গত কয়েক দিনের ব্যবধানে শীতকালীন সবজি ও চাষের মাছের দামে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে। আগের সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের মাছ কেজি প্রতি ২০ থেকে ১০০ টাকা কমেছে। গরুর মাংসের দাম কমে যাওয়ায় এর প্রভাব মাছের বাজারে পড়েছে বলে মনে করছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ শীতকালীন সবজির দাম কিছুটা কমে এসেছে। এছাড়া কিছু চাষের মাছের দাম কমেছে। তবে আগের মতোই উচ্চমূল্যে বিক্রি হচ্ছে চিনি, চাল, আটা ও ডাল।
শুক্রবার এসব বাজারে বেগুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৬০, ঢেঁড়স ৬০, পটল ৫০, বরবটি ৮০, ধুন্দুল ৪০, চিচিঙ্গা ৫০, শসা ৬০ থেকে ৭০, পেঁপে ৩০, মিষ্টি কুমড়া ৪০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে এবং ধনে পাতা বিক্রি হয়েছে ২০০ টাকা কেজি। এছাড়া লেবুর হালি ২০ থেকে ৪০ টাকা, কলার হালি বিক্রি হচ্ছে ২০ টাকা এবং জালি কুমড়া ৪০ টাকা। এদিকে আলু বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৫০ টাকা, নতুন আলু ৭০, দেশি পেঁয়াজ ১৩০, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ এবং কাঁচা মরিচ ৮০ থেকে ১২০ টাকায়।
বাজারগুলোতে প্রতি কেজি মুলা বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা, শিম ৫০ থেকে ৭০, পাকা টমেটো প্রকারভেদে ১০০ থেকে ১২০, কচুরমুখী ৭০ এবং গাজর ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া লাল শাক ১০ টাকা আঁটি, লাউ শাক ৩০, মূলা শাক ১০, পালং শাক ১৫, কলমি শাক ৮ টাকা আঁটি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাজারে ২৮ চালের কেজি ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, মিনিকেট চালের দাম কিছুদিন আগে কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকায়। পাইজাম চালের কেজি ৫৫ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০-৫২ টাকা। নাজিরশালের কেজি ৬৮ টাকা, যা আগে বিক্রি হত ৬৫ টাকায়। তবে ভালো মানের নাজিরশাল চালের কেজি এখন বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকায়, যা আগে কেজি ছিল ৭০ টাকা।
দীর্ঘ সময় ধরে চিনির বাজার অস্থিতিশীল। বাজারে চিনির দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকা কেজি। কিন্তু অনেক স্থানীয় দোকানে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা।
মাংসের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগির দাম প্রতি কেজি গত সপ্তাহের মতোই ১৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা সম্প্রতি ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা ছাড়িয়েছিল। স্থানভেদে ফার্মের মুরগী কিছু কম-বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোনালি জাতের মুরগির কেজি ২৭০ থেকে ২৮০ টাকা। দেশি মুরগি কিনতে কেজিতে খরচ হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায়। এছাড়া খাসির মাংস ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
শুক্রবার (১ ডিসেম্বর) রাজধানীর মধ্য বাড্ডা, মেরুল বাড্ডা ও রামপুরা এলাকা ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে। তবে যেসব এলাকায় গরুর মাংসের দাম কম, সেসব এলাকার দোকানে ক্রেতাদের ভিড় বেশি।
গত এক মাসের ব্যবধানে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে অনেকটাই কম দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। কোথাও কোথাও হাঁক-ডাক করে বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজিতে। আবার কোথাও দাম রাখা হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকা। একেক বাজারে গরুর মাংসের একেক রকম দাম নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের ধোঁয়াশা। একইসঙ্গে অন্যান্য বাজারে মাংসের দাম কম— এমনটি শুনে স্থানীয় বাজার নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন ক্রেতারা।
জনসাধারণের প্রশ্ন, কোথাও যদি একই মাংস ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি করে ব্যবসায়ীরা লাভবান হন, তাহলে অন্যান্য স্থানে কেন ৭০০ টাকার বেশি হবে?
গত পাঁচদিন ধরে রামপুরা বাজারের বেশিরভাগ দোকানে গরুর মাংস ৬০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে মধ্যবাড্ডা ও মেরুল বাড্ডার ডিআইটি প্রজেক্ট এলাকায় গরুর মাংস প্রতি কেজি ৭০০ থেকে ৭২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে দেশে মাংসের উৎপাদন ছিল ৮৭ লাখ টন। ওই বছর দেশের বাজারে মাংসের চাহিদা ছিল ৭৬ লাখ টন। ফলে চাহিদার তুলনায় ১১ লাখ টন বেশি মাংস উৎপন্ন হয়। উৎপাদন বেশি হওয়া সত্ত্বেও বাজারে দাম বেশি ছিল। কিন্তু মানুষ গরুর মাংস কেনা কমিয়ে দেওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।
মাছের বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বাজারে চাষের মাছের দাম কিছুটা কমেছে। স্থানভেদে পাঙ্গাস বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে। অনেকটা একই দামে বিক্রি হচ্ছে চাষের কই ও তেলাপিয়া। আকারভেদে রুই-কাতলার দাম হাঁকানো হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫৫০ টাকা কেজি। এছাড়া স্থানভেদে শোল মাছ প্রতি কেজি ৫০০-৬৫০ টাকা এবং শিং মাছ ও বাইলা মাছ প্রতি কেজি প্রকারভেদে ৫০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া পোয়া মাছ ৩৫০ থেকে ৪০০, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০, মলা ৫০০, বাতাসি টেংরা ৯০০, টেংরা মাছ ৬০০ থেকে ৭০০, কাচকি মাছ ৬০০, পাঁচ মিশালি মাছ ২২০, রুপচাঁদা ১ হাজার ও বাইম মাছ ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হতে দেখা গেছে।