ইসরায়েলি বিমান ও স্থল বাহিনীর গত দেড় মাসের অভিযানে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় নিহতের সংখ্যা পৌঁছেছে ১৩ হাজারে। এই নিহতদের মধ্যে ৫ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি শিশু এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ৩ হাজার ৫০০ জনেরও বেশি নারী রয়েছেন। এছাড়া আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৩০ হাজার। এই আহতদের মধ্যে ৭৫ শতাংশই শিশু এবং নারী। ইসরাইল সরকার চলমান গাজা যুদ্ধেরও বহু আগে থেকে দাবি করে আসছিল, উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালের নীচে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কমান্ড সেন্টার ও টানেল রয়েছে। তবে হামাস এ দাবি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
আহত ও নিহতদের পাশাপাশি গাজায় এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিখোঁজদের বেশিরভাগই বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়া অবস্থায় আছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
পৃথক এক বিবৃতিতে গাজার প্রশাসনিক কার্যালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান ও স্থল বাহিনীর অভিযানে গাজায় এ পর্যন্ত ৮৩টি মসজিদ, ৩টি গির্জা এবং ৪৩ হাজার বাড়িঘর সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া আংশিক ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে প্রায় ২ লাখ ২০ হাজার বাড়িঘর। এর অর্থ উপত্যকার ৬০ শতাংশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযানে।
প্রশাসনিক কার্যালয়ের বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, উপত্যকার জ্বালানি, ওষুধ ও চিকিৎসা উপকরণের অভাবে উপত্যকার ২৫টি হাসপাতাল ও ৫২টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র চিকিৎসা সেবা দিতে অক্ষম হয়ে পড়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের অন্তত ৫৫টি অ্যাম্বুলেন্সে বোমা ফেলেছে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী।
এদিকে, গাজার আল শিফা হাসপাতালের নিচে ৫৫ মিটার লম্বা একটি সুড়ঙ্গের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। সুড়ঙ্গটি ১০ মিটার গভীর এবং এটিতে বিস্ফোরণরোধী দরজাও রয়েছে। খবর আল জাজিরা
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ) বলেছে, এই সুড়ঙ্গই প্রমাণ করে হাসপাতাল চত্বরের অনেক ভবনই হামাস তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আড়াল রাখার জন্য ব্যবহার করে।
সুড়ঙ্গের ভিডিও ফুটেজ প্রকাশের পর এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামাস এ ধরনের দরজা ব্যবহার করে ইসরায়েলি বাহিনীকে তাদের কমান্ড সেন্টারে ঢুকতে বাধা দেওয়ার জন্য। তবে দরজার ওপাশে কি আছে তা বিবৃতিতে বলা হয়নি।
তবে ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনারা গাজা উপত্যকার প্রধান হাসপাতাল আল-শিফা মেডিক্যাল কমপ্লেক্সের অভ্যন্তরে টানেলের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার যে দাবি করেছে তাকে ‘ডাহা মিথ্যা’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মুনির আল-বুর্শ।
তিনি আল-জাযিরাকে বলেছেন, “ইসরাইলিরা গত আট দিন ধরে হাসপাতালটিতে অবস্থান করলেও এখন পর্যন্ত কিছুই খুঁজে পায়নি।”
শিশু হত্যাকারী ইসরাইল সরকার চলমান গাজা যুদ্ধেরও বহু আগে থেকে দাবি করে আসছিল, উপত্যকার আল-শিফা হাসপাতালের নীচে ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসের কমান্ড সেন্টার ও টানেল রয়েছে। তবে হামাস এ দাবি বরাবরই প্রত্যাখ্যান করে এসেছে।
ইসরাইলি সেনারা গত ১২ নভেম্বর সমস্ত আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে শিফা হাসপাতালে আগ্রাসন চালিয়ে এটি দখল করে নেয়। ফল তাদের সামনে তাদের আগের দাবিগুলোর সত্যতা প্রমাণ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তাদের আগের দাবি প্রমাণ করার জন্য আন্তর্জাতিকভাবেও তারা প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে।
কিন্তু ইহুদিবাদীদের পক্ষে সেসব দাবি প্রমাণ করা সম্ভব হয়নি। তবে গতকাল (রোববার) ইহুদিবাদী সেনারা দু’টি আলাদা ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে দাবি করে, তারা হাসপাতালে একটি টানেল খুঁজে পেয়েছে। ফুটেজে যে টানেলটি দেখানো হয়, তার অপর মুখ বন্ধ পাওয়া যায় এবং তার ভেতরে কোনো হামাস যোদ্ধা কিংবা কোনো বন্দিকে দেখা যায় নি। সেইসঙ্গে তারা অপর ভিডিওতে দাবি করে, গত ৭ অক্টোবর হামাস তাদের হাতে আটক দু’জন বন্দিকে এই হাসপাতালে নিয়ে এসেছিল; কাজেই তাদের দাবি অনুযায়ী, এই সংগঠন যে হাসপাতালকে তাদের সামরিক কাজে ব্যবহার করে তা প্রমাণিত হয়েছে।
দখলদার সেনাদের এসব দাবির জবাব দিয়েছে হামাস। সংগঠনটি তাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলেছে, ইসরাইলি সেনারা টানেল খুঁজে পাওয়ার যে দাবি করেছে সেটি হাসপাতালের ভেতরে নয় বরং হাসপাতাল থেকে বেশ খানিকটা দূরে অবস্থিত একটি গর্ত। ভিডিওটিতে একটি পানির কূপ ও আরেকটি টানেলের ভিডিও জোড়া লাগিয়ে প্রদর্শন করা হয়েছে বলে হামাসের বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
গত ৭ অক্টোবর ভোরে ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণকারী গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। উপত্যকার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত বেড়া ভেঙে ইসরায়েলে প্রবেশ করে নির্বিচারে সামরিক-বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করে তারা। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে গাজায় ধরে নিয়ে যায় ২৪২ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে।
হামলার জবাবে ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। ১৬ অক্টোবর থেকে তাতে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও। সেই অভিযান এখনও চলছে।