০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মারা গেছেন হেনরি কিসিঞ্জার

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বিতর্কিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার ১০০ বছর বয়সে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

কিসিঞ্জারের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি জানায়, জার্মান বংশোদ্ভূত নোবেল বিজয়ী কিসিঞ্জার তাঁর নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করেনি সংস্থাটি। নিক্সন এবং ফোর্ড প্রশাসনের সময় আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হেনরি কিসিঞ্জার।

কিসিঞ্জার ১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার নাৎসি শাসন আমলে জার্মানি থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যায়। সেখানেই বেড়ে ওঠেন নিক্সন। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিক হন। পরে মার্কিন সেনাবাহিনীতে এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্পসে চাকরি করেন।

স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কিসিঞ্জার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করেছিলেন।

১৯৭৪ সালে নিক্সনের পদত্যাগের পর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান স্থপতি হিসেবে কিসিঞ্জারের রাজত্ব অনেকটা ক্ষয় হয়ে যায়। তারপরও প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনে তিনি কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার বাকি জীবনজুড়ে কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তিনি দৃঢ় মতামত প্রদান অব্যাহত রেখেছিলেন।

চলতি বছরের ২৭ মে ১০০ বছর পূর্ণ করেন হেনরি কিসিঞ্জার। চলতি বছরের জুলাইতে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে বেইজিংয়ে একটি আকস্মিক সফর করেন।

দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আবার কখনো কখনো বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশ কয়েকটি রক্তাক্ত সংঘর্ষের পেছনে তার হাত রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বিতর্কিত অবস্থান নেয়াসহ বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের তাঁর হাত ছিল।

চূড়ান্ত স্বাধীনতার ঠিক ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে দক্ষিণ এশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা। সভায় আলোচনা হয় পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে। বিশেষ করে মার্চে যে বাংলাদেশে বড় ধরনের খাদ্যসংকট হবে, দুর্ভিক্ষও হবে—এ বিষয়গুলো নিয়ে। এই বৈঠকে বাংলাদেশকে (পূর্ব পাকিস্তান) তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়।

১৯৭১ সালের সেই বৈঠকের পর প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এলেই ‘বাস্কেট কেস’ বলা শুরু করে। যেমন, বাংলাদেশের খাদ্যসংকট ও খাদ্য–সাহায্য নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর যে সম্পাদকীয় লিখেছিল, তার শিরোনাম ছিল ‘বাস্কেট’। আবার বাকশাল কায়েমের পর ১৯৭৫ সালের ৩০ জুন প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল, ‘ওয়ান ম্যান’স বাস্কেট কেস’।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

মারা গেছেন হেনরি কিসিঞ্জার

আপডেট : ০৪:০০:২০ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৩

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক বিতর্কিত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার মারা গেছেন। স্থানীয় সময় বুধবার ১০০ বছর বয়সে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে নিজ বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

কিসিঞ্জারের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক পরামর্শদাতা সংস্থা কিসিঞ্জার অ্যাসোসিয়েটস তাঁর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি জানায়, জার্মান বংশোদ্ভূত নোবেল বিজয়ী কিসিঞ্জার তাঁর নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। তবে তার মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত করেনি সংস্থাটি। নিক্সন এবং ফোর্ড প্রশাসনের সময় আমেরিকার শীর্ষ কূটনীতিক এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হেনরি কিসিঞ্জার।

কিসিঞ্জার ১৯২৩ সালের ২৭ মে জার্মানির একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবার নাৎসি শাসন আমলে জার্মানি থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে যায়। সেখানেই বেড়ে ওঠেন নিক্সন। এরপর ১৯৪৩ সালে তিনি মার্কিন নাগরিক হন। পরে মার্কিন সেনাবাহিনীতে এবং কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স কর্পসে চাকরি করেন।

স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জনের পর, তিনি হার্ভার্ডে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৯৬৯ সালে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন কিসিঞ্জার জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নিযুক্ত করেছিলেন।

১৯৭৪ সালে নিক্সনের পদত্যাগের পর মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির প্রধান স্থপতি হিসেবে কিসিঞ্জারের রাজত্ব অনেকটা ক্ষয় হয়ে যায়। তারপরও প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডের অধীনে তিনি কূটনৈতিক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন এবং তার বাকি জীবনজুড়ে কূটনীতি-সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে তিনি দৃঢ় মতামত প্রদান অব্যাহত রেখেছিলেন।

চলতি বছরের ২৭ মে ১০০ বছর পূর্ণ করেন হেনরি কিসিঞ্জার। চলতি বছরের জুলাইতে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দেখা করতে বেইজিংয়ে একটি আকস্মিক সফর করেন।

দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি মার্কিন পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ আবার কখনো কখনো বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছেন। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বেশ কয়েকটি রক্তাক্ত সংঘর্ষের পেছনে তার হাত রয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধে বিতর্কিত অবস্থান নেয়াসহ বিভিন্ন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের তাঁর হাত ছিল।

চূড়ান্ত স্বাধীনতার ঠিক ১০ দিন আগে ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে দক্ষিণ এশিয়া পরিস্থিতি নিয়ে নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জারের সভাপতিত্বে ওয়াশিংটন স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সভা। সভায় আলোচনা হয় পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান নিয়ে। বিশেষ করে মার্চে যে বাংলাদেশে বড় ধরনের খাদ্যসংকট হবে, দুর্ভিক্ষও হবে—এ বিষয়গুলো নিয়ে। এই বৈঠকে বাংলাদেশকে (পূর্ব পাকিস্তান) তলাবিহীন ঝুড়ি বলা হয়।

১৯৭১ সালের সেই বৈঠকের পর প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে এলেই ‘বাস্কেট কেস’ বলা শুরু করে। যেমন, বাংলাদেশের খাদ্যসংকট ও খাদ্য–সাহায্য নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমস ১৯৭২ সালের ৮ অক্টোবর যে সম্পাদকীয় লিখেছিল, তার শিরোনাম ছিল ‘বাস্কেট’। আবার বাকশাল কায়েমের পর ১৯৭৫ সালের ৩০ জুন প্রকাশিত নিউইয়র্ক টাইমসের সম্পাদকীয় শিরোনাম ছিল, ‘ওয়ান ম্যান’স বাস্কেট কেস’।