সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা সপ্তম দফার টানা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ সফলে রাজধানীতে মিছিল করেছে বিএনপি। রোববার (২৬ নভেম্বর) সকাল ৭টায় রাজধানীর বনানীতে কামাল আতাতুর্ক সড়কে এ মিছিল বের করা হয়। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মিছিলে রিজভী বলেন, সরকার দেউলিয়া হয়ে সঙ্গী খুঁজে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কোথাও সাড়া না পেয়ে গোয়েন্দাদের দিয়ে দলছুট কিছু নেতাদের বাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে। হালুয়া-রুটির ভাগ পেতে কয়েকজন গেলেও মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তা প্রত্যাখ্যান করেছেন।
ভারতের গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি প্রতিবেদনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভারত সরকার ও তাদের দেশের রাজনীতিবিদদের বোঝা উচিত বাংলাদেশের জনগণ কেন তাদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারকে এভাবে সমর্থন দিয়ে তারা বাংলাদেশের জনগণের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
মিছিলে অংশ নেন ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি খন্দকার আবু আশফাক, সহ-যুববিষয়ক সম্পাদক মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন, নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার আবুল কালাম, ধামরাই উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক প্রমুখ।
এর আগে অবরোধে নেতা-কর্মীদের ‘দুর্জয় সাহস’ নিয়ে রাস্তায় নামার আহ্বান জানিয়েছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকেলে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
রিজভী বলেন, ‘রোববার থেকে শুরু হওয়া অবরোধে বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের মাঠে নামতে হবে। এ সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে আরও বিস্তৃত, বেগবান ও তেজোদীপ্ত করতে হবে। মনে রাখবেন, দেশের গণতন্ত্রকামী মানুষ এবং বিশ্বের গণতান্ত্রিক শক্তিও আর বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদী শাসন দেখতে চায় না, এদের পতন হবেই।’
তিনি বলেন, ‘জোড়াতালি দিয়ে নির্বাচনের পথে হাঁটছে মাফিয়াচক্র। তবে তুমুল আন্দোলনে-জনজোয়ারে এই নির্বাচনী নাটক ভন্ডুল হয়ে যাবে। জনগণ আগামী ৭ জানুয়ারি দেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন দিবস উদ্যাপিত করবে।’
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনকে এখন হাসি-তামাশা, বাণিজ্য ও প্রহসনে পরিণত করা হয়েছে। জনগণের কাছ থেকে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষমতা ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। সংসদ সদস্য বানানোর প্রলোভনে কিংস পার্টি-ভুঁইফোড় পার্টিতে রাজনৈতিক নেতাদের ঢোকানো হচ্ছে। কোনো নীতিবান, আদর্শবাদী, দেশপ্রেমী রাজনীতিককে তারা নির্বাচনে নিতে পারছে না। কতিপয় ডিগবাজি মার্কা-ভ্রষ্টচারী রাজনৈতিক ব্যক্তিকে নির্বাচনী রঙ্গমঞ্চের অভিনেতা বানাতে কবজা করেছে।’
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশে হামলা, হত্যা, নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ২৯ অক্টোবর হরতাল এবং ৩১ অক্টোবর, ১ ও ২ নভেম্বর মোট তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি-জামায়াত ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকরা।
তারপর ৫ ও ৬ নভেম্বর দ্বিতীয় দফায় এবং ৮ ও ৯ নভেম্বর তৃতীয় দফায় অবরোধ কর্মসূচি পালন করে সরকারবিরোধী দলগুলো। পরে ১১ ও ১২ নভেম্বর চতুর্থ দফা এবং ১৫ ও ১৭ নভেম্বর পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ ডাকা দেয় তারা। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তা প্রত্যাখান করে ১৯ ও ২০ নভেম্বর সারাদেশে হরতাল পালন করে সরকারবিরোধী দলগুলো। এরপর ২২ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে দলটি। গত ২৪ নভেম্বর ভোর ৬টায় শেষ হয় ওই অবরোধ কর্মসূচি।