মির্জা আজমের সম্পদ বেড়েছে ১২২ গুণ
- আপডেট সময় : ০৫:১৪:৫৯ অপরাহ্ন, রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪৩৫ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মির্জা আজমের ১৫ বছরের ব্যবধানে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বেড়ে হয়েছে ১২২ গুণ। নবম থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা মির্জা আজমের হলফনামা বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
জামালপুর জেলার মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জামালপুর-৩ আসনে ১৯৯১ সাল থেকে টানা ৬ বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম। এবারও তিনি এই আসন থেকে নৌকা প্রতীকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এর আগে, তিনি যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন দুবার, সংসদীয় হুইপসহ, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী ছিলেন একবার।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত মির্জা আজমের হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, তার স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ১২২ গুণ। এছাড়াও গত ১৫ বছরে তার বার্ষিক আয় বেড়েছে ৮২ গুণ। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের অস্থাবর সম্পত্তি ছিল ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। ২০১৮ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭ কোটি ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯ টাকা। সবশেষ ২০২৩ সালে তার পরিমাণ দাঁড়ায় ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, ১৫ বছর আগে মির্জা আজমের স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৫২ টাকা। পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৬২ টাকা। বর্তমানে তার স্থাবর সম্পত্তি ৩১ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ১৯২ টাকা।
নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের বার্ষিক আয় ছিল ৪ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৫ টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এখন তাঁর বার্ষিক আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৬ লাখ ২ হাজার ৫৭ টাকায়। অর্থাৎ গত ১৫ বছরে তাঁর বেড়েছে প্রায় ৮২ গুণ। যদিও এবার তিনি জমি বিক্রি বাবদ ১ কোটি ৫৭ লাখ ৩১ হাজার টাকা আয় দেখিয়েছেন। এ ছাড়া বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া বাবদ তিনি ১ কোটি ৯৩ লাখ ৭৪ হাজার ৩৭ টাকা আয় দেখিয়েছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তার বার্ষিক আয় ছিল ১ কোটি ২৮ লাখ ৯৯ হাজার ৩৪২ টাকা। ২০১৪ সালে তার আয় ছিল ১৫ লাখ ৭২ হাজার ৭৮৬ টাকা। অর্থাৎ ১০ বছরে তার আয় বেড়েছে ২৩ দশমিক ২৭ গুণ।
২০০৮ সালে নির্বাচনের সময় মির্জা আজমের কাছে নগদ ২৩ লাখ ৩২ হাজার ৬৮৫ টাকা ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার কোনো জমানো টাকা কিংবা কোনো বিনিয়োগ ছিল না। এরপর তিনবার সংসদ সদস্যের দায়িত্ব পালনের পর তার ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা ও কোম্পানির শেয়ার ও স্টক এক্সচেঞ্জে বিনিয়োগ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটি ৫৬ লাখ ৪৬ হাজার ৭৯৮ টাকা। সব মিলিয়ে ২০২৩ সালে তার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৫ কোটি ৬৪ লাখ ৩০ হাজার ১০০ টাকা। এর মধ্যে ২ কোটি ৩৯ লাখ টাকা দামের তিনটি জিপ ও ১০ কোটি ৬২ লাখ টাকার ব্যবসায়িক মূলধনও আছে। এছাড়াও রয়েছে লাখ টাকা মূল্যের একটি শটগান ও একটি পিস্তল।
২০১৮ সালে তার অস্থাবর সম্পদ ছিল ২৭ কোটি ১৬ লাখ ৫৭ হাজার ৬৯ টাকা। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় ছিল ৪৮ লাখ ৩৭ হাজার ৬৮৫ টাকা। গতবার নির্বাচনের সময় তার হাতে নগদ ৬ কোটি ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ টাকা থাকলেও এবার তার নগদ টাকার পরিমাণ কমেছে। ২০২৩ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় তার হাতে নগদ ১৯ লাখ টাকা থাকার কথা উল্লেখ করেছেন তিনি।
পেশায় ব্যবসায়ী মির্জা আজম এবারের হলফনামায় ৩১ কোটি ১০ লাখ ৮ হাজার ১৯২ টাকার স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। এর মধ্যে ৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা মূল্যের ১৭ দশমিক ৬৩ একর কৃষিজমি, ১২ কোটি ৮২ লাখ টাকা দামের প্রায় দেড় একর অকৃষি জমি, ১১ কোটি সাড়ে ২৮ লাখ টাকা মূল্যের ২টি দালান ও ৩৬ লাখ সাড়ে ১৯ হাজার টাকার ১টি ফ্ল্যাট আছে।
পাঁচ বছর আগে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ১৩ কোটি ৮২ লাখ ২৮ হাজার ৬২ টাকা। এর মধ্যে কৃষিজমি ২ দশমিক ৪৫ একর থেকে ১৭ দশমিক ৬৩ একর হয়েছে। তবে এবার তার অকৃষি জমির পরিমাণ কমেছে। ১৫ বছর আগে তার স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল ৬ লাখ ২৯ হাজার ৬৫২ টাকা। তখন তিনি বাড়ি বা কোনো অ্যাপার্টমেন্টের কথা উল্লেখ করেননি। যদিও ২০১৩ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় স্থাবর সম্পদের মধ্যে তিনি ঢাকায় একটি ফ্ল্যাট ও জামালপুরে ৯টি দালানের কথা উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
মির্জা আজমের সম্পদ বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধির ব্যাপারে অনুসারীর মতো মতামত ব্যক্ত করলেন জামালপুর সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম। তিনি বলেন, ‘তারা বনেদি পরিবার। তারা বংশ পরম্পরায় অঢেল সম্পত্তির মালিক। তার অঢেল পৈতৃক সম্পত্তি। অনেক ব্যবসা–বাণিজ্য তাদের। ছয়বারের এমপি। মন্ত্রীও ছিলেন। সব মিলিয়ে তার সম্পদ বাড়তেই পারে। একটাই দেখার বিষয় সম্পদের টেক্স বা রাষ্ট্রীয় যে পাওনা এগুলো পরিষদ করে কিনা। কোনো সম্পদ গোপন আছে কিনা।’