ঢাকা ০৮:০৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৩, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

অস্ট্রেলিয়া রেকর্ড গড়ে গেল ফাইনালে

স্পোর্টস ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩
  • / ৩৪৬ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডি অনলাইনের সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

২৪ বছর আগের সে সেমিফাইনালে যে অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে ২১৩ রান করেছিল! কলকাতায় আজ আগে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ২১২ রান করার পর আলোচনা আরও জোর পেয়েছে।এরপর অস্ট্রেলিয়া ঝোড়ো শুরুর পরও যখন ৫ উইকেট হারাল ১৩৭ রানে, সেই সেমিফাইনাল ফেরার সম্ভাবনা আরও জাগল। দলকে ১৭৪ রানে রেখে স্টিভ স্মিথ বিদায় নিলেন, ১৯৩ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান জশ ইংলিশও – রোমাঞ্চ বাড়ল। তবে বুঝি ২৪ বছর আগের সেমিফাইনাল ফিরছে!

কিন্তু ওই রোমাঞ্চ জাগানো পর্যন্তই সার! দক্ষিণ আফ্রিকা এরপর আর উইকেট ফেলতে পারল না। বরং ২০৪ রানে প্যাট কামিন্সের ক্যাচ ফেললেন উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক, ইনিংসে যা দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ ক্যাচ মিস!

শেষ পর্যন্ত অষ্টম উইকেটে প্যাট কামিন্স আর মিচেল স্টার্কের ২২ রানের জুটিই জিতিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়াকে। ৪৮তম ওভারে ইয়ানসেনের বলে কামিন্সের চারে নিশ্চিত হলো, ৩ উইকেট আর ১৬ বল হাতে রেখে ফাইনালের টিকিট কেটে ফেললেন কামিন্সরা।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল রেকর্ড তো আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার। আজ অষ্টমবারের মতো ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়ানরা। আগামী রোববার আহমেদাবাদে ভারত তাদের অপেক্ষায়।

হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকার ‘প্রাপ্তি’ হতে পারে এতটুকুই যে, তারা এবার আফসোস নিয়ে বিদায় নিয়েছে, ‘চোক’ করে নয়। তবে এ নিয়ে পঞ্চম সেমিফাইনালেও উঠেও ফাইনালে ওঠা হলো না আর কী!

২৪ বছর আগে ২১৩ রান লড়াই করার মতোই লক্ষ্য ছিল, কিন্তু এ যুগের ক্রিকেটে তা নয়। এই বিশ্বকাপেই তো ব্যাটিং পিচ পেলে ২০০ রান দলগুলো ২৫-৩০ ওভারেই করে ফেলেছে! কিন্তু কলকাতার পিচটা আজ ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনাররা সে সুযোগে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার ঝোড়ো শুরু এনে দিয়েছিলেন। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে অফ স্পিনার মার্করাম এসে ওয়ার্নারকে (১৮ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ২৯) বোল্ড করে জুটিটা ভাঙলেন, তার আগের ৬ ওভারেই ৬০ রান তুলে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া।

পরের ওভারে রাবাদার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মিচেল মার্শ (০), পরপর দুই ওভারে দুই উইকেটে কিছুটা আশার আলো পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

তৃতীয় উইকেটে অবশ্য স্টিভ স্মিথের সঙ্গে আবার ৪৫ রানের জুটি গড়েন হেড। ৪০ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ফিফটিতে পৌঁছে যাওয়া হেডের সৌজন্যে ১৪ ওভারের মধ্যেই ১০০ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার। এরপর আবার স্পিনের ঝলক!

কেশব মহারাজ আক্রমণে এসেই প্রথম বলে বোল্ড করে দিলেন হেডকে (৪৮ বলে ৬২)। এরপর অন্যদিক থেকে তাবরেজ শামসি পরপর দুই ওভারে ফেরান মারনাস লাবুশেন (১৮) ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (১)। দক্ষিণ আফ্রিকা জমিয়ে দিয়েছে ম্যাচ! যদিও তখন আফসোসও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, এর মধ্যেই তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে তাদের, সেগুলো ধরতে পারলে হয়তো ম্যাচটা আরও আগেই জমে যেত।

তা পাঁচ উইকেট গেলেও অস্ট্রেলিয়ার ভরসা হয়ে স্টিভ স্মিথ ছিলেন। কিছুটা দ্ব্যর্থবোধক হয়ে ওঠা পিচে, অল্প রানের লক্ষ্যে ম্যাক্সওয়েল-ইংলিশদের চেয়েও স্মিথের ব্যাকরণ মানা ব্যাটিংই দক্ষিণ আফ্রিকার বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠতে পারে বলে তখন মনে হচ্ছিল।

কিন্তু ৩৪তম ওভারে সে দুশ্চিন্তা দূর করে ম্যাচটা আরও জমিয়ে দিলেন কোয়েটজি! উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে স্মিথ (৬২ বলে ৩০) আউট! অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ১৭৪। তখনো হাতে ৯৭ বল ছিল, রান দরকার ছিল মাত্র ৩৭, কিন্তু উইকেট যে আর চারটি বাকি। জশ ইংলিশ একপ্রান্তে আছেন, এরপর কামিন্স আর স্টার্ক কিছুটা ব্যাটিং পারেন – এঁদের মধ্যে অন্তত দুজনকে দ্রুত ফেরাতে পারলেই তো ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়!

ইংলিশকে ফেরানোর কাজও করে দিলেন কোয়েটজি। ৪০তম ওভারে ইংলিশকে (৪৯ বলে ২৮) বোল্ড করে এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও বনে গেলেন। ম্যাচ তখন জমে ক্ষীর! আর এক-দুটি উইকেট দুয়েক ওভারের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ফেলতে পারা-না পারার মধ্যেই ম্যাচের জয়-হারের পার্থক্য তখন লুকিয়ে বলে মনে হচ্ছিল।

কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনাল যখন এত কাছে, অস্ট্রেলিয়ার দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের চেতনা বেরিয়ে এল। কামিন্স আর স্টার্ক কোনো বিপদই আর হতে দিলেন না। স্টার্ক শেষ পর্যন্ত ৩৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকলেন, কামিন্স ২৯ বলে করলেন ১৪ রান।

বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে শুরু করা অস্ট্রেলিয়াই আরেকবার ফাইনালে, শুরু থেকে ভারত আর নেদারল্যান্ডস বাদে সব দলকে গুঁড়িয়ে সেমিফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ফাইনাল হয়ে থাকল মরীচিকা।

নিউজটি শেয়ার করুন

আপনার মন্তব্য

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল এবং অন্যান্য তথ্য সংরক্ষন করুন

অস্ট্রেলিয়া রেকর্ড গড়ে গেল ফাইনালে

আপডেট সময় : ০৫:৩৪:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

২৪ বছর আগের সে সেমিফাইনালে যে অস্ট্রেলিয়া আগে ব্যাট করে ২১৩ রান করেছিল! কলকাতায় আজ আগে ব্যাট করে দক্ষিণ আফ্রিকা ২১২ রান করার পর আলোচনা আরও জোর পেয়েছে।এরপর অস্ট্রেলিয়া ঝোড়ো শুরুর পরও যখন ৫ উইকেট হারাল ১৩৭ রানে, সেই সেমিফাইনাল ফেরার সম্ভাবনা আরও জাগল। দলকে ১৭৪ রানে রেখে স্টিভ স্মিথ বিদায় নিলেন, ১৯৩ রানে সপ্তম ব্যাটসম্যান জশ ইংলিশও – রোমাঞ্চ বাড়ল। তবে বুঝি ২৪ বছর আগের সেমিফাইনাল ফিরছে!

কিন্তু ওই রোমাঞ্চ জাগানো পর্যন্তই সার! দক্ষিণ আফ্রিকা এরপর আর উইকেট ফেলতে পারল না। বরং ২০৪ রানে প্যাট কামিন্সের ক্যাচ ফেললেন উইকেটকিপার কুইন্টন ডি কক, ইনিংসে যা দক্ষিণ আফ্রিকার চতুর্থ ক্যাচ মিস!

শেষ পর্যন্ত অষ্টম উইকেটে প্যাট কামিন্স আর মিচেল স্টার্কের ২২ রানের জুটিই জিতিয়ে দিল অস্ট্রেলিয়াকে। ৪৮তম ওভারে ইয়ানসেনের বলে কামিন্সের চারে নিশ্চিত হলো, ৩ উইকেট আর ১৬ বল হাতে রেখে ফাইনালের টিকিট কেটে ফেললেন কামিন্সরা।

ওয়ানডে বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশিবার ফাইনাল রেকর্ড তো আগে থেকেই অস্ট্রেলিয়ার। আজ অষ্টমবারের মতো ফাইনালে উঠল অস্ট্রেলিয়ানরা। আগামী রোববার আহমেদাবাদে ভারত তাদের অপেক্ষায়।

হতাশ দক্ষিণ আফ্রিকার ‘প্রাপ্তি’ হতে পারে এতটুকুই যে, তারা এবার আফসোস নিয়ে বিদায় নিয়েছে, ‘চোক’ করে নয়। তবে এ নিয়ে পঞ্চম সেমিফাইনালেও উঠেও ফাইনালে ওঠা হলো না আর কী!

২৪ বছর আগে ২১৩ রান লড়াই করার মতোই লক্ষ্য ছিল, কিন্তু এ যুগের ক্রিকেটে তা নয়। এই বিশ্বকাপেই তো ব্যাটিং পিচ পেলে ২০০ রান দলগুলো ২৫-৩০ ওভারেই করে ফেলেছে! কিন্তু কলকাতার পিচটা আজ ব্যাটিং সহায়ক ছিল না। দক্ষিণ আফ্রিকার স্পিনাররা সে সুযোগে ম্যাচ জমিয়ে দিয়েছিলেন।

অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড ও ডেভিড ওয়ার্নার ঝোড়ো শুরু এনে দিয়েছিলেন। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে অফ স্পিনার মার্করাম এসে ওয়ার্নারকে (১৮ বলে ১ চার ও ৪ ছক্কায় ২৯) বোল্ড করে জুটিটা ভাঙলেন, তার আগের ৬ ওভারেই ৬০ রান তুলে ফেলেছে অস্ট্রেলিয়া।

পরের ওভারে রাবাদার বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মিচেল মার্শ (০), পরপর দুই ওভারে দুই উইকেটে কিছুটা আশার আলো পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।

তৃতীয় উইকেটে অবশ্য স্টিভ স্মিথের সঙ্গে আবার ৪৫ রানের জুটি গড়েন হেড। ৪০ বলে ৮ চার ও ২ ছক্কায় ফিফটিতে পৌঁছে যাওয়া হেডের সৌজন্যে ১৪ ওভারের মধ্যেই ১০০ হয়ে গেল অস্ট্রেলিয়ার। এরপর আবার স্পিনের ঝলক!

কেশব মহারাজ আক্রমণে এসেই প্রথম বলে বোল্ড করে দিলেন হেডকে (৪৮ বলে ৬২)। এরপর অন্যদিক থেকে তাবরেজ শামসি পরপর দুই ওভারে ফেরান মারনাস লাবুশেন (১৮) ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলকে (১)। দক্ষিণ আফ্রিকা জমিয়ে দিয়েছে ম্যাচ! যদিও তখন আফসোসও ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, এর মধ্যেই তিনটি ক্যাচ হাতছাড়া হয়েছে তাদের, সেগুলো ধরতে পারলে হয়তো ম্যাচটা আরও আগেই জমে যেত।

তা পাঁচ উইকেট গেলেও অস্ট্রেলিয়ার ভরসা হয়ে স্টিভ স্মিথ ছিলেন। কিছুটা দ্ব্যর্থবোধক হয়ে ওঠা পিচে, অল্প রানের লক্ষ্যে ম্যাক্সওয়েল-ইংলিশদের চেয়েও স্মিথের ব্যাকরণ মানা ব্যাটিংই দক্ষিণ আফ্রিকার বড় মাথাব্যথা হয়ে উঠতে পারে বলে তখন মনে হচ্ছিল।

কিন্তু ৩৪তম ওভারে সে দুশ্চিন্তা দূর করে ম্যাচটা আরও জমিয়ে দিলেন কোয়েটজি! উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে স্মিথ (৬২ বলে ৩০) আউট! অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ১৭৪। তখনো হাতে ৯৭ বল ছিল, রান দরকার ছিল মাত্র ৩৭, কিন্তু উইকেট যে আর চারটি বাকি। জশ ইংলিশ একপ্রান্তে আছেন, এরপর কামিন্স আর স্টার্ক কিছুটা ব্যাটিং পারেন – এঁদের মধ্যে অন্তত দুজনকে দ্রুত ফেরাতে পারলেই তো ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণে চলে যায়!

ইংলিশকে ফেরানোর কাজও করে দিলেন কোয়েটজি। ৪০তম ওভারে ইংলিশকে (৪৯ বলে ২৮) বোল্ড করে এবারের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিও বনে গেলেন। ম্যাচ তখন জমে ক্ষীর! আর এক-দুটি উইকেট দুয়েক ওভারের মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকা ফেলতে পারা-না পারার মধ্যেই ম্যাচের জয়-হারের পার্থক্য তখন লুকিয়ে বলে মনে হচ্ছিল।

কিন্তু বিশ্বকাপ ফাইনাল যখন এত কাছে, অস্ট্রেলিয়ার দাঁতে দাঁত চেপে লড়াইয়ের চেতনা বেরিয়ে এল। কামিন্স আর স্টার্ক কোনো বিপদই আর হতে দিলেন না। স্টার্ক শেষ পর্যন্ত ৩৮ বলে ১৬ রানে অপরাজিত থাকলেন, কামিন্স ২৯ বলে করলেন ১৪ রান।

বিশ্বকাপে প্রথম দুই ম্যাচেই হেরে শুরু করা অস্ট্রেলিয়াই আরেকবার ফাইনালে, শুরু থেকে ভারত আর নেদারল্যান্ডস বাদে সব দলকে গুঁড়িয়ে সেমিফাইনালে ওঠা দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য ফাইনাল হয়ে থাকল মরীচিকা।