ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে কেনো, খুঁজে বের করতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৬:৩৬:১১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৫ বার পড়া হয়েছে
এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল অনলাইনে ঘোষণার কার্যক্রম উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আজ রোববার সকাল ১০টার কিছু সময় পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ফল হস্তান্তর করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারেরও ফলাফলে মেয়েদের পাসের হার বেশি। কেনো ছেলেরা পিছিয়ে পড়ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ২০২৩ সালের উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল হস্তান্তর করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী ও বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। রোববার (২৬ নভেম্বর) গণভবনে সকাল ১০টায় এই ফলাফলের কপি হস্তান্তর করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এইচএসসিতে এবার ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পাসের হার ৩ দশমিক ৮ শতাংশ বেশি। পাশের হার ও জিপিএ ৫ এর তুলনায় ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। নির্ধারিত সময়ে ফল ঘোষণা করায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সকলকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০২৩ সালের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩ লাখ ৭৪ হাজার ৪৮৮ জন। সেখানে আমি বলব- সংখ্যাটা বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লব উপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলতে চায় সরকার।
সরকারপ্রধান বলেন, যারা পাস করেছে তাদের অভিনন্দন। যারা হয়তো ভালো রেজাল্ট করতে পারেনি, তাদেরও হতাশ হওয়ার কিছু নেই। অভিভাবকদের বলবো, যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের সহানুভূতি দেখাতে হবে।
ধমক বা গালমন্দ থেকে অভিভাবকদের বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিনীত অনুরোধ থাকবে, কাউকে ধমক বা গালমন্দ করবেন না। এগুলো কোমলমতি এই ছেলেমেয়েগুলো নিতে পারে না। বরং সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানে সহযোগিতা করলে ভবিষ্যতে তারা ভালো করতে পারবে।
তিনি বলেন, শুধুমাত্র পড়ে পাস করলে হবে না, সেটা অর্থবহ হতে হবে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে যথেষ্ট হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, ২০২১ ও ২০২২ সালে সমস্ত বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব হয়নি, যুক্তিসঙ্গতভাবে কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সে সময় আমি দেখেছি, আমাদের এইচএসসি বা সমমনা পরীক্ষার ফলাফল ৬০ দিনে দেওয়ার যে একটা রীতি, সেটা কিন্তু আপনারা অব্যাহত রেখেছেন। সেটার জন্য আপনাদেরকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ আসার পর স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পেয়েছে, বিনামূল্যে বই দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি আমরা। যেসব এলাকায় স্কুল ছিল না সেখানে স্কুল করে দেওয়া হয়েছে। এমনকি পাহাড়ি দুর্গম অঞ্চলেও আমরা স্কুল করে দিয়েছি। করোনার ভেতর যখন কেউ ঘর থেকে বের হতে পারেনি তখন আমরা অনলাইনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি বলেন, বিজ্ঞান বিষয়ে আমাদের অগ্রাধিকার ছিল। এজন্য আমরা ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়া। এর মূল ভিত্তি হবে জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা। কারণ আমরা বাংলাদেশকে দারিদ্যমুক্ত করার যে লক্ষ্য নিয়েছি তা শিক্ষিত জাতি ছাড়া সম্ভব না।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর স্বাক্ষরতার হার কমেছে। তার পরীক্ষার সময় হরতাল-অবরোধ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করেছে। আবার তাদের সেই কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের উদ্যোগে বেড়েছে স্বাক্ষরতার হার। আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা প্রদানে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
এদিকে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করবেন শিক্ষামন্ত্রী। পরে স্ব স্ব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইটে একযোগে ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
ঘরে বসেই নির্ধারিত ওয়েবসাইট এবং এসএমএসের মাধ্যমে ফলাফল জানতে পারবেন শিক্ষার্থীরা। এসএমএসের মাধ্যমে ফল পেতে মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে ইংরেজি অক্ষরে এইচএসসি লিখতে হবে। পরে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখতে হবে। এরপর স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখতে হবে। আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখতে হবে। এরপর ১৬২২২ নম্বরে সেন্ড করতে হবে।
ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফলাফল জানতে শিক্ষার্থীকে প্রথমে www.educationboardresults.gov.bd ঠিকানায় প্রবেশ করতে হবে। সেখানে থাকা ফলাফল অপশনে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিতে হবে। পরে সেটা সাবমিট করলেই শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট শিট দেখতে পাবেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ আগস্ট দেশের আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয়। এবার দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডে একযোগে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা ছিল। মোট ১৩ লাখ ৫৯ হাজার ৩৪২ শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন।
পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি পরীক্ষার্থী। বন্যার কারণে পরীক্ষা পিছিয়ে দেয়া ৩ বোর্ডের প্রায় সাড়ে ৩ লাখ শিক্ষার্থীর ২৭ আগস্ট থেকে চট্টগ্রাম, মাদরাসা ও কারিগরি বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয়। এবার পূর্ণ নম্বরের প্রশ্নপত্র এবং পূর্ণ সময়ে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আইসিটি বিষয়ে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরে পরীক্ষা হয়েছে।
চলতি বছর ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয় ১৭ আগস্ট; আর প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে পিছিয়ে যাওয়া তিনটি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা (চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড) শুরু হয় ২৭ আগস্ট। এবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। তবে আইসিটিতে ১০০ নম্বরের পরিবর্তে ৭৫ নম্বরের পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে।