জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রতিবাদে ও সরকার পতনের দাবিতে বিএনপির ডাকা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের শেষ দিন আজ। রোববার (১৯শে নভেম্বর) ভোর ৬টা থেকে শুরু হওয়া এই হরতাল শেষ হবে মঙ্গলবার (২১শে নভেম্বর) ভোর ৬টায়।
আজ সকাল থেকেই রাজধানীতে গণপরিবহন প্রায় স্বাভাবিক। ব্যক্তিগত গাড়ির পাশাপাশি সড়কে রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা। চালকেরা বলছেন, হরতালে অফিসের সময় ছাড়া যাত্রী কিছুটা কম। তবে আগের কয়েকদিনের চেয়ে সাধারণের চলাচল বেড়েছে। যাত্রী ও পথচারীরা প্রয়োজনের তাগিদে নামছেন সড়কে।
অনাকাংখিত ঘটনা এড়াতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। এদিকে, সকালে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে মিছিল করেছে বিএনপি।
সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে হরতালের সমর্থনে মিছিল করেছে ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সেচ্ছাসেবক দল। মিছিলটি ধানমন্ডি হয়ে শংকরে গিয়ে শেষ হয়।
হরতালের দ্বিতীয়দিনে সমর্থন জানিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছে জেলা মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে শহরের ল- কলেজ এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে জেলা পরিষদের সামনে গিয়ে শেষ হয়। এসময় তারা আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ঘোষিত তফসিলকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবি জানান।
জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবিহা হাবিব বলেন, 'আমরা বর্তমানে ফ্যাসিবাদী অবৈধ সরকারের পদত্যাগের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাবো। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও জেলা বিএনপি সভাপতি আফরোজা খান রিতার নেতৃত্বে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দেশনায়ক তারেক রহমানের যে কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নে জেলা মহিলা দলের প্রতিটি নেতাকর্মী প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
বিক্ষোভ মিছিলে জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবিহা হাবিব, সহ-সভাপতি সানজিদা রহমান ছন্দা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রিটা নাহার, সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুমা খানম মুক্তিসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।
চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশের একটি গ্যারেজে দাঁড়িয়ে থাকা তিনটি বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সোমবার (২০ নভেম্বর) ভোর ৪টার দিকে রাস্তার মাথা উপজেলা মডেল মসজিদের পাশে এ ঘটনা ঘটে। তবে কী কারণে আগুন লেগেছে তা নিশ্চিত করতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ।
সাতকানিয়া ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এস এম হুমায়ুন কার্ণায়েন বলেন, ভোর ৪টা ৫ মিনিটে অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় দুটি ইউনিট। তারা ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কী কারণে আগুনের সূত্রপাত, তা বলা যাচ্ছে না।
সাতকানিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আতাউর রহমান বলেন, বাসগুলো মহাসড়কের পাশে গ্যারেজে ছিল। সেখানে পাহারাদারও ছিল। তারাও কিছু বলতে পারছে না। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি।
৪৮ ঘণ্টার হরতালের সমর্থনে সিলেটে বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেছে হরতাল সমর্থনকারীরা। সোমবার (২০ নভেম্বর) সকাল থেকে হরতালের সমর্থনে নগরের বিভিন্ন জায়গায় ঝটিকা মিছিল ও বিক্ষিপ্ত পিকেটিং করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকাল নয়টায় নগরের উপশহর পয়েন্টে হরতাল সমর্থনে পিকেটিং করে যুবদলের নেতাকর্মীরা। এ সময় একটি ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সকাল নয়টায় দিকে উপশহর পয়েন্টে যুবদলের কয়েকজন নেতাকর্মীরা সড়ক অবরোধ করে মিছিল ও স্লোগান দেয়। এ সময় মেন্দিবাগ থেকে উপশহরের দিকে আসা একটি ট্রাকে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় তারা। পরে সোবাহানীঘাট এলাকা থেকে উপশহরগামী একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশা ভাঙচুর করে এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এরপর পুলিশের উপস্থিতিতে সরে পড়েন যুবদলের নেতাকর্মীরা।
সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তদন্ত সুমন কুমার চৌধুরী বলেন, উপশহর পয়েন্টে একদল দুর্বৃত্ত পিকেটিংয়ের চেষ্টা করলে পুলিশ গিয়ে ধাওয়া করে। পরে তারা পালিয়ে যায়।
এদিকে, গত রাতেও বাসে আগুন দিয়েছে বিএনপি কর্মীরা। রাজধানীর ধানমন্ডি ও যাত্রাবাড়ীতে বাসে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। রাজশাহীতেও একটি বাসে আগুন দেয় হরতাল সমর্থনকারীরা। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নেভায়। এছাড়া ফেনী ও নাটোরে গাড়ি ভাঙচুর করেছে হরতালকারীরা।
হরতালের সমর্থনে গতকাল রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সুনামগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, জামালপুর, পাবনা, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল ও সড়ক অবরোধ করেছে বিএনপি এবং এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে হরতাল বিরোধী মিছিল করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
হরতাল চলাকালে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল রাতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে ও ওয়ারী থানার মূল ফটকে ককটেল বিস্ফোরণ হয়। এ ছাড়া গতকাল সকালের দিকে পুরান ঢাকায় একটি সিএনজি চালিত অটোরিকশায় ও শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
রাজধানীর গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের পার্টি অফিসের সামনে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে একজন আহত হয়েছেন। তবে তাৎক্ষণিক তার নাম পরিচয় জানা যায়নি। রোববার (১৯ নভেম্বর) রাত ৯টা ৪০ মিনিটে এ বিস্ফোরণ ঘটে। এ ঘটনায় র্যাবের বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড টিম ঘটনাস্থলে যায়।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পল্টন মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. সালাউদ্দিন মিয়া। তিনি বলেন, রাত ৯ টা ৪০ মিনিটে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। এ ঘটনায় একজন আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। প্রাথমিকভাবে তার নাম জানা যায়নি।
আর গত শনিবার মধ্যরাত থেকে গতকাল রোববার রাত পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন স্থানে ১১টি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এসব ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ফায়ার সার্ভিস বলছে, উচ্ছৃঙ্খল জনতা এসব আগুন দিয়েছে। আর বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, হরতালের শেষ দিন সকালেও দেশের বিভিন্ন স্থানে মিছিল করেছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। সকালে মেহেরপুরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেহেরপুর প্রতিনিধি। আর রাজধানীতে স্বাভাবিক দিনের তুলনায় যানবাহন কম। রাজধানী থেকে ছেড়ে যায়নি দূরপাল্লার কোনো বাস।
সোমবার (২০ নভেম্বর) সকালে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা তালহা বিন জসিম বলেন, রোববার থেকে সোমবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ১৬টি আগুন লাগার সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ১৮টি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ঢাকা সিটিতে তিনটি, ঢাকা বিভাগ একটি, রাজশাহী বিভাগে (নাটোর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ) সাতটি, চট্টগ্রাম বিভাগে (ফেনী, মিরসরাই, সাতকানিয়া) চারটি, ময়মনসিংহ বিভাগে (জামালপুর) একটি ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় ৯টি বাস, একটি কাভার্ড ভ্যান, ৬টি ট্রাক, একটি সিএনজি, একটি ট্রেন (৩ বগি) পুড়ে যায়। এসব আগুন নির্বাপণ করতে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ২৯ ইউনিট ও ১৪৪ জন কাজ করেছে।
হরতালের সমর্থনে বিভিন্ন স্থানে মশাল মিছিল করেছেন বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।
হরতালের প্রথম দিনের গভীর রাতে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে ফের গমবাহী ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (২০ নভেম্বর) রাত পৌনে ১টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়কের কোনাবাড়ি এলাকায় এ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি সোমবার সকালে নিশ্চিত করেছেন বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কাদের জিলানী।
ওসি বলেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী একটি গমবাহী ট্রাক মহাসড়কের কোনাবাড়ি এলাকায় পৌঁছালে তাতে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে একটু দূরেই আমাদের একটি টিম থাকায় তারা গিয়ে আগুন নিভানোর চেষ্টা করে ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। পরে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন এসে আগুন নেভায়। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির পক্ষ থেকে হরতালের ডাক দেন দলটি যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বিএনপির এই কর্মসূচিকে সমর্থন জানিয়ে পৃথকভাবে হরতাল পালনের ঘোষণা দিয়েছে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, বাংলাদেশ গণঅধিকার পরিষদ, লেবার পার্টি, এলডিপি।
হরতালকে কেন্দ্র করে শনিবার (১৮ই নভেম্বর) রাতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাত্রীবাহী বাস, ট্রেন ও পিকআপ ভ্যানে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
এদিকে, সহিংসতা এড়াতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।