বিএনপি জোটের অবরোধে ২৪ ঘণ্টায় ১২ গাড়িতে আগুন
- আপডেট সময় : ০৭:৩০:৩১ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৭ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪২০ বার পড়া হয়েছে
সরকারের পদত্যাগ, তফসিল বাতিল ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি আদায়ে এবং বেগম খালেদা জিয়াসহ নেতাকর্মীদের মুক্তির দাবিতে বিএনপি ঘোষিত ১০ম দফা সর্বাত্মক অবরোধের দ্বিতীয় দিন চলছে। বিএনপি জোটের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার অবরোধের সময় কয়েকটি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়েছে। তবে, দ্বিতীয় দিনে রাজধানী ঢাকায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। সকাল থেকেই সড়ক মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করতে দেখা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সারা দেশে র্যাবের ৪১৮টি টহল দল মোতায়েন রয়েছে। এরমধ্যে রাজধানীতেই রয়েছে ১২৬টি। আজ সকালে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার সহকারী পরিচালক আ ন ম ইমরান খান এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
রাজধানীর শাহজাহানপুরে বৃষ্টিতে ভিজে মিছিল ও পিকেটিং করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ নেতাকর্মীরা। সকাল সাড়ে সাতটায় শাহজাহানপুর মোড় থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি পীরজঙ্গী মাজার মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় তারা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল ও পিকেটিং করে।
এদিকে ১২ দলীয় জোটের নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগের ‘একতরফা’ নির্বাচনমুখী অবস্থান দেখে মনে হচ্ছে ভোটের দিন কেন্দ্রগুলো তাদের অস্থায়ী কার্যালয়ে পরিণত হবে। আওয়ামী লীগ প্রতারক দল এবং নৌকা গুম-খুনের প্রতীক। সুতরাং জনগণ তাদের ভোট দেবে না।
বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের দাবি এবং অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করেন দলের নেতাকর্মীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাব হয়ে বিজয় নগর ঘুরে পল্টন মোড়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন তারা। এসময় সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে জোটের নেতারা এ কথা বলেন।
বিএনপির চলমান অবরোধের মধ্যে ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে ১২টি যানবাহনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এরমধ্যে রাজধানীতেই পুড়েছে ৬টি গাড়ি। বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে পাঠানো ফায়ার সার্ভিস মিডিয়া সেলের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। গত বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ১২টি যানবাহনে আগুন লাগানোর সংবাদ পেয়েছে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে রাজধানীতে ৬টি, গাজীপুর ২টি, চট্টগ্রামে ৩টি ও সিরাজগঞ্জে ১টি করে যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। এসব ঘটনায় ৬টি বাস, ২টি কাভার্ড ভ্যান, ১টি ট্রাক ও ৩টি পিকআপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
সংস্থাটি জানায়, দুর্বৃত্তরা বুধবার সকাল সোয়া ৬ টায় গাজীপুরের শ্রীপুর বাজারে ১টি পিকআপ, সকাল সাড়ে ৮টায় রাজধানীর খিলগাঁও তালতলায় ১টি অগ্রণী ব্যাংকের স্টাফ বাসে আগুন দেয়।
একই দিন সকাল পৌনে ১১টায় গাজীপুরের কাপাসিয়ার ১টি কাভার্ড ভ্যান, বিকেল পৌণে ৫টায় খিলগাঁও মানিকনগর চৌরাস্তায় ৩টি বাস, রাত ৮টায়, প্রগতি স্মরণিতে ১টি বাস, রাত সাড়ে ৯টায় সিরাজগঞ্জ শাহজাদপুরে ১টি পিকআপ এবং রাত সাড়ে ১১টায় চট্টগ্রামে কালুরঘাটে সিএমবি মোড়ে ১টি বাস আগুন দেওয়া হয়।
বুধবার মধ্য রাতে আগারগাঁও এডিবি ব্যাংকের সামনে ১টি ট্রাক, রাত ৩টায় ফেনীর ছাগলনাইয়ায় রেজুমিয়া ব্রীজে ১টি কাভার্ড ভ্যান ও রাত ৪টায় চট্টগ্রামে কালুরঘাটে সিএমবি মোড়ে ১টি কাভার্ড ভ্যানে আগুনের খবর পাওয়ার কথা জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।
এ হিসেবের বাহিরেও বৃহস্পতিবার দুপুর ১টায় শাহবাগে তরঙ্গ প্লাস পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দেওয়া হয়।
রাজধানীর মতিঝিলে গাজীপুর পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মতিঝিল বক চত্বরে এ অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার রোজিনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাসে অগ্নিসংযোগের খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট রওনা হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই স্থানীয়রা ফায়ার এক্সটিংগুইসার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেন। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি বলেও জানান ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা।
এর আগে, গতকাল রাতে দিনাজপুরের বীরগঞ্জে চাল ভর্তি চলন্ত ট্রাকে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এতে প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এছাড়াও, নওগাঁ-রাজশাহী আঞ্চলিক মহাসড়কের ডাক্তারের মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকা ট্রাকে দুর্বৃত্তরা আগুণ দিয়েছে। এদিকে, সিলেট কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে একটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রাত সাড়ে ৮ টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
উল্লেখ্য, গত ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। সেদিন এক পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং অনেকে আহত হন। সমাবেশ ভন্ডুল করার প্রতিবাদে পরদিন হরতাল আহ্বান করে বিএনপি। ওইদিন বিএনপি মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরের কয়েকদিনে মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু, মোয়াজ্জেম হোসেন আলালসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের প্রায় সব কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এসব গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ৩১ অক্টোবর থেকে মোটামুটি লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি। এর মধ্যে তফসিল ঘোষিত হওয়ায় এর প্রতিবাদে ২ দিন হরতাল পালন করা হয়। এখন নিয়মিতভাবে সপ্তাহের মঙ্গলবার বাদে বাকি চারদিন অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি ও তার যুগপৎ আন্দোলনের সঙ্গী দলগুলো।