বিএনপি ও সমমনাদের চতুর্থ দফার অবরোধ চলছে
- আপডেট সময় : ০৭:২২:৩৬ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
বিএনপি-জামায়াতসহ কয়েকটি সমমনা দলের ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধ শুরু হয়েছে আজ রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল ৬টা থেকে। গত শুক্রবার (১০ নভেম্বর) সকাল ৬টায় শেষ হয় তাদের তৃতীয় দফার অবরোধ। সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় সরকারে অধীনে নির্বাচনের দাবিতে তারা এই অবরোধ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী গতকাল শনিবার বিকেলে এক ভার্চ্যুয়াল বক্তব্যে চতুর্থ দফায় অবরোধের ডাক দেন।
সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মহাসমাবেশ করে। তবে, একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে সেই মহাসমাবেশ পণ্ড হয় এবং পরদিন ২৯ অক্টোবর হরতালের ডাক দেয় দলটি।
একদিন বিরতি দিয়ে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর সারা দেশে টানা তিন দিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। পৃথক ঘোষণা দিয়ে একই কর্মসূচি পালন করে জামায়াতে ইসলামী। এ ছাড়া বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা কয়েকটি দলও এ কর্মসূচিতে অংশ নেয়। সেই অবরোধ শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর থেকে ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। এরপর গতকাল শুক্রবার সকাল ৬টায় শেষ হয় তাদের তৃতীয় দফার অবরোধ।
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ৪র্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরুর আগেই শনিবার রাতে রাজধানীতে ৭টি বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে। শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত ৮টা ২০ মিনিটে মতিঝিলে নটর ডেম কলেজের সামনে, ৮টা ৩০ মিনিটে গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের সামনে, রাত ৯টার দিকে গুলিস্তানে সুন্দরবন স্কয়ারের সামনে, রাত সাড়ে ৯টায় যাত্রাবাড়ী ফল-পট্টির সামনে, রাত ১১টার দিকে আগারগাঁও তালতলা এলাকায় ও শেরেবাংলা নগর থানার পঙ্গু হাসপাতালের সামনে এবং ১১টা ৪০ মিনিটে কাফরুল থানার বিপরীতে যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের হিসাব অনুযায়ী, গত ২৮ অক্টোবর থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত সহিংসতা, পুলিশ হত্যা, বিস্ফোরক, বাসে আগুন ও নাশকতার আটটি বিভাগে ১৩১টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় গত ১৪ দিনে গ্রেফতার করা হয়েছে ১ হাজার ৮১৩ জনকে। এছাড়াও সারা দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ১৪ দিনে ৩৫০ জন আসামি গ্রেফতার করেছে। তার মধ্যে পুলিশ হত্যা মামলার আসামি ও নাশকতাসহ বিভিন্ন সময় সহিংসতার ঘটনায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারাও রয়েছেন।
৪৮ ঘণ্টার অবরোধের কর্মসূচি ঘিরে গতকাল শনিবার ঢাকার বাস টার্মিনালগুলোতে যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। এছাড়াও রাজধানীতে গণপরিবহনের ভিড়ে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে যানজট দেখা গেছে। এছাড়াও সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ঢাকা ছেড়েছেন হাজার হাজার নারী-পুরুষ। পুলিশ সদর দপ্তরের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইডি-অপারেশন) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারাদেশে পুলিশ তৎপর রয়েছে। যেকোনো নাশকতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনে অ্যাকশনে যাবে পুলিশ। দেশের সব মেট্রোপলিটন পুলিশ, রেঞ্জ ডিআইজি ও জেলা পুলিশ সুপারদের সজাগ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গণপরিবহনে নাশকতার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেয় পুলিশ সদর দপ্তর।
ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) ড. খ. মহিদ উদ্দিন বলেন, লাগাতার অবরোধের নামে গুপ্ত হামলা চালিয়ে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ করছে দুষ্কৃতকারীরা। গত ২৮ অক্টোবর থেকে তৃতীয় দফার অবরোধ পর্যন্ত নাশকতা চালিয়ে ৬৪টি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এমনকি অবরোধের ডাক দিয়ে আগের দিন গাড়ি পুড়িয়ে দিয়ে তারা নিজেদের জানান দিচ্ছে। আমরা কঠোর আছি। জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় প্রয়োজনে ডিএমপি আরও কঠোর হয়ে নাশকতা ও অগ্নিসংযোগ প্রতিহত করবে। এখন পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই নাশকতার সঙ্গে জড়িত। আগুন দেওয়ার সময় আশপাশের লোকজন ও পুলিশ হাতেনাতে ১২ জনকে গ্রেফতার করে। তাদের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদেই উঠে আসে কারা এই নাশকতার সঙ্গে জড়িত।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নাশকতা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গতকাল শনিবার ২৬ জনকে গ্রেফতার করে র্যাব। গত ১৪ দিনে পুলিশ হত্যা মামলার আসামিসহ ৩৫০ জন আসামিকে গ্রেফতার করে র্যাব। আজকের অবরোধে নাশকতা প্রতিহত করতে ৪ শতাধিক র্যাবের টহল টিম দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়াও র্যাবের পক্ষ থেকে দূরপাল্লার গণপরিবহন ও চট্টগ্রাম থেকে পণ্যপরিবহন ও আমদানি করা সরঞ্জাম স্কর্টেও মাধ্যমে যথাস্থানে পৌঁছে দেবে র্যাব।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদর দপ্তরের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. শরীফুল ইসলাম জানান, জানমালের নিরাপত্তায় ও নাশকতার বিরুদ্ধে সারাদেশে পর্যাপ্ত বিজিবি টহল টিম মাঠে কাজ করছে।
বিগত দিনগুলোর মতোই আজও সকাল থেকেই নেতাকর্মীশূন্য বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। চতুর্থ দফার অবরোধেও কার্যালয় ঘিরে নেই কোনো নেতাকর্মীর আনাগোনা। এমনকি অবরোধের সমর্থনেও কার্যালয়ের সামনে কিংবা এই এলাকা কোনো ধরনের কর্মসূচিও পালন করেননি তারা। তবে বরাবরের মতোই কার্যালয়টির সামনে অবস্থান নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এমন দৃশ্যই দেখা যায়।
২৯ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত দীর্ঘ ১৫ দিন ধরেই তালাবদ্ধ কার্যালয়টির দুইটি কলাপসিবল গেট। নেতাকর্মীরা দূরে থাক রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মচারীরাও এই কয়দিনের মধ্যে কার্যালয়ের ধারেকাছে আসেননি। কার্যালয়টির ডান পাশের পূবালী ব্যাংকের সামনে এবং বাম পাশে হোটেল ভিক্টরির সামনে অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। রাখা আছে ব্যারিকেডও। কার্যালয়টির সামনে ফুটপাতটিও বন্ধ। মানুষজন চলাচল করছেন সড়ক দিয়ে। রিকশা, সিএনজি, ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া নেই কোনো গণপরিবহন। আশপাশের অধিকাংশ দোকানই বন্ধ।
অন্যদিকে চতুর্থ দফা সর্বাত্মক অবরোধের সমর্থনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে ঝটিকা মিছিল করেছেন দলের নেতাকর্মীরা।
এসময় রুহুল কবির রিজভী বলেন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিএনপির অবরোধে সর্বস্তরের জনগণ সমর্থন জানিয়েছে। জনগণের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীকে দিয়ে শক্তি প্রয়োগ করে, গ্রেপ্তার নির্যাতন করে লাভ হবে না। দেশের ৯০ ভাগ জনগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে এ দেশে আর কোনো পাতানো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না।
জনগণের সামনে আর কোনো অপশক্তিই টিকবে না বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেই বিএনপি নেতাকর্মীরা ঘরে ফিরবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তবে সকালে অবরোধের কোন প্রভাব রাজধানীতে দেখা যায়নি। স্বাভাবিকভাবেই যান চলাচল করছে। যেকোন অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে বিভিন্নস্থানে তৎপর রয়েছে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী।
এর আগের রাতে রাজধানীতে একাধিক বাসে আগুন দিয়েছে অবরোধ সমর্থকরা। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে আরামবাগ, গাবতলী, গুলিস্তান, যাত্রাবাড়ী, আগারগাঁওসহ কয়েকটি স্থানে বাসে আগুন দিয়েছে। খবর পেয়ে এসব স্থানে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।
বাংলামোটর এলাকায় অবরোধ
দেশব্যাপী ৪র্থ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের প্রথম দিনে উদ্যোগে আজ সকাল ৭টার দিকে বাংলামোটর এলাকায় সড়ক অবরোধ, বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী।
ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলামের নেতৃত্বে এসময় উপস্থিত ছিলেন— মহানগরী মজলিশে শূরা সদস্য শাহাদাত মোহাম্মদ আলী, জাহিনুর রহমান, মাহবুব রশীদ, থানা সেক্রেটারি গোলাম ছরওয়ার, অ্যাডভোকেট জোবায়দুর রহমান বাবু, অ্যাডভোকেট আব্দুল বারী, আবু নুসাইব, ছাত্রনেতা শিশির, আনিসসহ অন্যান্য নেতারা।
রাজধানীর ডেমরায় মহাসড়ক অবরোধ
অন্যদিকে রাজধানীর ডেমরায় মহাসড়ক অবরোধ করেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মোকাররম হোসাইন খানের নেতৃত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আলী, মির্জা হেলালসহ, মাও দেলোয়ার, জসিম উদদীন ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের ডেমরা জেনের ইনচার্জ আবু সুফিয়ানসহ আরও অনেকে।
দনিয়া যাত্রাবাড়ী এলাকায় সড়ক অবরোধ
যাত্রাবাড়ী দনিয়া এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নেতাকর্মীরা। ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের কর্মপরিষদ সদস্য ড. মোবারক হোসাইনের নেতৃত্বে এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের মজলিসে শুরা সদস্য মাওলানা সাদেক বিল্লাহ, মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
মুগদা কমলাপুর বিশ্বরোড অবরোধ
৪র্থ দফা ৪৮ ঘন্টা অবরোধের ১ম দিনে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের উদ্যোগে আজ সকালে মুগদা কমলাপুর বিশ্বরোড এলাকায় অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। এতে নেতৃত্ব প্রদান করেন মহানগরী মজলিশে শূরা সদস্য মতিউর রহমান। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন মহানগরী মজলিসে শূরা সদস্য সোহেল রানা মিঠু, রওশন জামান প্রমুখ নেতারা।
অবরোধেও চট্টগ্রামে চলছে গণপরিবহন
সরকারের পদত্যাগ দাবিতে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা চতুর্থ দফার অবরোধের প্রথম দিনে চট্টগ্রামে জনজীবনে দৃশ্যমান প্রভাব পড়েনি। নগরের বিভিন্ন সড়কে গণপরিবহন চলাচল প্রায় স্বাভাবিক রয়েছে। দৈনন্দিন কাজের প্রয়োজনে যে যার যার মতো বেরিয়েছেন। দোকানপাট এবং অফিস-আদালত খুলেছে। তবে এসব কার্যালয়ে মানুষের উপস্থিতি কম রয়েছে।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, জিইসি, মুরাদপুর, ২ নম্বর গেট ও প্রবর্তকমোড়সহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জনজীবন প্রায় স্বাভাবিক দেখা গেছে। এসব এলাকার মধ্যে কোনো কোনো মোড়ে যানজট দেখা গেছে। তবে চট্টগ্রাম থেকে প্রায়ই বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন। বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের শান্তি সমাবেশ করতে দেখা গেছে।
তবে কোথাও বিএনপিসহ অবরোধ সমর্থকদের দেখা যায়নি। যদিও বিএনপির দপ্তর থেকে কোনো কোনো স্থানে ঝটিকা মিছিল করেছে বলে জানানো হয়েছে।
অবরোধের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের মিছিল
অবরোধের নামে যানবাহনে হামলা, অগ্নিসংযোগ ও নৈরাজ্যের প্রতিবাদে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাজাহান ভূইয়ার নেতৃত্বে রূপগঞ্জের কাঞ্চন সড়ক থেকে এ বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলটি এশিয়ান হাইওয়ে প্রদক্ষিণ করে পুনরায় কাঞ্চন ব্রিজে এসে শেষ হয়। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন কাঞ্চন পৌরসভার মেয়র রফিকুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ব্যারিস্টার শামীম আজিজ ও উদয়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর।
বিএনপি-জামায়াতের চতুর্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ শুরু হয়েছে রোববার সকাল ৬টায়। গত তিন দফার অবরোধের মতো আজও গাবতলী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বেশিরভাগ কাউন্টার বন্ধ রয়েছে। কিছু বাস কাউন্টার খোলা থাকলেও যাত্রীর না থাকায় তারা অলস সময় পার করছেন।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে গাবতলী ও শ্যামলী এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।
উত্তরবঙ্গগামী বিভিন্ন বাস কাউন্টারের ম্যানেজার ও স্টাফরা জানান, অবরোধ শুরু হওয়ার পর থেকে সপ্তাহে দুই দিন বাস চলছে। তারা এই দুই দিনের বেতন পাচ্ছেন। বাকি পাঁচ দিন তাদের কোনো আয় নেই। তারা বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে একদিন ইনকাম না থাকলে সংসার চালানো দায়। সেখানে প্রায় ১৫ দিন ধরে ইনকাম নেই। সঞ্চয়ও শেষ, এখন ধারদেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। আমাদের ইচ্ছা করে অবরোধের মধ্যেও বাস চালাতে। কিন্তু যাত্রী না থাকায় সেটিও পারছি না।
এদিকে মহাখালী বাস টার্মিনালে নেই যাত্রীদের সরব উপস্থিতি, প্রায় কাউন্টারগুলোই বন্ধ। সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি-জামায়াতের ৪র্থ দফার ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি শুরু হয়েছে রোববার সকাল ৬টা থেকে। সেকারণেই এমন অবস্থা বিরাজ করছে রাজধানীর ব্যস্ততম এই বাস টার্মিনালে।
তবে যখন দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ, অন্য কোনো কাউন্টারও খোলেনি তখন শুধুমাত্র নিজেদের কাউন্টার খুলে বসে আছে এনা পরিবহন। তাদের বাসগুলোও সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে আছে কাউন্টারের সামনেই। দুই চারজন যাত্রীও আসছে, বিক্রি হচ্ছে টিকিটও। এনা পরিবহন কাউন্টার থেকে জানানো হচ্ছে, যাত্রী হলেই তাদের বাসগুলো মহাখালী থেকে ছেড়ে যাবে। সব মিলিয়ে যাত্রীর অপেক্ষায় আছে এনার বাসগুলো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অবরোধ
সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবি আদায়ে চলমান চতুর্থ দফা অবরোধের সমর্থনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকালে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি মো. খোরশেদ আলম সোহেল ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে কাঁটাবন থেকে নীলক্ষেত রাস্তা কিছু সময়ের জন্য অবরোধ করেন দলটির নেতাকর্মীরা।
অবরোধ কর্মসূচিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদসহ ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিভিন্ন হল শাখার বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে ঢাবি ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল বলেন, অধিকার আদায়ের আন্দোলনে সাধারণ মানুষ এখন রাজপথে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়েই মানুষের ভোটাধিকার, গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে দেশ রক্ষার এই আন্দোলনে সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করছে। জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়েই মানুষ ঘরে ফিরব।
বরিশালে বাসে আগুন
বরিশালে দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। অগ্নিকাণ্ডের সময় বাসের হেলপার ভেতরে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকলেও তিনি টের পেয়ে লাফিয়ে বের হয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। রোববার (১২ নভেম্বর) ভোররাত ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
হেলপার রাজু জানান, নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে জায়গা না হওয়া ও ব্যাটারি চুরি হয়ে যাওয়ার ভয়ে কাশিপুর আনসার জেলা কমান্ড্যান্টের কার্যালয় ও ভুঁইয়া সড়ক সংলগ্ন খালি জায়গাতে মা এন্টারপ্রাইজের এই বাসটি রাখা হতো। ওখানেই বাসচালক অসিমের বাসা।
বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন এয়ারপোর্ট থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) লোকমান হোসেন বলেন, মা এন্টারপ্রাইজের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস ও থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যায়। আগুন নেভানোর পর বাসটিকে থানায় পুলিশের হেফাজতে নিয়ে আসা হয়েছে। অবরোধের সমর্থনকারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
ফেনীতে লাঠিচার্জ, আটক ৪
ফেনীতে অবরোধের সমর্থনে বিএনপির মিছিলে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এসময় ৪ বিএনপি নেতাকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির নেতারা।
রোববার (১২ নভেম্বর) সকাল ৭টার দিকে অবরোধের সমর্থনে শহরের দাউদপুল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীদের মিছিলে বাধা দেয় পুলিশ। এসময় নেতাকর্মীরা সড়কে বসে অবরোধ করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয় ও ৪ জনকে আটক করে।
আটককৃতরা হলেন, ফেনী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বাবুল, ধর্মপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন পাটোয়ারী, কালিদহ ইউনিয়ন বিএনপি নেতা মহিউদ্দিন, ছাত্রদল নেতা আরমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশি বাধা ও তাদের অতর্কিত হামলায় অন্তত ২০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। আমাদের মিছিলটি দাউদপুল থেকে ৫ মিনিট সামনে আসার পরেই পুলিশ ঘিরে ফেলে। মিছিল থেকে ফেনী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক জিয়া উদ্দিন পাটোয়ারী, মহিউদ্দিন, আরমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এসময় ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঁইয়া মারাত্মক আহত হয়েছেন।
ময়মনসিংহে যুবদলের মশাল মিছিল
বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর চতুর্থ দফার অবরোধের সমর্থনে ময়মনসিংহে মশাল মিছিল ও সমাবেশ করেছে যুবদলের নেতাকর্মীরা।
শনিবার (১১ নভেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর জেলা স্কুল থেকে নতুন বাজার মোড় পর্যন্ত মশাল মিছিল করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মহানগর যুবদলের সভাপতি মোজাম্মেল হক টুটু ও সাধারণ সম্পাদক জুবায়েদ হোসেন শাকিল। মিছিল শেষে নতুন বাজার মোড়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন নেতাকর্মীরা।
অবরোধে আজ রোববার সকালে দূরপাল্লার কোনো বাস চলাচল করেনি। তবে, ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শহরে ইজিবাইক ও অটোরিকশা চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। খুলেছে কাঁচাবাজার-দোকানপাট। এ ছাড়া পণ্যবাহী যানও চলাচল করতে দেখা গেছে। সড়ক-মহাসড়কে পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।