কঠোর নীতির পরও ভারতে চীনা প্রতিষ্ঠানের দাপট
- আপডেট সময় : ০১:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪২৪ বার পড়া হয়েছে
গত ১১ অক্টোবরের ঘটনা। অর্থপাচারের অভিযোগে চীনা মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভিভোর ৪ কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তার করে ভারতের সরকারি তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। ওই মামলায় বলা হয়, ভারত থেকে অবৈধভাবে অর্থ নিয়ে যাচ্ছে ভিভো। এর আগে চীনা সম্পৃক্ততার দায়ে নিউজক্লিক নামের একটি সংবাদমাধ্যমের ওপর নেমে আসে খড়্গ। আর তাতে ভিভো ছাড়াও আরেক চীনা মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান শাওমির নামও চলে আসে।
গত কয়েক বছর এভাবে একের পর এক মোদি সরকারের রোষাণলে পড়ছে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো। বিশেষ করে ২০২০ সাল থেকে। ওই সময় সীমান্তে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এর পর ভারতীয় তদন্ত সংস্থাগুলো চীনা প্রতিষ্ঠানের পেছনে লাগে। কর ফাঁকি, মুদ্রা বিনিময়ে দুর্নীতি ও অর্থপাচারকে অভিযোগের তালিকায় এনে এখনো করা হচ্ছে বিভিন্ন মামলা। এসব মামলায় প্রায়ই চালানো হয় অভিযান।
তবে ভারতীয় বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, এত মামলা–মোকদ্দমার পরও চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিন্তু ভারত থেকে তাড়ানো যাবে না। কারণ, এদের কাছেই কিন্তু মোদি সরকারের হাত বাঁধা। কেননা এসব মোবাইল নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে নিজেদের গুটিয়ে নিলে তাদের জায়গা নেওয়ার মতো ভারতীয় প্রতিষ্ঠান নেই। আর তাতে ভারতে ব্যবসায়িক কার্যক্রম অনেকটাই ধীরগতিতে চলে যাবে।
বিভিন্ন পরিসংখ্যানের বরাতে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইন বলছে, ভারতে মোবাইল বিক্রির বাজারে দাপট দেখাচ্ছে চীনা চার প্রতিষ্ঠান ভিভো, শাওমি, রিয়েলমি ও অপো। ২০২০ সালে গালওয়ান উপত্যকায় চীন–ভারত সংঘর্ষের আগেও ভারতীয় মোবাইলের বাজারের ৭৭ শতাংশ কার্যক্রম ছিল চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর দখলে, আগের বছর যা ছিল ৭২ শতাংশ।
ভারতের কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চ নামের একটি প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের গবেষণা বিভাগের পরিচালক তরুণ পাঠক বলছেন, শিগগিরই চীনের এই আধিপত্য কমছে না। গালওয়ান উপত্যকায় চীনের সঙ্গে সংঘর্ষের পরও ভারতীয় মোবাইল ব্যবহারকারীরা চীনা প্রতিষ্ঠান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। এমনকি চীনা অ্যাপ বন্ধের পরও মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
‘ভারতের প্রযুক্তি বাজার বিচিত্র’ উল্লেখ করে তরুণ পাঠক বলেন, ‘এখানে আপনি টিকটকের মতো অ্যাপকে সরিয়ে অন্য কোনো অ্যাপ আনতে পারবেন। কিন্তু স্মার্টফোনের বাজার থেকে শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরানো যাবে না। কেননা এর সঙ্গে মোবাইলের বিভিন্ন পার্টস যুক্ত। আর ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো সহজে সেমিকন্ডাক্টর পায় না। মোবাইল তৈরির মাত্র ১৫ শতাংশ উপকরণ ভারতে পাওয়া যায়।’
ক্যানালিস নামের আরেকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রযুক্তি বাজার বিশ্লেষক সান্যাম চৌরাসিয়া বলেন, ‘চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো এতদিন ধরে যে বিপুল বিনিয়োগ করেছে, ভারত সরকার নিশ্চয় তা হারাতে চাইবে না। ভারতের মোবাইলের বাজার তো এরাই দখল করে আছে। তাই সরকার এদের হটাতে চাইবে না। বিভিন্ন মামলা–মোকদ্দমার মাধ্যমে তাদের নিয়মের মধ্যে রাখতে চায় শুধু। নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায়।’
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম স্ক্রল ডট ইনের প্রতিবেদনে বিশ্লেষক অভিক দেব বলেন, এই যে দুই দেশের প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এত ব্যবধান, তা আদৌ দূর হবে না। যদিও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিশেষ সুবিধা ও বিনিয়োগের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে সরকার। এমনকি আসছে ভর্তুকিও। কিন্তু তারপরও চীনা প্রতিষ্ঠানের দাপট থাকবে আরও অনেক দিন।
যদিও ভারত সরকার দাবি করছে, ভারতীয় প্রতিষ্ঠান অনেক এগিয়েছে। এমনকি এগিয়ে যাওয়ার পরিসংখ্যানও দিচ্ছে। তাতে বলা হয়, এ বছর ভারতীয় মোবাইল রপ্তানি আগের চেয়ে বেড়েছে। ২০১৭–১৮ অর্থবছরে ৩০ কোটি ডলার আয় হয়েছিল মোবাইল রপ্তানি করে। ২০২২–২৩ অর্থবছরে তা বেড়ে হয়েছে ১১০ কোটি ডলার। এ সময় মোবাইল আমদানিও আগের চেয়ে কমেছে।
এরপরও গত মে মাসে ভারতের রিজার্ভ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর রঘুরাম রাজন ও আরও কয়েকজন অর্থনীতিবিদের লেখা এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মোবাইল ফোন আমদানি কমলেও ডিসপ্লে স্ক্রিন, ক্যামেরা, ব্যাটারি ও সার্কিট বোর্ডের মতো মোবাইলের বিভিন্ন উপাদানে ভারত এখনো পিছিয়ে। মোবাইল বানানোর জন্য এগুলো আমদানি করা লাগছেই।