জনপ্রিয়তার কারণেই এত দীর্ঘ সময় ধরে ইসরায়েলের সরকার প্রধান বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। তবে জিম্মিদের মুক্তির বিষয়টি আমলে না নিয়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে।
গত শনিবার হামাসের হাতে জিম্মিদের পরিবার তেল আবিব থেকে নেতানিয়াহুর বাড়ির সামনে পর্যন্ত পদযাত্রা করে। গত ১৪ নভেম্বর করা এক জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ৪ শতাংশ ইসরায়লি ইহুদি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে পছন্দ করেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে খুব ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন নেতানিয়াহু। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসির মিডল ইস্ট ইনস্টিটিউটের বিশেষজ্ঞ খালেদ এলগিন্দি বলেন, নেতানিয়াহুর আমলেই ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় গোয়েন্দা নিরাপত্তা দেখেছে। এমন পরিস্থিতিতে তিনি খুব দুর্বল অবস্থায় আছে।
গত বছরের নভেম্বরে নির্বাচনে জিতে ইসরায়েলের ইতিহাসের সবচেয়ে ডানপন্থী সরকার গঠন করে নেতানিয়াহু। এর মাধ্যমে সমালোচকদের তোপের মুখে পড়েন তিনি। ইসরায়েলে বিচার বিভাগ সংস্কার নিয়ে এমনিতেই জনপ্রিয়তা কমছিল নেতানিয়াহুর। তবে ৭ অক্টোবর গাজায় হামলা শুরুর পর তাঁর বাকি জনপ্রিয়তাটুকুও কমতে শুরু করেছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ফিলিস্তিন ও ইসরায়েল বিশেষজ্ঞ জাকারি লোকমান বলেন, 'আমি মনে করি যে, সরকার এমনকি তাঁর (নেতানিয়াহু) নিজের দলের মধ্যেও অনেক অসন্তোষ রয়েছে।'
ইসরায়েলের ৯৪ শতাংশ মানুষ মনে করে ৭ অক্টোবরের ঘটনার জন্য নেতানিয়াহুর সরকার আংশিকভাবে দায়ী। ওইদিন হামাস ইসরায়েলের ভেতর ঢুকে হামলা চালায়। এতে ১২ শ ইসরায়েলি নিহত হন।
অধিকাংশ ইসরায়েলি মনে করেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর নেতানিয়াহুর পদত্যাগ করা উচিত। যুদ্ধের প্রতি মনযোগী হলেও জিম্মিদের মুক্তির ওপর কম মনোযোগী হওয়ায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা বাড়ছে। হামাসের হাতে এখনও দু'শর বেশি ইসরায়েলি জিম্মি রয়েছে।
গত শুক্রবার ইসরায়েল দুজন জিম্মির মরদেহ উদ্ধার করে। এ পর্যন্ত হামাসের হাত থেকে মুক্তি পেয়েছেন চার জিম্মি।
জিম্মিদের মুক্তির বিনিময়ে গাজায় সাময়িক যুদ্ধবিরতির বিষয়টি প্রত্যাখান করে আসছেন নেতানিয়াহু। তবে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট গতকাল শনিবার জানিয়েছে, ৫০ বা এর বেশি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে পাঁচ দিনের যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েছে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র। এ দাবি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল উভয়ই অস্বীকার করেছে।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির বিশেষজ্ঞ লোকমান বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি সমর্থন করছে ইসরায়েলকে। তবে কিছু ক্ষেত্রে ধৈর্য হারিয়ে ফেলতে পারে বাইডেন প্রশাসন। বিশ্বব্যাপী যুদ্ধবিরতির দাবি বাড়ছে।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে তাঁর নিজ দল লিকুদ পার্টির মধ্যেও অসন্তোষ বাড়ছে। গাজা থেকে সাড়ে আট কিলোমিটার দূরের শহর নেটিভোটের মেয়র ইয়াহিয়েল জোহর। লিকুদ পার্টির সমর্থিত এ মেয়র টাইমস অব ইসরায়েল বলেন, যুদ্ধ শেষ হলে লিকুদে একটি বড় গ্রুপ থাকবে যারা বিদ্যমান পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাবে।
নেতানিয়াহুর কারণে অনেকে আবার লিকুদ পার্টিও পুরোপুরি ছেড়ে দিচ্ছে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলীয় এসডট নেগেভ আঞ্চলিক পরিষদের প্রধান তামির ইদান লাইভ টেলিভিশনে তার লিকুদ পার্টির সদস্যপদের কার্ড ছিঁড়ে ফেলেন। তিনি বলেন, নেতানিয়াহু সরকারের সমর্থন না পাওয়ায় তিনি হতাশ।
ইসরায়েলে নেতানিয়াহুর প্রতিদ্বন্দ্বীও রয়েছে। যারা তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য সুযোগের অপেক্ষায় আছেন, তবে কয়েকজন স্বেচ্ছায় তার জন্য যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভায় দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে তাঁর সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ নিজের উত্থান দেখেছেন। গ্যান্টজও নেতানিয়াহুর যুদ্ধ মন্ত্রিসভার সদস্য। তবে তিনি ৭ অক্টোবরের ঘটনায় নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন।
নেতানিয়াহুর আরেক প্রতিদ্বন্দ্বী হলেন ইয়াইর লাপিদ বুধবার বলেন, নেতানিয়াহুর জায়গায় লিকুদ পার্টির আরেক সদস্যকে উচিত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করা।