১০:৩৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীত দেরিতে শুরু হলেও প্রকোপ হবে কম

উত্তরের হিম বাতাসে আড়মোড়া ভাঙছে সূর্য। ভোরের শিশির ভেজা প্রকৃতি। অগ্রহায়ণের শুরুতেই কুয়াশা মোড়া চারপাশ। ঋতু চক্রে শীতের আগমন বার্তা আসে নভেম্বরেই। এরই মধ্যে তেতুলিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সিলেটে তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঋতু পরিক্রমায় পৌষ ও মাঘ মাস (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) শীতকাল হলেও সাধারণত মাস খানেক আগে থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ শুরু হয়। কিন্তু সেই হিসাবে এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না শীতের দাপট। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার শীতকাল কিছুটা দেরিতে শুরু হতে পারে এবং শীতের প্রকোপও কম হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ মৌসুমে শীত কম অনুভূত হতে পারে। সেজন্য নভেম্বর-ডিসেম্বরে যতটা ঠান্ডা পড়ার কথা, তার চেয়ে কম পড়তে পারে শীত। গত তিন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলির সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্পও রয়ে গেছে দেশজুড়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্পের কারণে হালকা শীতের এই সময়েও বাড়ছে উষ্ণতা। সেজন্য ডিসেম্বরেও শীত কম পড়তে পারে।

জ্যেষ্ঠ আবাহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাতাসে জলীয় বাষ্পের কারণে আমাদের ভূপৃষ্ঠের মাটি ভেজা ভেজা রয়েছে। সে কারণে এবার ডিসেম্বরে শীত খুব বেশি পড়বে এমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে পরিবেশ উত্তপ্ত থাকে।’

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, কিছুদিন আগেই ঘূর্ণিঝড় মিধিলি হয়ে গেল। সেটা একটা সময় দুর্বল হয়ে গেলেও এর সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্প কিন্তু রয়ে গেছে। যে কারণে এখনো শীত সেভাবে জেঁকে বসেনি।

তিনি বলেন, এ বছর ইতোমধ্যে তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। মে মাসে মোখা, অক্টোবরে হামুন এবং চলতি নভেম্বরে মিধিলি হয়ে গেল। পরপর দুই মাসে দুটি ঘূর্ণিঝড় হলো। এদিকে সাগরে তাপমাত্রা বেশি রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও তাপমাত্রার পরিমাণ বেশি। অক্টোবর মাস আন্তর্জাতিকভাবেই উষ্ণতম মাস। তখনই ঘূর্ণিঝড় হলো।

তবে আমাদের দেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে কিছু অঞ্চলে শীতের আমেজ অনুভব হয়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। নভেম্বরের এখন ২০ তারিখ হলেও এখনো সেভাবে শীত পড়া শুরু হয়নি, উষ্ণ আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেল, সম্প্রতি হয়ে গেল মিধিলি―কিন্তু এখনো বাতাসে জলীয় বাষ্প রয়ে গেছে। এই জলীয় বাষ্প কাটতে আরও সময় লাগবে। এরমধ্যে আবার সাগরে লঘুচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

মো. বজলুর রশিদ বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত পড়লেও এসব কারণে এখনো এবার শীত পড়েনি। সার্বিকভাবে এবার পুরো শীত ঋতুতেই স্বাভাবিকের থেকে শীতের প্রকোপ কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, গত বছর ডিসেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। কয়েক বছর ধরে এই সময় লা নিনার প্রভাব ও ভারত থেকে আসা বাতাসের ধুলাবলয় মিলে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। তাই শীতের তীব্রতাও কমেছে। এ বছরও ডিসেম্বরে অল্প সময়ের জন্য মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসের শেষে বঙ্গোপসাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যা নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়তে পারে বৃষ্টি।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অধ্যাদেশ অনুমোদন

শীত দেরিতে শুরু হলেও প্রকোপ হবে কম

আপডেট : ০৭:৪২:৪১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৩

উত্তরের হিম বাতাসে আড়মোড়া ভাঙছে সূর্য। ভোরের শিশির ভেজা প্রকৃতি। অগ্রহায়ণের শুরুতেই কুয়াশা মোড়া চারপাশ। ঋতু চক্রে শীতের আগমন বার্তা আসে নভেম্বরেই। এরই মধ্যে তেতুলিয়া, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও সিলেটে তাপমাত্রা নেমেছে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ঋতু পরিক্রমায় পৌষ ও মাঘ মাস (ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি) শীতকাল হলেও সাধারণত মাস খানেক আগে থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চলে শীতের প্রকোপ শুরু হয়। কিন্তু সেই হিসাবে এখনো তেমন দেখা যাচ্ছে না শীতের দাপট। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, এবার শীতকাল কিছুটা দেরিতে শুরু হতে পারে এবং শীতের প্রকোপও কম হতে পারে।

আবহাওয়া অফিস বলছে, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় এ মৌসুমে শীত কম অনুভূত হতে পারে। সেজন্য নভেম্বর-ডিসেম্বরে যতটা ঠান্ডা পড়ার কথা, তার চেয়ে কম পড়তে পারে শীত। গত তিন মাসে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে, এছাড়া ঘূর্ণিঝড় মিধিলির সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্পও রয়ে গেছে দেশজুড়ে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি ঘূর্ণিঝড়ের সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্পের কারণে হালকা শীতের এই সময়েও বাড়ছে উষ্ণতা। সেজন্য ডিসেম্বরেও শীত কম পড়তে পারে।

জ্যেষ্ঠ আবাহাওয়াবিদ ড. আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘বাতাসে জলীয় বাষ্পের কারণে আমাদের ভূপৃষ্ঠের মাটি ভেজা ভেজা রয়েছে। সে কারণে এবার ডিসেম্বরে শীত খুব বেশি পড়বে এমন পরিলক্ষিত হচ্ছে না। কারণ বাতাসে জলীয় বাষ্প বেশি থাকলে পরিবেশ উত্তপ্ত থাকে।’

আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশিদ বলেন, কিছুদিন আগেই ঘূর্ণিঝড় মিধিলি হয়ে গেল। সেটা একটা সময় দুর্বল হয়ে গেলেও এর সঙ্গে আসা জলীয় বাষ্প কিন্তু রয়ে গেছে। যে কারণে এখনো শীত সেভাবে জেঁকে বসেনি।

তিনি বলেন, এ বছর ইতোমধ্যে তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেছে। মে মাসে মোখা, অক্টোবরে হামুন এবং চলতি নভেম্বরে মিধিলি হয়ে গেল। পরপর দুই মাসে দুটি ঘূর্ণিঝড় হলো। এদিকে সাগরে তাপমাত্রা বেশি রয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবেও তাপমাত্রার পরিমাণ বেশি। অক্টোবর মাস আন্তর্জাতিকভাবেই উষ্ণতম মাস। তখনই ঘূর্ণিঝড় হলো।

তবে আমাদের দেশে সাধারণত নভেম্বর থেকে কিছু অঞ্চলে শীতের আমেজ অনুভব হয়। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। নভেম্বরের এখন ২০ তারিখ হলেও এখনো সেভাবে শীত পড়া শুরু হয়নি, উষ্ণ আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। তিনটি ঘূর্ণিঝড় হয়ে গেল, সম্প্রতি হয়ে গেল মিধিলি―কিন্তু এখনো বাতাসে জলীয় বাষ্প রয়ে গেছে। এই জলীয় বাষ্প কাটতে আরও সময় লাগবে। এরমধ্যে আবার সাগরে লঘুচাপ তৈরির সম্ভাবনা রয়েছে।

মো. বজলুর রশিদ বলেন, অন্যান্য বছর এই সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত পড়লেও এসব কারণে এখনো এবার শীত পড়েনি। সার্বিকভাবে এবার পুরো শীত ঋতুতেই স্বাভাবিকের থেকে শীতের প্রকোপ কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে, গত বছর ডিসেম্বরে স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি তাপমাত্রা ছিল। কয়েক বছর ধরে এই সময় লা নিনার প্রভাব ও ভারত থেকে আসা বাতাসের ধুলাবলয় মিলে বাংলাদেশের আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে। তাই শীতের তীব্রতাও কমেছে। এ বছরও ডিসেম্বরে অল্প সময়ের জন্য মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস বলছে, চলতি মাসের শেষে বঙ্গোপসাগরে আরেকটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। যা নিম্নচাপে রূপ নিতে পারে। এতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়তে পারে বৃষ্টি।