বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্তকে অবৈধ বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম।
রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো কল্যাণ পার্টির এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, দলটির নির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামতকে তোয়াক্কা না করে নির্বাচনে আসায় অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
সৈয়দ ইবরাহিম ছাড়াও দলটির মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন এবং অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দল্লাহ আল হাসান সাকিবকেও দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।
এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ইবরাহিম বলেন, ‘বিষয়টি আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমেই জানতে পেরেছি। আমাদের দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দল। সে অনুযায়ী দলের কারা কি সিদ্ধান্ত নিতে পারবে তা ইসিতেই জমা দেওয়া আছে। আমি এ ধরনের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাই। আমাদের দলের সংবিধান অনুযায়ী এটা অবৈধ।’
ইবরাহিম আরও বলেন, ‘আমাদের দেশের রাজনীতিতে এ ধরনের অনেক নোংরা কাজ হয়। আমি এটার নিন্দা জানাই। যারা নির্বাচনে আসেনি তারা নানাভাবে এ ধরনের নোংরা কাজে উস্কানি দিচ্ছে।’
কল্যাণ পার্টির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীক নির্বাহী কমিটির অধিকাংশের মতামতকে তোয়াক্কা না করে অফিস নোটিশ ব্যতিত ১৩১ জনের নির্বাহী কমিটির মধ্য থেকে ১৫ জনের গোপন বৈঠকে বাংলাদেশের মানুষের চিন্তা চেতনার বিপরীতে দলীয় আদর্শকে জলাঞ্জলি দিয়ে আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদ ও অবৈধ নির্বাচনকে বৈধতা দিতে কথিত যুক্তফ্রন্ট নামীয় নির্বাচনী জোটে যোগদান করায় নির্বাহী কমিটির দুই তৃতীয়াংশ সদস্য বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির গঠনতন্ত্রের ধারা-২০, উপধারা-ঙ এর অনুচ্ছেদ-১ অনুযায়ী একাধিক বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বীর প্রতীককে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সকল পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ভাইস চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন পারভেজকে।
এতে আরও বলা হয়, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন পারভেজের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাহী কমিটির প্রথম সভায় স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনকে ত্বরান্বিত করতে ১২ দলীয় জোটের সাথে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালনের সিদ্ধান্ত হয়। পার্টির নিবেদিতপ্রাণ নির্বাহী কমিটির সদস্যগণের সমন্বয়ে বাংলাদেশ কল্যাণ পর্টির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি পূণঃগঠন করা হয়। পরবর্তীতে পুণঃগঠিত নির্বাহী কমিটির সর্বসম্মত সিদ্ধান্তক্রমে- দলীয় নীতি নৈতিকতা ও আদর্শকে উপেক্ষা করে ব্যক্তিগত লোভ ও স্বার্থসিদ্ধির জন্য যুক্তফ্রন্ট গঠন করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহনে পার্টির সাবেক চেয়ারম্যানকে প্ররোচিত করায় পার্টির সাবেক মহাসচিব আব্দুল আউয়াল মামুন এবং সাবেক অতিরিক্ত মহাসচিব আব্দল্লাহ আল হাসান সাকিবকে পার্টি থেকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়।
কল্যাণ পার্টি দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপির একদফা দাবিতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। গত ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন একই দাবিতে বিজয়নগর এলাকায় আলাদা সমাবেশও করেছে কল্যাণ পার্টি।
অনেকটা চমক দেখিয়েই গত ২২ নভেম্বর আন্দোলনের মাঠ ছেড়ে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ও বালাদেশ মুসলিম লীগকে (বিএমএল) সাথে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেয় দলটি।
সে সময় গণমাধ্যমকে সৈয়দ ইবরাহিম বলেছিলেন, ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রয়োজন আছে। তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাওয়া বা না যাওয়ার সিদ্ধান্ত জরুরি। যুক্তফ্রন্ট মনে করছে নির্বাচনে যাওয়ার প্রয়োজন আছে।’
কক্সবাজার-১ চকরিয়া পেকুয়া আসনে নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহীম।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আত্মপ্রকাশ করে কল্যাণ পার্টি। দলটির প্রতিষ্ঠাকালীন চেয়ারম্যান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম। যুক্তফ্রন্ট গঠনের আগে কল্যাণ পার্টি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে ছিল। পরে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) নেতৃত্বে হওয়া ১২ দলীয় জোটে যুক্ত হয়।