মানবতাকে বাঁচাতে যুদ্ধকে ‘না’ বলুন: প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৫:৩০:২২ অপরাহ্ন, বুধবার, ২২ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৪০ বার পড়া হয়েছে
বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানবজাতি ও মানবতাকে বাঁচাতে হলে বিশ্ব সম্প্রদায়কে সব ধরনের যুদ্ধ ও সংঘাতকে কঠোরভাবে ‘না’ বলতে হবে।
বুধবার (২২শে নভেম্বর) সন্ধ্যায় নয়াদিল্লিতে ‘জি-২০ লিডার্স সামিট ২০২৩’-এ বক্তৃতাকালে তিনি এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী ঢাকায় তার সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, মানুষ ও মানবতাকে রক্ষায় সব ধরনের যুদ্ধ ও সংঘাতকে কঠোরভাবে ‘না’ বলুন। এই বিশ্বায়নের বিশ্বে এটা নিশ্চিতভাবেই সহজ।
বাংলাদেশ সরকারপ্রধান বলেন, এই সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ’ আমাদের সবাইকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সুন্দর আবাস হিসেবে পৃথিবীকে গড়ে তোলার প্রেরণা যোগাবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ইউরোপে বর্তমান যুদ্ধ পরিস্থিতির সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বজুড়ে মানবিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় নামিয়েছে এবং এই দুর্দশা চলছেই।
তিনি ফিলিস্তিনে ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, দেড়মাস ধরে আমরা ফিলিস্তিনে নির্দয় গণহত্যা দেখছি, যেখানে এরই মধ্যে হাজার হাজার নারী-পুরুষ নিহত হয়েছেন এবং দুঃখজনকভাবে পাঁচ হাজারেরও নিষ্পাপ শিশু প্রাণ হারিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের ন্যক্কারজনক কর্মকাণ্ড গোটা বিশ্বকে স্তম্ভিত করে দিয়েছে, যা বিশ্বকে আরও বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এতে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আজকের সম্মেলনে উপস্থিত বিশ্বনেতাদের প্রতি আহ্বান জানাই, আপনারা এক হয়ে এই মুহূর্তে গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি তুলুন।
এ লক্ষ্যে শেখ হাসিনা বাংলাদেশ ও প্রতিবেশী ভারতের চমৎকার সম্পর্কের প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন যা ‘প্রতিবেশী কূটনীতির রোল মডেল’ হিসাবে স্বীকৃত হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘প্রতিবেশীরা অবশ্যই বন্ধুত্বপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে সকল সমস্যার সমাধান করতে পারে। আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা ও স্থল সীমানা মীমাংসার মাধ্যমে তা প্রমাণ করেছি।
বাংলাদেশ একটি শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ বিশ্বের জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে গত এক বছরের জি২০ প্ল্যাটফর্মে আমাদের আন্তরিক আলোচনা, বিশেষ করে নেতৃবৃন্দের এ শীর্ষ সম্মেলন আমাদের মধ্যে উদ্দেশ্য ও দায়িত্ববোধের সঞ্চার করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, আমাদের বিশ্ব-পরিবারের সকলের সুস্থতা নিশ্চিত করা সবার কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি বলেন, ‘সেই চেতনায় আমি বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে ১ মিলিয়নেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিককে (রোহিঙ্গা) প্রত্যাবাসনে আপনাদের আন্তরিক সমর্থন চাই।’
তিনি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি ফলপ্রসূ হবে এবং এটি বাস্তব পদক্ষেপে রূপান্তরিত হবে।
শেখ হাসিনা জি২০ প্রেসিডেন্সির সফল পরিচালনার জন্য নরেন্দ্র মোদি ও ভারতকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
গত সেপ্টেম্বরে নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ফলাফলকে এগিয়ে নিতে আজকের শীর্ষ সম্মেলন আয়োজন করা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জি২০ নয়াদিল্লি নেতাদের ঘোষণা গ্লোবাল সাউথের প্রকৃত উদ্বেগ ও সমস্যাকে প্রতিফলিত করে।
তিনি বলেন, ‘আমি আনন্দিত যে, নেতারা নয়াদিল্লিতে নি¤œ ও মধ্যম-আয়ের দেশগুলোকে বিশেষ করে, যেগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, প্রযুক্তি রূপান্তর, ডিজিটাল পাবলিক অবকাঠামো ও নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের সাথে সম্পর্কিত, উন্নয়নের বিভিন্ন চাহিদা পূরণে বহুপক্ষীয় উন্নয়ন ব্যাংকগুলোকে শক্তিশালী করতে সম্মত হয়েছেন, একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য এটি অপরিহার্য।’
শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা ও নারীর ক্ষমতায়নে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উল্লেখ করেন।
প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরিত করার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন-যা আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’-এর অনুরণন।
তিনি আরও বলেন, প্রায় ১৫ বছর বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য ২০০৬ সালে ২৫.১ শতাংশ থেকে ২০২২ সালে ৫.৬ শতাংশে এ হ্রাস পেয়েছে এবং অন্যান্য অনেক কিছুর মধ্যে মাথাপিছু আয় পাঁচগুণ বেড়েছে।’