয় ডায়ানা তারাজি ও তাঁর পরিবারের অন্যরা। কিন্তু আশ্রয় নিয়ে কি আর বাঁচা যায়? ইসরায়েলি হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার গির্জাগুলোও, যা সেখানকার খ্রিষ্টানদের ফেলেছে বিলীনের শঙ্কায়।

ধর্মালয় থেকে হাসপাতাল, আবাসিক ভবন তো আছেই—কী নেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুর তালিকায়! গত ১৯ অক্টোবর গাজার সবচেয়ে পুরোনো গির্জা সেন্ট পরফাইরিয়াসে হামলা করে ইসরায়েল। সেখানে মারা যান অন্তত ১৮ জন। এভাবে একের পর এক হামলা হলে একসময় হয়তো আর বেঁচে থাকা হবে না ফিলিস্তিনের ৩৮ বছর বয়সী নারী ডায়ানা, তাঁর পরিবার ও বাকি খ্রিষ্টানদের।

গাজায় এখন খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বেশি নয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সংখ্যা ৮০০–১০০০ হতে পারে। ইসরায়েলি হামলায় এসব খ্রিষ্টানরাও মারা পড়ছেন। এভাবে হামলা হতে থাকলে এই মৃত্যু আরও বাড়বে। এমনকি যারা বেঁচে যাবেন, তাঁরাও গাজা থেকে পাড়ি জমাবেন অন্যত্র।

গত ১৯ অক্টোবর গাজার সবচেয়ে পুরোনো চার্চে হামলার ব্যাপারে ইসরায়েল দাবি করেছে, চার্চ তাদের টার্গেট ছিল না। ভুলে সেখানে হামলা হয়েছে। কিন্তু ৩৮ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নারী ডায়ানা এ দাবি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি এখানে এসে পড়েছে। চার্চকে টার্গেট করে এই হামলা করা হয়নি বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা আমরা বিশ্বাস করি না।’

তবে এমন হামলার পরও নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এক চুলও নড়বেন না বলে জানিয়েছেন ডায়ানা। কিন্তু সবাই কি আর তাঁর মতো ভাবেন? সবার তো জানের মায়া আছে। সবার তো ভবিষ্যতের নিরাপত্তার দরকার আছে।

আল–জাজিরা বলছে, গাজায় এখন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যারা বাস করছেন, তাঁদের মূল এখানে প্রোথিত আছে। প্রথম শতক থেকেই এখানে বসবাস করে আসছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বেথেলহেমের দার আল–কালিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মিত্রি রাহেব বলছেন, এবারের হামলায় সেই শিকড় আর টিকে থাকবে না, উপড়ে যাবে।

এমনটি হলে খ্রিষ্টানদের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা খ্রিষ্টান ধর্মের যাত্রা তো এখান থেকেই শুরু হয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেলের নিউ অ্যান্ড ওল্ড টেস্টামেন্টে এই এলাকার কত ইতিহাস লেখা আছে। লেখা আছে কত কাহিনি। চতুর্থ শতকে এই গাজাই ছিল খ্রিষ্টানদের যাতায়াতের প্রধান পথ।

১৯৪৮ সালে নাকবা শুরু হলে ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যান। তখন অনেক খ্রিষ্টান এখানে বসতি স্থাপন করেন। তবে ২০০৭ সালের দিকে এখানে খ্রিষ্টান কমতে থাকে বলে জানা যায়। ওই সময় ৩ হাজার খ্রিষ্টান ছিলেন। হামাস গাজার ক্ষমতায় আসার পর তারা অনেকে সরে যায়। এখন তা এক হাজারে নেমে এসেছে।

তবে পশ্চিম তীরে এখনো ৪৭ হাজারের বেশি খ্রিষ্টানদের বাস। ২০১৭ সালের আদমশুমারি সে কথাই বলছে। তবে সেখানেও বাছবিচার না রেখেই হামলা হচ্ছে।

সেখানে বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের মধ্যে সন্ত্রাসী রয়েছেন বলে দাবি করেছেন সেখানকার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, যারা ইহুদি বাদে বাকিদের নির্মূল করতে চায়। এমনকি নেতানিয়াহু সরকারও এমনটিই চাচ্ছে বলে মনে করেন পশ্চিম তীরের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ। এমনটি হলে সেখানেও আর টিকে থাকা হবে না তাদের।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

ইসরায়েলি হামলায় বিলীনের শঙ্কায় গাজার খ্রিষ্টানরা

আপডেট : ০৪:৩২:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১০ নভেম্বর ২০২৩

গত ৭ নভেম্বর হামাসের রকেট হামলার পর গাজা উপত্যকায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। হামলা করা হয় গাজা শহরের রাস্তায়। সেই হামলা থেকে রক্ষা পেতে গাজার একমাত্র রোমান ক্যাথলিক চার্চে গিয়ে আশ্রয় নেয় ডায়ানা তারাজি ও তাঁর পরিবারের অন্যরা। কিন্তু আশ্রয় নিয়ে কি আর বাঁচা যায়? ইসরায়েলি হামলা থেকে বাদ যাচ্ছে না গাজার গির্জাগুলোও, যা সেখানকার খ্রিষ্টানদের ফেলেছে বিলীনের শঙ্কায়।

ধর্মালয় থেকে হাসপাতাল, আবাসিক ভবন তো আছেই—কী নেই গাজায় ইসরায়েলি হামলার লক্ষ্যবস্তুর তালিকায়! গত ১৯ অক্টোবর গাজার সবচেয়ে পুরোনো গির্জা সেন্ট পরফাইরিয়াসে হামলা করে ইসরায়েল। সেখানে মারা যান অন্তত ১৮ জন। এভাবে একের পর এক হামলা হলে একসময় হয়তো আর বেঁচে থাকা হবে না ফিলিস্তিনের ৩৮ বছর বয়সী নারী ডায়ানা, তাঁর পরিবার ও বাকি খ্রিষ্টানদের।

গাজায় এখন খ্রিষ্টানদের সংখ্যা বেশি নয়। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের সংখ্যা ৮০০–১০০০ হতে পারে। ইসরায়েলি হামলায় এসব খ্রিষ্টানরাও মারা পড়ছেন। এভাবে হামলা হতে থাকলে এই মৃত্যু আরও বাড়বে। এমনকি যারা বেঁচে যাবেন, তাঁরাও গাজা থেকে পাড়ি জমাবেন অন্যত্র।

গত ১৯ অক্টোবর গাজার সবচেয়ে পুরোনো চার্চে হামলার ব্যাপারে ইসরায়েল দাবি করেছে, চার্চ তাদের টার্গেট ছিল না। ভুলে সেখানে হামলা হয়েছে। কিন্তু ৩৮ বছর বয়সী ফিলিস্তিনি নারী ডায়ানা এ দাবি মানতে নারাজ। তিনি বলেন, ‘ক্ষেপণাস্ত্র সরাসরি এখানে এসে পড়েছে। চার্চকে টার্গেট করে এই হামলা করা হয়নি বলে যে দাবি করা হচ্ছে, তা আমরা বিশ্বাস করি না।’

তবে এমন হামলার পরও নিজের ভিটেমাটি ছেড়ে এক চুলও নড়বেন না বলে জানিয়েছেন ডায়ানা। কিন্তু সবাই কি আর তাঁর মতো ভাবেন? সবার তো জানের মায়া আছে। সবার তো ভবিষ্যতের নিরাপত্তার দরকার আছে।

আল–জাজিরা বলছে, গাজায় এখন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের যারা বাস করছেন, তাঁদের মূল এখানে প্রোথিত আছে। প্রথম শতক থেকেই এখানে বসবাস করে আসছেন খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মানুষেরা। বেথেলহেমের দার আল–কালিমা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা মিত্রি রাহেব বলছেন, এবারের হামলায় সেই শিকড় আর টিকে থাকবে না, উপড়ে যাবে।

এমনটি হলে খ্রিষ্টানদের একটি বড় অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে বলেই মনে করা হচ্ছে। কেননা খ্রিষ্টান ধর্মের যাত্রা তো এখান থেকেই শুরু হয়। তাদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র বাইবেলের নিউ অ্যান্ড ওল্ড টেস্টামেন্টে এই এলাকার কত ইতিহাস লেখা আছে। লেখা আছে কত কাহিনি। চতুর্থ শতকে এই গাজাই ছিল খ্রিষ্টানদের যাতায়াতের প্রধান পথ।

১৯৪৮ সালে নাকবা শুরু হলে ৭ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি এই অঞ্চল ছেড়ে চলে যান। তখন অনেক খ্রিষ্টান এখানে বসতি স্থাপন করেন। তবে ২০০৭ সালের দিকে এখানে খ্রিষ্টান কমতে থাকে বলে জানা যায়। ওই সময় ৩ হাজার খ্রিষ্টান ছিলেন। হামাস গাজার ক্ষমতায় আসার পর তারা অনেকে সরে যায়। এখন তা এক হাজারে নেমে এসেছে।

তবে পশ্চিম তীরে এখনো ৪৭ হাজারের বেশি খ্রিষ্টানদের বাস। ২০১৭ সালের আদমশুমারি সে কথাই বলছে। তবে সেখানেও বাছবিচার না রেখেই হামলা হচ্ছে।

সেখানে বসতি স্থাপনকারী ইহুদিদের মধ্যে সন্ত্রাসী রয়েছেন বলে দাবি করেছেন সেখানকার খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, যারা ইহুদি বাদে বাকিদের নির্মূল করতে চায়। এমনকি নেতানিয়াহু সরকারও এমনটিই চাচ্ছে বলে মনে করেন পশ্চিম তীরের খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের বেশির ভাগ মানুষ। এমনটি হলে সেখানেও আর টিকে থাকা হবে না তাদের।