ঢাকা ০২:০২ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

গাজায় ইসরাইল-হামাসের প্রচণ্ড সংঘর্ষ

আর্ন্তজাতিক ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪২০ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সেদেরত শহর লক্ষ্য করে ৪টি রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। হামাসের চারটি রকেটের মধ্যে ২টি হামলা প্রতিহত করা হয়েছে এবং বাকি ২টি শহরের বাইরে আঘাত হেনেছে বলে জানায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১৭ হাজার ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৬ হাজার আহত হয়েছে। আর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েল। খান ইউনিসে জল, স্থল ও আকাশ পথে হামলা চালিয়ে হামাসের ৪৫০ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস ও কয়েকজন নেতাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। বিমান হামলায় খান ইউনিসে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট।

হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস জানিয়েছে, এক ‘জিম্মি’ সেনাকে উদ্ধারে গাজায় অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনী। তবে তাদের অভিযান ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যে সেনাকে ছাড়াতে অভিযান চালানো হয়েছিল; সেই সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি অভিযানে অংশ নেওয়া কয়েকজন সেনাও আহত ও নিহত হয়েছে। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে হামাস।

হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা বলেছেন, তেল আবিবসহ ইসরাইলের অন্যান্য শহরে বৃষ্টির মতো রকেট বর্ষণ করেছেন তার বাহিনীর যোদ্ধারা। তিনি শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, এছাড়া, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইহুদিবাদী বাহিনীর ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বহুবার হামলা চালিয়েছেন হামাস যোদ্ধারা। তারা দখলদার সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়েছেন। এসব হামলা ও সংঘর্ষে বহু ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে বলে তিনি জানান।

আবু উবায়দা বলেন, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকা জুড়ে ২১টি ইসরাইলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।

এর আগে গতকাল (শুক্রবার) ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনা মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি দাবি করেন, গাজায় হামাসের প্রতিরোধ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। তিনি এক্ষেত্রে ইসরাইল অভিমুখে হামাসের রকেট হামলা কমে আসার প্রতি ইঙ্গিত করেন।

তার ওই দাবির পরপরই তেল আবিবে এক ঝাঁক রকেট নিক্ষেপ করেন হামাস যোদ্ধারা। তারা বলেন, এই প্রথমবারের মতো তারা ইসরাইলে হামলা চালানোর কাজে এম-৯০ রকেট ব্যবহার করছেন। গাজা থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত তেল আবিব পর্যন্ত যেতে হামাসের রকেটগুলোকে অন্তত ১০ জায়গায় আয়রন ডোম মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু তারপরও গতরাতে তেল আবিবের আকাশে অন্তত ৮টি রকেট দেখা গেছে। কিন্তু এসব রকেট ওই নগরীতে আঘাত হেনেছে কিনা বা তাকে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রকাশ করেনি তেল আবিব।

গাজায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর এবার আবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। তবে প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া। এই প্রস্তাবে আগে থেকেই বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের অ্যাম্বাসেডর গিলাদ এরদান বলেন, ‘এই প্রস্তাব আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।’ এ ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘হামাসের হামলার কারণে গাজাবাসীকে শাস্তি পেতে হবে কেন? এটি ঠিক হলো না।’

এদিকে প্রথমবারের মতো গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ইসরায়েল সরকার যে লক্ষ্যের কথা বলেছিল, তার সঙ্গে তাদের আচরণের ফারাক থেকে যাচ্ছে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সম্প্রতি দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছে, তার সমালোচনা করতে গিয়ে ব্লিঙ্কেন এমন মন্তব্য করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন এ মন্তব্য করেন।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফোনালাপের সময় তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং হামাস থেকে বেসামরিক নাগরিকদের আলাদা করার ওপর জোর দিয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

গাজায় ইসরাইল-হামাসের প্রচণ্ড সংঘর্ষ

আপডেট সময় : ০৫:৪৭:৪৮ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৩

ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে সেদেরত শহর লক্ষ্য করে ৪টি রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। হামাসের চারটি রকেটের মধ্যে ২টি হামলা প্রতিহত করা হয়েছে এবং বাকি ২টি শহরের বাইরে আঘাত হেনেছে বলে জানায় ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ। তবে এতে কেউ হতাহত হয়নি।

ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অধিকৃত পশ্চিম তীরে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ইসরায়েলি অভিযানে ৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানয়েছে, গত ৭ অক্টোবর হামাসের হামলা শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ১৭ হাজার ১৭০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৪৬ হাজার আহত হয়েছে। আর ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুসারে, হামাসের হামলায় ১ হাজার ২০০ মানুষ নিহত হয়েছে।

শুক্রবার আল-আকসা মসজিদে ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা দেয় ইসরায়েল। খান ইউনিসে জল, স্থল ও আকাশ পথে হামলা চালিয়ে হামাসের ৪৫০ লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস ও কয়েকজন নেতাকে হত্যার দাবি করেছে ইসরায়েল। বিমান হামলায় খান ইউনিসে বহু ফিলিস্তিনি হতাহত হয়েছে বলে জানিয়েছে রেড ক্রিসেন্ট।

হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসেম ব্রিগেডস জানিয়েছে, এক ‘জিম্মি’ সেনাকে উদ্ধারে গাজায় অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েলের বিশেষ বাহিনী। তবে তাদের অভিযান ব্যর্থ করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া যে সেনাকে ছাড়াতে অভিযান চালানো হয়েছিল; সেই সেনাও প্রাণ হারিয়েছেন। এমনকি অভিযানে অংশ নেওয়া কয়েকজন সেনাও আহত ও নিহত হয়েছে। শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ম্যাসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে হামাস।

হামাসের সামরিক বাহিনী ইজ্জাদ্দিন কাসসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র আবু উবায়দা বলেছেন, তেল আবিবসহ ইসরাইলের অন্যান্য শহরে বৃষ্টির মতো রকেট বর্ষণ করেছেন তার বাহিনীর যোদ্ধারা। তিনি শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে বলেন, এছাড়া, গাজা উপত্যকার বিভিন্ন স্থানে ইহুদিবাদী বাহিনীর ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান লক্ষ্য করে বহুবার হামলা চালিয়েছেন হামাস যোদ্ধারা। তারা দখলদার সেনাদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষেও লিপ্ত হয়েছেন। এসব হামলা ও সংঘর্ষে বহু ইসরাইলি সেনা হতাহত হয়েছে বলে তিনি জানান।

আবু উবায়দা বলেন, হামাস যোদ্ধাদের হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকা জুড়ে ২১টি ইসরাইলি ট্যাংক ও সাঁজোয়া যান আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।

এর আগে গতকাল (শুক্রবার) ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনা মুখপাত্র রিয়ার অ্যাডমিরাল ড্যানিয়েল হ্যাগারি দাবি করেন, গাজায় হামাসের প্রতিরোধ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। তিনি এক্ষেত্রে ইসরাইল অভিমুখে হামাসের রকেট হামলা কমে আসার প্রতি ইঙ্গিত করেন।

তার ওই দাবির পরপরই তেল আবিবে এক ঝাঁক রকেট নিক্ষেপ করেন হামাস যোদ্ধারা। তারা বলেন, এই প্রথমবারের মতো তারা ইসরাইলে হামলা চালানোর কাজে এম-৯০ রকেট ব্যবহার করছেন। গাজা থেকে ৮০ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত তেল আবিব পর্যন্ত যেতে হামাসের রকেটগুলোকে অন্তত ১০ জায়গায় আয়রন ডোম মোকাবিলা করতে হয়। কিন্তু তারপরও গতরাতে তেল আবিবের আকাশে অন্তত ৮টি রকেট দেখা গেছে। কিন্তু এসব রকেট ওই নগরীতে আঘাত হেনেছে কিনা বা তাকে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রকাশ করেনি তেল আবিব।

গাজায় যুদ্ধবিরতি শেষ হওয়ার এক সপ্তাহ পর এবার আবার যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব এসেছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে। তবে প্রস্তাবে ভেটো দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো দেওয়ার কড়া সমালোচনা করেছে রাশিয়া। এই প্রস্তাবে আগে থেকেই বিরোধিতা করেছে ইসরায়েল।

জাতিসংঘে নিযুক্ত ইসরায়েলের অ্যাম্বাসেডর গিলাদ এরদান বলেন, ‘এই প্রস্তাব আমরা প্রত্যাখ্যান করলাম।’ এ ব্যাপারে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, ‘হামাসের হামলার কারণে গাজাবাসীকে শাস্তি পেতে হবে কেন? এটি ঠিক হলো না।’

এদিকে প্রথমবারের মতো গাজা ইস্যুতে ইসরায়েলের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষায় ইসরায়েল সরকার যে লক্ষ্যের কথা বলেছিল, তার সঙ্গে তাদের আচরণের ফারাক থেকে যাচ্ছে।’

বার্তা সংস্থা রয়টার্স বলছে, সম্প্রতি দক্ষিণ গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক নাগরিকদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছে, তার সমালোচনা করতে গিয়ে ব্লিঙ্কেন এমন মন্তব্য করেন। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের সঙ্গে বৈঠকের পর ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে ব্লিঙ্কেন এ মন্তব্য করেন।

এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গতকাল বৃহস্পতিবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ও জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন। ফোনালাপের সময় তিনি বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং হামাস থেকে বেসামরিক নাগরিকদের আলাদা করার ওপর জোর দিয়েছেন।