ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ফোনকলেই মুহূর্তেই বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৭:২৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪২৯ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় অস্বাভাবিকভাবে বাজারগুলোতে চড়া পেঁয়াজের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় রাতারাতি পেঁয়াজ সরিয়ে গুদামজাত করেছে অন্যখানে। ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট।

বাইরে কাগজে ঝুলছে ‘পেঁয়াজ নেই’- এমন ঘোষণা। অথচ আড়তে বস্তায় বস্তায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে পেঁয়াজ। উদ্দেশ্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি। গত দু’দিন ধরে চট্টগ্রামের সব পাইকারি বাজারে চলছে এমন নৈরাজ্য। পাশাপাশি সীমান্তের মোকাম থেকে একেকটি ফোনকলে বন্দরনগরীর আড়তে মুহূর্তেই বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম।

এদিকে দ্রুত পেঁয়াজ আনতে ভারতে বাংলাদেশ দূতবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোববার (১০ ডিসেম্বর) চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া দেশে যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটারিং করার জন্য সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারে মেসার্স বাঁচা মিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের আড়তে মূল্য তালিকায় লেখা ‘পেঁয়াজ নেই’। অথচ পাশে প্রতিষ্ঠানটির গুদামে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে মেলে ৫০ বস্তারও বেশি পেঁয়াজ। বাড়তি দামের আশায় এসব পেঁয়াজ মজুত করলেও আড়তদারের দাবি, ১৪ বস্তা বিক্রি হয়েছে আগে। কিন্তু দেখাতে পারেননি বিক্রয় রশিদ। এছাড়া বাকি ৩৬ বস্তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি।

প্রতিষ্ঠানটির চালানে গত ৮ ডিসেম্বর যে পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একই পেঁয়াজ পরের দিন বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। মেসার্স বাঁচা মিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জানান, সীমান্তের মোকাম থেকে নির্দেশনা অনুসারে দাম বাড়িয়েছেন তিনি।

কেবল এটিই নয়; চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলিসহ সব বড় আড়তে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয় একই পদ্ধতিতে। সীমান্ত থেকে মোবাইলে একটি কলেই বদলে যায় দাম। মজুতের পাশাপাশি মুহূর্তের মধ্যেই দাম বাড়ে কয়েকগুণ।

একই অবস্থা খুচরা বাজারেও। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার খবরে বেড়ে যায় খুচরায়ও। যেমন: বায়েজিদের আমিন কলোনি বাজারে ১২০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। যদিও ভোক্তার অভিযানের খবরে আবার সেটি হয়ে যায় ১২০ টাকা।

মোকাম থেকে ফোনকলে দাম বাড়ানোর কথা জানে ভোক্তা অধিকারও। কিন্তু কিছু জরিমানা ছাড়া নিতে পারে না বড় কোনো ব্যবস্থা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই সেখান থেকে আমদানির জন্য ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়। এ পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কীভাবে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত থাকবে।

দেশের সর্বত্র যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্ল্যাহ জানান, আরেকজন অন্যপ্রান্ত থেকে মোবাইলে হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেবে, আর ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেবে এবং সে দামে বিক্রি করবে। তাতে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের দায় নিতে হবে।

পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতা ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বিকল্প কোনো দেশ থেকে আমদানির দাবি ভোক্তাদের।

এদিকে পেঁয়াজের দামের লাগাম টেনে ধরতে অভিনব এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন। জেলায় খুচরা পর্যায়ে এক কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি নিষেধ করা হয়েছে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে তার কার্যালয়ে পেঁয়াজ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় পেঁয়াজের দরের এমন লাফানোকে প্রোপাগান্ডা বলে জানান হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ।

চড়াদামে পেঁয়াজ কিনে বিক্রেতারা দুষছেন আড়তদারদের। কৃষক ও কৃষির স্বার্থেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যদাম নিশ্চিতে সরকারের কঠোর নজরদারি চান সংশ্লিষ্টরা।

নিউজটি শেয়ার করুন

ফোনকলেই মুহূর্তেই বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম

আপডেট সময় : ০৭:২৩:২৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩

ভারতের পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণায় অস্বাভাবিকভাবে বাজারগুলোতে চড়া পেঁয়াজের দাম। অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় রাতারাতি পেঁয়াজ সরিয়ে গুদামজাত করেছে অন্যখানে। ফলে বাজারে দেখা দিয়েছে পেঁয়াজের কৃত্রিম সংকট।

বাইরে কাগজে ঝুলছে ‘পেঁয়াজ নেই’- এমন ঘোষণা। অথচ আড়তে বস্তায় বস্তায় লুকিয়ে রাখা হয়েছে পেঁয়াজ। উদ্দেশ্য কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি। গত দু’দিন ধরে চট্টগ্রামের সব পাইকারি বাজারে চলছে এমন নৈরাজ্য। পাশাপাশি সীমান্তের মোকাম থেকে একেকটি ফোনকলে বন্দরনগরীর আড়তে মুহূর্তেই বেড়ে যাচ্ছে পেঁয়াজের দাম।

এদিকে দ্রুত পেঁয়াজ আনতে ভারতে বাংলাদেশ দূতবাসকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রোববার (১০ ডিসেম্বর) চিঠি পাঠিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এ ছাড়া দেশে যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি নিশ্চিত করতে কঠোর মনিটারিং করার জন্য সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

চট্টগ্রামের পাহাড়তলি বাজারে মেসার্স বাঁচা মিয়া এন্টারপ্রাইজ নামের আড়তে মূল্য তালিকায় লেখা ‘পেঁয়াজ নেই’। অথচ পাশে প্রতিষ্ঠানটির গুদামে ভোক্তা অধিকারের অভিযানে মেলে ৫০ বস্তারও বেশি পেঁয়াজ। বাড়তি দামের আশায় এসব পেঁয়াজ মজুত করলেও আড়তদারের দাবি, ১৪ বস্তা বিক্রি হয়েছে আগে। কিন্তু দেখাতে পারেননি বিক্রয় রশিদ। এছাড়া বাকি ৩৬ বস্তার কোনো হিসাব দিতে পারেননি।

প্রতিষ্ঠানটির চালানে গত ৮ ডিসেম্বর যে পেঁয়াজ ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, একই পেঁয়াজ পরের দিন বিক্রি হয় ২০০ টাকায়। মেসার্স বাঁচা মিয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী জানান, সীমান্তের মোকাম থেকে নির্দেশনা অনুসারে দাম বাড়িয়েছেন তিনি।

কেবল এটিই নয়; চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ, পাহাড়তলিসহ সব বড় আড়তে পেঁয়াজের দাম বাড়ানো হয় একই পদ্ধতিতে। সীমান্ত থেকে মোবাইলে একটি কলেই বদলে যায় দাম। মজুতের পাশাপাশি মুহূর্তের মধ্যেই দাম বাড়ে কয়েকগুণ।

একই অবস্থা খুচরা বাজারেও। পাইকারি বাজারে দাম বাড়ার খবরে বেড়ে যায় খুচরায়ও। যেমন: বায়েজিদের আমিন কলোনি বাজারে ১২০ টাকার পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। যদিও ভোক্তার অভিযানের খবরে আবার সেটি হয়ে যায় ১২০ টাকা।

মোকাম থেকে ফোনকলে দাম বাড়ানোর কথা জানে ভোক্তা অধিকারও। কিন্তু কিছু জরিমানা ছাড়া নিতে পারে না বড় কোনো ব্যবস্থা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ বলেন, ভারত রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগেই সেখান থেকে আমদানির জন্য ৫২ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজের এলসি খোলা হয়। এ পেঁয়াজ দ্রুত দেশে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কীভাবে বিকল্প দেশ থেকে পেঁয়াজের আমদানি বাড়ানো যায়, সে চেষ্টা চলছে। একইসঙ্গে টিসিবির মাধ্যমে স্বল্প আয়ের মানুষের মধ্যে পেঁয়াজ বিক্রি অব্যাহত থাকবে।

দেশের সর্বত্র যৌক্তিক মূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম বিভাগীয় উপ-পরিচালক মো. ফয়েজ উল্ল্যাহ জানান, আরেকজন অন্যপ্রান্ত থেকে মোবাইলে হঠাৎ করে দাম বাড়িয়ে দেবে, আর ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেবে এবং সে দামে বিক্রি করবে। তাতে অবশ্যই ব্যবসায়ীদের দায় নিতে হবে।

পেঁয়াজের বাজারে এমন অস্থিরতা ঠেকাতে নিয়মিত মনিটরিংয়ের পাশাপাশি বিকল্প কোনো দেশ থেকে আমদানির দাবি ভোক্তাদের।

এদিকে পেঁয়াজের দামের লাগাম টেনে ধরতে অভিনব এক সিদ্ধান্ত নিয়েছে হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসন। জেলায় খুচরা পর্যায়ে এক কেজির বেশি পেঁয়াজ বিক্রি নিষেধ করা হয়েছে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) বিকেলে তার কার্যালয়ে পেঁয়াজ এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে এক বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সভায় পেঁয়াজের দরের এমন লাফানোকে প্রোপাগান্ডা বলে জানান হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক দেবী চন্দ।

চড়াদামে পেঁয়াজ কিনে বিক্রেতারা দুষছেন আড়তদারদের। কৃষক ও কৃষির স্বার্থেই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যদাম নিশ্চিতে সরকারের কঠোর নজরদারি চান সংশ্লিষ্টরা।