![](https://71newsbd.com/wp-content/plugins/print-bangla-news/assest/img/print-news.png)
নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক না হলে গণতন্ত্র, অর্থনীতি ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও অবনতি হবে। তাই বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে এবং বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের মুক্তি দিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের নতুন তফসিল ঘোষণা করা উচিত।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) পান্থপথের দৃকপাঠ ভবনে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘আবারও সাজানো নির্বাচন: নাগরিক উৎকণ্ঠা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।
তারা বলেন, নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কিন্তু সরকার নির্বিচারে মামলা, গ্রেপ্তার ও সাজা দিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ রুদ্ধ করছে।
ইসির উদ্দেশে বক্তারা বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে শক্তিশালী। কমিশন চাইলে রাজনৈতিক নেতাদের মুক্তির বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে পারে। সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে নির্বাচনী তফশিলও পুনঃনির্ধারণ করা প্রয়োজন।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদারের সভাপতিত্বে সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। আলোচনায় বক্তব্য রাখেন নারীপক্ষের প্রতিষ্ঠাতা শিরিন হক, আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক ফারুখ ফয়সাল, নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী ও ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক, তেল গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ। সভায় আইনজীবি, মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক আন্দোলনেরকর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলোকচিত্রী শহিদুল আলম।
আসিফ নজরুল বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে নির্বিচারে মামলা দায়ের, বিচারিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে সাজাপ্রদান ও নির্যাতনের মাধ্যমে সরকার দুটো লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে। এক : নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বিএনপির অংশগ্রহনের সুযোগ রুদ্ধ করা। দুই: সাজানো নির্বাচনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও আন্দোলনের শক্তিকে ধুলিসাৎ করা। একাজে পুলিশ, জনপ্রশাসন, ফৌজদারী বিচার ব্যবস্থাসহ রাষ্ট্রর প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করছে সরকার।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনের এই আয়োজন এমনকি ২০১৮ ও ২০১৮ সালের চেয়েও নগ্ন, বেপরোয়া ও উদ্ধত। এই নির্বাচনের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অথনৈতিক ও সামাজিক সংকট ঘনীভূত হবে, এর সমর্থনকারী দেশগুলো বাংলাদেশ থেকে নানাভাবে আরো বেশী অন্যায্য সুবিধা নেয়ার সুযোগ পাবে।
অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন, বাংলাদেশের সব মানুষই উদ্বিগ্ন। বর্তমানে ভয়াবহ একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যেখানে মুখোশ পড়ে বাড়ি বাড়ি হামলা করা হচ্ছে, পুলিশ কিছু করছে না, কোনো মামলা হচ্ছে না। ২৮ অক্টোবর-এর পর সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এগুলো দেখে মনে হচ্ছে আগের থেকেই ধাপে ধাপে পরিকল্পিত ছিল যাতে কেউ কোনো কথা না বলতে পারে।
তিনি আরও বলেন, সরকার সবসময় বলছে তারা খুবই জনপ্রিয় এবং জনগণ তাদের সঙ্গে আছে। তাহলে তাদের এমন একটি অবস্থা তৈরি করা উচিৎ যাতে জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে আনন্দের সঙ্গে ভোট দিতে পারে, নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয়, আদালত-বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান তাদের ভূমিকা রাখতে পারে। মিথ্যাচার ও প্রতারণা না করে সরকার যদি নির্বাচিত হয়ে আসে তাহলে কারও কোনো অসুবিধা থাকবে না।
বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, বর্তমান সংবিধান অনুসারে ডিসেম্বরের শেষ দিকে সংসদ ভেঙে দিলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সুযোগ রয়েছে। তার মতে, ‘সিরিয়ার আসাদ মডেলে’ এ দেশে বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করা হচ্ছে। এ অবস্থা কোনোভাবে সমর্থন করার মতো নয়। তিনি বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মুক্তি দিয়ে আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টির আহ্বান জানান।
বিদ্যমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে শাহদীন মালিক বলেন, সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে প্রবেশের সময়ে গেটে আমার গাড়ি থামানো হয়েছে। গাড়িতে সুপ্রিম কোর্টের পরিচয় সংবলিত স্টিকার এবং আইনজীবীর কালো গাউন থাকার পরেও আমাকে চেক করে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়া হয়েছে।
জুনিয়র আইনজীবীরা বলেন, নিরাপত্তার নামে তাদের কাগজপত্র পোশাক সব পরীক্ষা করা হয়। এটা শুধু সুপ্রিম কোর্টের অবস্থা নয়। সারাদেশেই হয়তো একই অবস্থা। বিজিবি, আনসার, পুলিশ, র্যাব সকল আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মিলিয়ে ১০-১২ লাখের মতো প্রায়। এরশাদের আমলেও এতো সংখ্যক ছিল না। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়নি।
আলোচনার সভাপতিত্ব করেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, এখন যে নির্বাচনের পরিকল্পনা হচ্ছে, তা শুধু নিয়ন্ত্রিত বা সাজানো নয়, তা একতরফা নির্বাচন। সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ভোটারদের যথার্থ বিকল্প ও বেছে নেওয়ার স্বাধীনতা দরকার।
ব্রতীর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শারমিন মুরশিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন সবচেয়ে শক্তিশালী। তাঁদের উচিত হবে অনৈতিক ও অযৌক্তিকভাবে যাঁদের রাজবন্দী হিসেবে আটকে রাখা হয়েছে, তাঁদের মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
আলোচনা সভা পরিচালনা করেন আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম। এতে আইনজীবী, মানবাধিকারকর্মী, সামাজিক আন্দোলনের কর্মী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।