কমেছে মাংস, সবজি-মুরগির দাম, টমেটোতে আগুন
- আপডেট সময় : ০৭:৩৬:৫৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৪ বার পড়া হয়েছে
হরতাল-অবরোধের প্রভাব নেই রাজধানীর সবজির বাজারে। তাই অনেকটা ক্রেতাদের নাগালের মধ্যেই রয়েছে সবজির দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে শীতকালীনসহ অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমেছে। তবে টমেটোর বাজারে দেখা গেছে আগুন। এদিকে চিনির দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। এছাড়া কমেছে ডিম ও মাংসের দামও। তবে আগে থেকে বেড়েছে চাল, আটা, চিনি, ডালসহ কয়েকটি নিত্যপণ্য।
বিক্রেতারা বলছেন, ১৪০ টাকা কেজি বিক্রি করেও অন্যান্য সবজির মতো লাভ পাচ্ছেন না তারা। কারণ হিসেবে বলছেন, বাজারে আমদানি করা ভারতীয় টমেটোর সংকট রয়েছে। আর দেশি টমেটো বাজারে নতুন হওয়ায় দাম এমনিতেই একটু বেশি।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা এলাকার বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজারে কেজিপ্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা কমে বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকায়, ধুন্দল ৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, লাউ প্রতিটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা, লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, ধনে পাতার কেজি ২০০ টাকা, কলার হালি ২০ টাকা, জালি কুমড়া ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলুর কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকা, নতুন আলু ১০০ টাকা, দেশি পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১১০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১০০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি মুলা ৩০ টাকা, শিম ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০ টাকা, কচুরমুখী ৭০ টাকা ও গাজর ১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০ টাকা, মুলা শাক ১০ টাকা, পালং শাক ১৫ টাকা, কলমি শাক ৮ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজার করতে আসা বেসরকারি চাকরিজীবী শামীম আহমেদ বলেন, শুক্রবার এলেই শাক সবজির দাম বেড়ে যায়। গত পরশু দেখলাম টমেটো ১০০ টাকা, আজকে দেখি ১৪০ টাকার কমে দিচ্ছেই না। এছাড়াও আলুর দাম সরকার নির্ধারণ করে দিলেও বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা করে। বাজারে না এলে বোঝাই যায় না, দেশে কী পরিমাণ অনিয়ম-স্বেচ্ছাচারিতা চলছে। ব্যবসায়ীরা চাইলেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে ফেলে।
তিনি বলেন, বাজারে প্রচুর পরিমাণ সবজি, এরপরও ৩০-৪০ টাকার মধ্যে সবজি নেই বললেই চলে। যাও অন্যান্য দিনে কিছুটা কম থাকে, কিন্তু শুক্রবার এলেই বাজারে আগুন লেগে যায়।
আর সপ্তাহ ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির কেজি ১০ টাকা কমে ১৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর তালতলা ও শেওড়াপাড়া বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বিক্রেতারা বলছেন, ব্রয়লারের দাম কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে।
তালতলা বাজারের মুরগি বিক্রেতা সুমন বলেন, গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ১৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছিলাম। গতকালও ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকায় বিক্রি করেছি। তবে শুক্রবার হওয়ায় পাইকারি বাজারে কেজিতে ৫ টাকা বেশি দিয়ে আনতে হয়েছে। তারপরও গত সপ্তাহের তুলনায় দাম কমেছে। বাজারগুলোতে লাল ডিমের ডজন ১৩৫ টাকা, হাঁসের ডিম ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দেশি মুরগির ডিমের হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়।
টমেটোর দাম প্রসঙ্গে ডিআইটি প্রজেক্ট বাজারের সবজি বিক্রেতা নাজমুল ইসলাম বলেন, কয়েকটি সবজি ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণেই আছে। তবে টমেটোর দামটা একটু বেশি। আমাদেরকেই ১৩৬ টাকা কেজি করে কিনে আনতে হয়েছে। এর সঙ্গে আবার যাতায়াত ভাড়া আছে, তারপরও সবাই মিলে ১৪০ টাকা করে বিক্রি করছি। তুলনামূলক অন্যান্য সবজিতে যেই লাভ আসে, টমেটোতে লাভ নেই বললেই চলে।
তিনি বলেন, দেখে হয়ত মনে হচ্ছে বাজারে অনেক সবজি, কিন্তু ফুলকপি আর বাঁধাকপি ছাড়া অন্যান্য সবজি কিন্তু তেমন একটা নেই। শীত শুরু হয়ে গেলেও শীতের সবজি পুরোদমে এখনো বাজারে আসেনি। আর কারণেই দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে।
সবজির দাম প্রসঙ্গে বাড্ডা পাঁচতলা বাজারের সবজি বিক্রেতা রাকিব মিয়া বলেন, শীতের সবজি বাজারে আসতে শুরু করলেও তুলনামূলক চাহিদা অনেক বেশি। দাম বেশি, তারপরও মানুষ এত পরিমাণ নিচ্ছে যা দেখে আমরাও অবাক। তার মানে চাহিদা অনুপাতে সবজির পরিমাণ কম। যে কারণে বাধ্য হয়েই একটু বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।
দাম বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো, বাজারে সার-কীটনাশকের দাম অনেক বেশি। তাছাড়া শ্রমিকদের মজুরিও বেড়েছে। সবমিলিয়ে কৃষক পর্যায়েই এখন দামটা কিছুটা বেশি। সেটা যখন বিভিন্ন হাত ঘুরে আমাদের কাছে আসে, স্বাভাবিকভাবেই দামটা বেশি হওয়ার কথা।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খোলাবাজারে খোলা সাদা চিনি বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায়। আর প্যাকেজাত সাদা চিনি ১৬৫ থেকে ১৭০ টাকায়। এসব চিনির দাম কয়েক সপ্তাহ আগে ১৪০ টাকার মধ্যে ছিল।
মুদিদোকানে চলতি মাসের শুরুতে মসুর ডালের দাম কেজিতে ৫ টাকা বেড়েছিল। মাঝে কয়েক দিন কমে আবার বেড়েছে এখন। বর্তমানে মোটা দানার ডালের কেজি ১১০ থেকে ১২০ এবং ছোট দানার ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া খোলা আটা ৪৮ থেকে ৫০ টাকা আর খোলা ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহের তুলনায় ৫ টাকা বেশি।
মাছের বাজারে ৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছের কেজি ৯০০ টাকা, শিং মাছ (আকারভেদে) ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা, রুইয়ের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা, মাগুর ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, মৃগেল ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা, পাঙাশ ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, চিংড়ি ৮০০ থেকে এক হাজার টাকা, বোয়াল ৬০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, কই ২৪০ থেকে ২৫০ টাকা, মলা ৬০০ টাকা, বাতাসি টেংরা এক হাজার ২০০ টাকা, টেংরা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, কাচকি ৬০০ টাকা, পাঁচমিশালি ২২০ টাকা, রূপচাঁদা এক হাজার ২০০ টাকা, বাইম এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকা, দেশি কই এক হাজার টাকা, মেনি মাছ ৭০০ টাকা, শোল মাছ ৬০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং আইড় মাছ ৮০০ থেকে এক হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা এবং খাসির মাংস কেজি প্রতি ১ হাজার ৫০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে গরুর মাংস আরো কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে। গরুর মাংস মাত্র ৫৯৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর তা কিনতে সকাল থেকে বাজারের ব্যাগ হাতে মানুষের দীর্ঘ লাইন। কেউ ১ কেজি, কেউ ১০ কেজি, কেউ আবার এরও বেশি পরিমাণ গরুর মাংস কিনছেন। ভেজাল বা আগের জমানো মাংস মেশানোর সুযোগ নেই। কারণ দোকানের সামনেই জবাই হচ্ছে গরু। সেখানেই যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে দোকানে তোলা হচ্ছে। আর মুহূর্তের মধ্যেই আস্ত গরুর মাংস শেষ হয়ে যাচ্ছে।
এটি রাজধানীর শাহজাহানপুর এবং মালিবাগ বাজার সংলগ্ন খলিল গোস্ত বিতানের সামনের চিত্র। স্থানীয়রা জানালেন, এমন অবস্থা প্রতিদিনের। তবে বিভিন্ন উৎসব ও ছুটির দিনগুলোতে মানুষের উপস্থিতিতে রীতিমতো বড়সড় জমায়েতে রূপ নেয়।
শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকালে সরজমিন দেখা যায়, উত্তর শাহজাহানপুরের খলিল ফার্নিচার গার্ডেনের পাশের ছোট দোকান ঘিরে মানুষের উপস্থিতি। পুরুষ-নারী পৃথক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন শতাধিক মানুষ। তার অপর পাশেই আরেকটি দোকানে বিক্রি হচ্ছে খাসির মাংস। কমলা রঙের টিশার্ট পরে কাজ করছেন দোকানের কর্মচারীরা। গরু আনা, জবাই, চামড়া ছাড়ানো, মাংস কাটা, বিক্রয়সহ প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলাদা আলাদা শ্রমিক কাজ করছেন। দোকানটির স্বত্বাধিকারী খলিল নিজে উপস্থিত থেকে যাবতীয় কর্মকাণ্ড তদারকি করছেন। ক্রেতার চাপ সামলাতে হিমশিম অবস্থা আর চরম ব্যস্ততার কারণে কথা বলার সুযোগও পাচ্ছেন না। একটি গরু জবাইয়ের পর শেষ না হতেই আবারো আনা হচ্ছে পাশেই খুঁটিতে বেঁধে রাখা গরু। পর্যায়ক্রমে প্রয়োজন অনুসারে একের পর এক গরু জবাই করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।