সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ১ দফা দাবিতে পুনরায় দেশব্যাপী সর্বাত্মক অবরোধ ডেকেছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আজ বুধবার অবরোধ চলাকালে রাজধানীর মহাখালীতে একটি পেট্রোল পাম্পে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এই ঘটনায় ৮ জন দগ্ধ হয়েছে। এদিকে রাজধানীর কয়েকটি স্থানে বেশ কয়েকটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
রাজধানীর মহাখালীতে রয়েল পেট্রোল পাম্পের সিলিন্ডারে আগুনের ঘটনায় ৮ জন দগ্ধ হয়েছেন। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। দগ্ধ ৮ জনকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নেওয়া হয়েছে। ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এ ঘটনায় দগ্ধরা হলেন- মাসুম (২৫), রানা (৩০), হোসাইন (৩২), সালাউদ্দিন (৩৮), কামাল হোসাইন (৫০), মো. মামুন (৩০), খায়ের (৪৫) এবং জীবন (২১)।
হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক তারিকুল ইসলাম বলেন, 'মহাখালীতে আগুনের ঘটনায় ৮ জনকে দগ্ধ অবস্থায় আমাদের এখানে আনা হয়েছে। তাঁদের দগ্ধের পরিমাণ জানতে আরও কিছু সময় লাগবে। তবে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আমরা তাদের ড্রেসিং শেষ করে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করব। বাকিদের জরুরি বিভাগে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে।'
ফায়ার সার্ভিস জানায়, সন্ধ্যা ৭টা ৪৮ মিনিটে আগুন লাগার খবর পায় তারা। এরপর ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট রওনা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, দুটি ইউনিটের চেষ্টায় রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
রাজধানীতে এবার বৈশাখী পরিবহনের একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাত ৭টা ৫৪ মিনিটে রাজধানীর বাড্ডায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার জানান, আগুন লাগার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তাৎক্ষণিক হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
অন্যদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর মাতুয়াইলে পেট্রোল বোমায় যাত্রীবাহী একটি বাসে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় হাসান (২৬) নামে এক যাত্রী দগ্ধ হয়েছেন। বুধবার রাত ৯টার দিকে এই ঘটনাটি ঘটে। পরে দগ্ধ অবস্থায় ওই যাত্রীকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে।
ইনস্টিটিউটের আবাসিক চিকিৎসক তরিকুল ইসলাম ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, 'যাত্রাবাড়ী থেকে দগ্ধ হয়ে হাসান নামে এক যুবক আমাদের জরুরি বিভাগে আসে। তাঁর অবস্থা আশঙ্কাজনক না হলেও হাত ও পায়ের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গেছে। বর্তমানে জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে। আমরা বিষয়টি ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানিয়েছি।'
আহত হাসান বলেন, 'বাসটি মাতুয়াইল বাসস্ট্যান্ডে আসার সঙ্গে সঙ্গে পেছনের জানালা দিয়ে কয়েক যুবক একটি পলিথিনে করে পেট্রোল ভেতরে ছুঁড়ে পালিয়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গে বাসে আগুন ধরে যায়। অন্যান্য যাত্রীরা সঙ্গে সঙ্গে নিচে নেমে গেলেও আমার গাড়ি থেকে নামতে দেরি হওয়ায় আমার পা এবং হাতে আগুন লেগে দগ্ধ হয়। পরে আমার এক আত্মীয়কে সংবাদ দিলে তিনি ঘটনাস্থলে এসে আমাকে শেখ হাসিনা বার্নে নিয়ে আসে।'
এর আগে রাজধানীর মানিকনগরে একুশে এক্সপ্রেস পরিবহনের তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) বিকাল পৌনে ৫টায় মানিকনগর চৌরাস্তায় এই অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিশ্চিত করে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া সেলের কর্মকর্তা মো. আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তিনটি বাসের মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। একটি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
এদিকে, সিলেটের বাস টার্মিনাল এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বাসটি পুরোপুরি আগুনে ভস্মীভূত হয়ে গেছে। বুধবার (৬ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে নগরীর দক্ষিণ সুরমার কদমতলী এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
খাজা এন্টারপ্রাইজের বাসটির চালক জাবেদ মিয়া বলেন, বাসটি টার্মিনাল এলাকার যমুনা মার্কেটের সামনের রাস্তার পাশে পার্কিং করা অবস্থায় রেখে আমি ও আমার স্টাফরা চা খেতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেলে এসে আমাদের বাসে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিসে খবর দিলে তারা প্রায় ৪০ মিনিট পর ঘটনাস্থলে আসেন। তার আগেই বাসটি পুরোপুরি পুড়ে যায় বলে জানান চালক।
এদিকে ফায়ার সার্ভিসের তথ্যমতে, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৬ ডিসেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫৬টি অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২৫০টি যানবাহন ও ১৫টি স্থাপনায় আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। আগুন দেওয়া যানবাহনের মধ্যে ১৫৫টি বাস, ৪৩টি ট্রাক, ২১টি কাভার্ডভ্যান, ৮টি মোটরসাইকেল এবং অ্যাম্বুলেন্স, ট্রেনসহ অন্যান্য ২৩টি বাহন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২৮ অক্টোবর মহাসমাবেশ পণ্ড ও নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার এবং সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ২৯ অক্টোবর সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতালের ডাক দেয় বিএনপি। এরপর থেকে মঙ্গলবার, শুক্রবার ও শনিবার ব্যতীত দফায় দফায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি করে যাচ্ছে দলটি।