অবরোধের দ্বিতীয় দিন, যানবাহনের উপস্থিতি কম
- আপডেট সময় : ০৫:৫৪:৩৭ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৭ বার পড়া হয়েছে
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন এবং তফসিল বাতিলের দাবিতে বিএনপির ডাকা সপ্তম দফা অবরোধের দ্বিতীয় দিন আজ। বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ডাকা ৪৮ ঘণ্টার এ অবরোধ কর্মসূচি গতকাল রোববার সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়ে মঙ্গলবার সকাল ৬টা পর্যন্ত চলবে।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে ভার্চুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী এ অবরোধের ডাক দেন।
বিএনপি জানিয়েছে, সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার গাড়ি ও জরুরি ওষুধ পরিবহন অবরোধের আওতামুক্ত থাকবে।
অবরোধের সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিকের তুলনায় কিছুটা কম। অফিসের সময়ে যাত্রী চাপ কিছুটা বাড়ে বলে জানান চালকরা। তবে আগের কয়েকদিনের চেয়ে সাধারণের চলাচল বেড়েছে। যাত্রী ও পথচারীরা প্রয়োজনের তাগিদে নামছেন সড়কে।
অবরোধের সমর্থনে রাজধানীর বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল। সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকালে ধানমন্ডিতে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসানের নেতৃত্বে এ মিছিল বের করা হয়।
মিছিলে আরও উপস্থিত ছিলেন, কামরুজ্জামান বিপ্লব, আব্দুল কুদ্দুস, সরদার মো. নুরুজ্জামান, ড. মফিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক আব্দুর রহিম হাওলাদার সেতু, জসিম উদ্দিন, জেড আই কামাল, ফয়সাল আহমেদ, আলাউদ্দিন জুয়েল, আমিনুল ইসলাম মহসিন, সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মামুন, মাহবুব আলম ফরাজী, মোর্শেদ আলাম, মো. আসাদুজ্জামান আসাদ, মো. মজিবুর রহমান, মাসুম ভুঁইয়া, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম টিটু, শাহ আলম তপু, শফি মাহমুদ জুয়েল, মহিরুল ইসলাম টিপু, প্রচার সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম জাকির প্রমুখ।
এদিকে অবরোধে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে সারা দেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) ৪৩০টি টহল দল, ২৩০ প্লাটুন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি কাজ করছে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা। গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টেগুলোতে চলছে টহল ও তল্লাশি।
ঢাকার বাইরে বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধে শেষ দিনেও বগুড়ায় একাধিক স্থানে রাস্তা অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) সকাল ৮টায় বগুড়া পৌরসভার ফনিরমোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করে দলটির নেতা-কর্মীরা। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ভিপি সাইফুল ইসলাম ও জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা। এ সময় সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এছাড়া সোমবার সকাল ৯টায় দ্বিতীয় বাইপাসের বনানী সুজাবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি। এতে নেতৃত্ব দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হেলালুজ্জামান তালুকদার লালু ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আলী আজগর হেনা। রাস্তা অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ হয়েছে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মস্থান গাবতলীতেও।
দেশব্যাপী সড়ক-রেল ও নৌপথে সর্বাত্মক অবরোধ কর্মসূচি চললেও সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং জরুরি ঔষধ পরিবহনে ব্যবহৃত যানবাহন থাকবে অবরোধের আওতামুক্ত।
এদিকে, নওগাঁর মহাদেবপুরে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা। রোববার (২৬ নভেম্বর) মধ্য রাতে উপজেলা সদরে মাসুদ পেট্রোল পাম্পের বিপরীতে পাশে ওই ঘটনা ঘটে। তবে এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
মহাদেবপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ জানান, উপজেলা সদরে মাসুদ পেট্রোল পাম্পের বিপরীতে সড়কের পাশে রাহি ট্রাভেলসের একটি যাত্রীবাহী বাস দাঁড়িয়েছিল। রাত সাড়ে ১১টার পরপরই কে বা কারা বাসটিতে আগুন লাগিয়ে দেয়। টহল পুলিশের খবরে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
মহাদেবপুর ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার আশরাফুল রহমান বলেন, আগুনে বাসের প্রায় ৫০ শতাংশ পুড়ে গেছে। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
নাটোরের বড়াইগ্রামে ফিলিং স্টেশনে পার্কিং করা জি.এম ট্রাভেলসের তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সোমবার (২৭ নভেম্বর) ভোরে উপজেলার বনপাড়া এলাকার পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়ায় পাটোয়ারী ফিলিং স্টেশনে প্রতিদিনের মতো জি.এম ট্রাভেলসের বাসগুলো রাতে পার্কিং করে রাখা হয়। সোমবার ভোরে দুর্বৃত্তরা এসে তিনটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। পরে স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে এরমধ্যেই তিনটি বাস পুড়ে যায়।
অবরোধের সমর্থনে মশাল মিছিল করেছে ভোলা জেলা বিএনপি। এতে নেতৃত্ব দেন ভোলা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব রাইসুল আলম। রোববার (২৬ নভেম্বর) সন্ধ্যায় মিছিলটি ইলিশা (ভোলা টু লক্ষ্মীপুর মহাসড়ক) পরানগঞ্জ থেকে শুরু হয়ে পাইলট এলাকায় গিয়ে শেষ হয়।
মশাল মিছিলে ভোলা জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক বশির হাওলাদার, ইয়ারুল আলম লিটন, আকতার ফারুক বাচ্চু ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সহ-সভাপতি রবিন চৌধুরী, লুকু চৌধুরী, ভোলা সদর উপজেলা যুবদল নেতা বিলাল হোসেন, মো. মাসুম, মো. জহির, রিয়াদ হাওলাদার, ভোলা জেলা ছাত্রদলের নেতা নূর মোহাম্মদ রুবেল, পৌর ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ইব্রাহিমসহ অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি ও সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর ডাকা দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন চলছে আজ ২৭ নভেম্বর। গত ২৮ অক্টোবর সমাবেশ-সহিংসতার পর এটি সপ্তম দফার অবরোধ। এই অবরোধ কর্মসূচি চলবে মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত।
গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশে সহিংসতার পরদিন থেকে ধারাবাহিকভাবে হরতাল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে দলটি। সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতেই তাদের এ কর্মসূচি।
বিএনপির এই ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যেই গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। বিএনপি এরই মধ্যে এই তফসিল প্রত্যাখান করেছে। তাদের দাবি, এই সরকারের অধীনে তারা কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না।
মহাসমাবেশে বাধা ও নেতাকর্মী গ্রেপ্তারের অভিযোগে গত ২৯ অক্টোবর বিএনপি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করে। পরে ৩১ অক্টোবর ভোর ৬টা থেকে প্রথম দফায় সারা দেশে তিনদিনের সড়ক, রেল ও নৌপথ অবরোধ শুরু করে। পরে ২ নভেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী ৫ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ৪৮ ঘণ্টা অবরোধের ডাক দেয়।
পরে ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হয় বিএনপির তৃতীয় দফার অবরোধ। চলে ১০ নভেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত। চতুর্থ দফার অবরোধ শুরু হয় ১২ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে, যা শেষ হয় মঙ্গলবার (১৪ নভেম্বর) ভোর ৬টায়। পরে ১৫ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে পঞ্চম দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচি পালন করে দলটি।
এর পর নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল প্রত্যাখ্যান করে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর ডাকা টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি শেষ হয় মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) ভোর ৬টায়। পরে ২২ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ষষ্ঠ দফায় ৪৮ ঘণ্টার অবরোধ পালন করে দলটি, শেষ হয় ২৪ নভেম্বর (শুক্রবার) ভোর ৬টায়।
সপ্তম দফার অবরোধের শেষ দিনে আজ রাজধানীর পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।