স্বতন্ত্র নির্বাচনের পথে আওয়ামী লীগের অনেকে
- আপডেট সময় : ০৪:৪০:১৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৩
- / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে
বিগত সব নির্বাচনেই কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত অমান্য করে যারা ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তাদের বিদ্রোহী হিসেবে বিবেচনা করেছে আওয়ামী লীগ। কয়েকজনকে দল থেকে বহিষ্কারও করা হয়েছে। কিন্তু এবার সেই বাধা আর থাকছে না। সোমবার (২৭ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, দলীয় প্রতীক নৌকা পাওয়া প্রার্থীর পাশাপাশি দলের যে কোনো নেতা বা যে কোনো ব্যক্তিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ভোটে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দলের এমন ঘোষণার পর বিভিন্ন সংসদীয় আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ডজনখানেকের বেশি নেতা।
গত রোববার বিকেলে ২৯৮টি আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করে ক্ষমতাসীন দলটি। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী অনেক সংসদ সদস্যকেই এবারের তালিকায় রাখেনি দলটি। বাদ পড়েছেন মন্ত্রিসভায় থাকা তিনজন প্রতিমন্ত্রী। এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেবেন নব্বইজনেরও বেশি নবীন প্রার্থী।
প্রার্থী চূড়ান্ত করার আগে গণভবনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এ সময় ২০১৪ সালের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার নির্বাচন ঠেকাতে সব আসনেই বিকল্প প্রার্থী বা ‘ডামি প্রার্থী’ রাখার নির্দেশ দেন তিনি। এতেই নড়েচড়ে বসেছেন দলটির মনোনয়নবঞ্চিতরা। দল মনোনয়ন দেয়নি, আওয়ামী লীগের এমন অনেকেই প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কেউ কেউ পরিস্থিতি বুঝে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানিয়েছেন।
আসন্ন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন জমার শেষ দিন ৩০ অক্টোবর। এখনো বিএনপির নির্বাচনে আসার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বিএনপি যদি শেষ পর্যন্ত ভোটে না আসে, তাহলে ভোট যে একতরফা হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে এবার যেন আগের মতো বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ার মতো নজির তৈরি না হয়, সে জন্য নতুন এ কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করেছিল। সেবার দেড় শরও বেশি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। এবার যাতে সেই পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তার জন্য এবার ‘ডামি প্রার্থীর’ কৌশল।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সোমবার বলেছেন, এবার কাউকেই ঠেকানো হবে না। এটাই ভোটের কৌশল।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘এখানে ডামি প্রার্থীর কথা বলেছেন। এটা তার (শেখ হাসিনা) মুখ দিয়েই আসা। নতুন নতুন সময়ে, নতুন নতুন কৌশলও দলকে গ্রহণ করতে হয়। এ সময়ে যে কৌশল দরকার আমাদের নেত্রী সেই কৌশলই ঠিক করেছেন।’
মনোনয়ন বঞ্চিত অনেকে বলছেন, দলের অবস্থান ও শীর্ষ নেতার সাথে আলোচনা করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ঢাকা-৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ছেলে আওয়ামী লীগ নেতা মশিউর রহমান মোল্লা। তার পক্ষ হয়ে ফেসবুকে এ ঘোষণা দিয়েছেন তার ভাই ও ডেমরা থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহুফুজুর রহমান মোল্লা।
যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে এবার প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পেয়েছেন চিকিৎসক তৌহিদুজ্জামান তুহিন। তিনি আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদের জামাতা। এ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম মনির। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে এ বিষয়ে স্থানীয় সবার মতামত জানতে চেয়েছেন।
বরিশাল সদর-৫ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কর্নেল (অবসরপ্রাপ্ত) জাহিদ ফারুক শামীম। ওই আসনে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সাদিক আব্দুল্লাহর ঘনিষ্ঠ রইস আহমেদ মান্না তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘দেখা হবে, সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। ইনশাআল্লাহ্।’
জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ি) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. মুরাদ হাসান আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। রবিবার (২৬ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ডা. মুরাদ হাসান এমপির নামে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে। এবার এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান হেলালকে।
চট্টগ্রাম-১২ আসনের নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী। তবে সংসদ সদস্য ও বর্তমান সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী মাঠ ছাড়ছেন না। দলীয় মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে লড়ার কথা ভাবছেন তিনি।
টানা ষষ্ঠবারের মতো রাজবাড়ী-১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন সংসদ সদস্য কাজী কেরামত আলী। সেখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে লড়তে চান রাজবাড়ী সদর উপজেলায় টানা চারবারের চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস। এজন্য সম্প্রতি তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন।
সিলেট-৬ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সারোয়ার হোসেন। তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘নেত্রীর নির্দেশনায় আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী হবো ইনশাআল্লাহ।’
মানিকগঞ্জ-২ আসনে নৌকার মনোনয়ন চেয়ে পাননি স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা সাহাবুদ্দিন আহমেদ চঞ্চল। ওই আসনে নিয়মিত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মসূচি পালন করছেন তিনি। তার বাবা সামসুদ্দিন আহমেদ এখানকার সাবেক সংসদ সদস্য। সাহাবুদ্দিন আহমেদ এবার তাই স্বতন্ত্র হয়ে লড়বেন এখানে। তাঁর বিপক্ষে নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম।
ফরিদপুর-৪ আসনে আবারও নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফর উল্যাহ।
এর আগে তিনি পরপর দুবার নৌকা নিয়ে হেরেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মজিবুর রহমান চৌধুরীর (নিক্সন) কাছে। বর্তমান সংসদ সদস্য ও যুবলীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নিক্সন এবারও নৌকা চেয়ে পাননি। তবে আগের মতোই থাকছেন ভোটের লড়াইয়ে।
রংপুর-৬ আসনে আবারও নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। নৌকা না পেয়ে এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম। তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ইতিমধ্যেই।
হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট-মাধবপুর) আসনে নৌকা চেয়ে পাননি আইনজীবী সায়েদুল হক সুমন। ইতিমধ্যেই ফেসবুকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। সায়েদুল হক সুমন নির্বাচনের কাজ শুরু করে দিয়েছেন বলেও জানানো হয়েছে ফেসবুকের একাধিক পোস্টে।
চাঁদপুর-৪ আসনে আবারও মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য শামসুল হক ভূঁইয়া। তিনি চাঁদুপর-৩ আসন থেকেও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চাঁদপুর-১ আসনে এবার নৌকা পেয়েছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা সেলিম মাহমুদ। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সাবেক বাণিজ্যসচিব গোলাম হোসেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে নৌকা পেয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মো. শাহজাহান আলম। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়বেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতা মঈনউদ্দিন মঈন।
নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনে এবার নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন মোশতাক আহমেদ রুহী। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত জালাল উদ্দিন তালুকদারের মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার।
সুনামগঞ্জ-৪ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন পিএসসি সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সাদিক। তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হচ্ছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন।