ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক সাংবাদিকের পরিবারের ২২ জন নিহত হয়েছেন। আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার (৬ নভেম্বর) সকালে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে ইসরায়লের হামলায় আল জাজিরা আরবির সংবাদদাতা মোয়ামেন আল শরাফির পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়।
পরিবারের নিহত সদস্যদের মধ্যে আল শরাফির বাবা মাহমুদ এবং মা আমিনা, তার ভাই ও ভাইয়ের স্ত্রী, বোন এবং তার স্বামীর পাশাপাশি ভাগ্নে ও ভাগ্নিও রয়েছেন। আল শরাফি আল জাজিরাকে জানান, হামলার সময় একটি বিস্ফোরকের আঘাতে বাড়িতে একটি গভীর গর্ত তৈরি হয়। তিনি আরও বলেন, রেড ক্রিসেন্ট বা উদ্ধারকারীদের কেউ এখন পর্যন্ত মৃতদেহের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়নি।
এদিকে বোমা হামলায় নিহত হওয়ার আগে তার মায়ের পাঠানো শেষ ভয়েস ম্যাসেজ প্রকাশ করেছেন আল শরাফি। ওই ভয়েস মেসেজে তাকে বলতে শোনা যায়, ‘আসসালামু আলাইকুম। শুভ সকাল। তুমি কেমন আছো? আশা করি, তুমি ভালো আছো। তোমার স্ত্রী-সন্তান কেমন আছে? তোমার শারীরিক অবস্থা কি? নিজের যত্ন নিও, বাবা।’
তিনি আরও বলেন, ‘আল্লাহ তোমাকে এই যুদ্ধ থেকে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা করুক। ভালোভাবে নিজের যত্ন নিও, আমি সত্যিই তোমাকে মিস করি, আমি প্রতিদিন তোমার জন্য দোয়া করি। আল্লাহ তোমার মঙ্গল করুক।’
এক বিবৃতিতে আল জাজিরা মিডিয়া নেটওয়ার্ক ইসরায়েলি এই হামলার নিন্দা করেছে এবং বলেছে, ‘এই অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে জবাবদিহি করার জন্য সমস্ত আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে আল জাজিরা।’
আল জাজিরা নেটওয়ার্ক বলছে, ‘আল জাজিরা অবিলম্বে এই গণহত্যা বন্ধ করতে এবং শহীদদের পরিবার ও নিরপরাধ হতাহতদের দুর্ভোগের জন্য দায়ীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে কাজ করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষায় কাজ করা সংস্থাগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় বুধবার (৬ ডিসেম্বর) আরও ৭৩ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১২৩ জন। এর আগে মঙ্গলবার রাতে নুসেরাত শরণার্থী শিবিরে বিমান হামলা হয়েছে। এতে শিশুসহ ৯ জন নিহত হন।
প্রসঙ্গত, গত ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর অব্যাহত হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ১৬ হাজার ২৪৮ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে সাত হাজারই শিশু। প্রাথমিকভাবে উপত্যকার উত্তরাঞ্চলের গাজা সিটিকে লক্ষ্যে পরিণত করে ইসরায়েল। সম্প্রতি সাত দিনের যুদ্ধবিরতি শেষ হলে তারা দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে হামলা বাড়ায়।
জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, প্রতি মিনিটে গাজায় পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ট্যাঙ্কের গোলা থেকে প্রাণ বাঁচাতে লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছেন।