আওয়ামী লীগের সঙ্গে চলছে জাতীয় পার্টির দরকষাকষি
- আপডেট সময় : ০৫:৫১:৫০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪২০ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন বণ্টন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে এখনও ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি জাতীয় পার্টি। নির্দিষ্ট কিছু আসন নিয়ে চলছে দরকষাকষি। আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে নির্বাচনে যাওয়ার সম্ভাবনাকেও উড়িয়ে দেননি দলটির নেতারা।
গত তিনটি সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা করেই ভোট করেছে জাতীয় পার্টি। এবার বেশী সংখ্যক আসন নিয়ে জাতীয় সংসদে যেতে চায় একাদশ জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। এরইমধ্যে ক্ষমতাসীন দলের সাথে দরকষাকষির অংশ হিসাবে ২৩টি আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারের দাবি তুলেছে তারা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘নির্বাচনী কৌশল যদি সব আপনাদের বলে দেই, সবাই যদি জেনে যায় তাহলে তো আমার কৌশল কাজে লাগবে না। নির্বাচন হোক। যে কোনো সাংগঠনিক বিষয়ে রাজনৈতিক কারণে আমার দল যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার রাখে। আমাদের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের যোগাযোগ আছে এবং যেহতু ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বটা বেশি তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ হচ্ছে। ফরমালি হচ্ছে আবার ইনফরমালিও হচ্ছে।’
জাতীয় পার্টির নেতারা এতদিন বলে এসেছেন, এবারের নির্বাচনে কোনো জোটে যাবেন না তারা। এককভাবেই নির্বাচন করবেন। গত ৬ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসে দলটি। পরদিন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু দাবি করেন, নির্বাচনের আসন বন্টন নিয়ে দলটির নেতাদের সঙ্গে তাদের কোনো আলোচনা হয়নি।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ–জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আসছেন। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে নেই।
এবার জাতীয় পার্টির লাঙ্গল নিয়ে নির্বাচন করতে চেয়েছেন ৩০৪ জন। মোট ১৮টি আসনে লাঙ্গলের বিপরীতে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। বিএনপি এই নির্বাচনে না আসায় জাতীয় পার্টিকে দ্বিতীয় বড় দল হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা জানান, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কৌশলগত ঐক্য হবে কিনা তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে আরও কিছু দিন।
বাবলা বলেন, ‘আগে আমরা করেছি জোটগত আসন ভিত্তিক। কিন্তু রাজনীতিতে শেষ কথা নেই। কখন কি ধরনের রাজনৈতিক কৌশলগতভাবে.. রাজনীতির শেষ কথা নাই। রাজনীতির সমীকরণে হয়তো অনেক সময় অনেক কিছু হতেই পারে। দেখুন, দেখবেন।’
জাতীয় পার্টির নেতারা জানান, এবার তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বেকারত্ব দূরীকরণ, রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় সেবার বিকেন্দ্রীকরণ, স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি ও শিশু অধিকার সুরক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।
নব্বইয়ের দশকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জোট করেছে দলটি। ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতে জাতীয় পার্টির সহায়তা নেয় আওয়ামী লীগ। সেই নির্বাচনে ৩০০ সংসদীয় আসনের মধ্যে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১৪৬টি। জাতীয় পার্টি পায় ৩২টি এবং বিএনপির আসন ছিল ১১৬টি।
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের দুই বছর আগে বিএনপি, জামায়াত এবং ইসলামী ঐক্যজোটের সাথে জোট গঠন করে এরশাদের জাতীয় পার্টি। ভোটের ঠিক আগ মুহূর্তে জোট ছেড়ে বেরিয়ে যায় দলটি। তবে দল ভেঙে একটি অংশ বিজেপি নামে থেকে যায় সেই জোটের সাথে।
২০০৭ সালে জাসদ, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, গণফোরাম ও এলডিপির সাথে জাতীয় পার্টিকেও জোটে নেয় আওয়ামী লীগ। অবশ্য এই জোট টেকেনি। সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট থেকে বাদ পড়ে এলডিপি ও গণফোরাম। সে সময় জোটে জাতীয় পার্টিই ছিল আওয়ামী লীগের মূল শরিক।
সেই নির্বাচনে মহাজোটের কাছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট কোনো পাত্তাই পায়নি। নির্বাচনে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন করে এই জোট।
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের বর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে আরেক দফা জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছেড়ে দেওয়া আসনে ভোট করে জাতীয় পাটি। নির্বাচনের পর সংসদে প্রধান বিরোধী দল হিসেবেও মর্যাদা পায় দলটি। বিরোধী দলে থাকলেও দলটির বেশ কয়েকজন নেতা সেই সরকারে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। এ নিয়ে সে সময় দলটিকে নানা সমালোচনার মুখে পড়তে হয়।
এর পর বহুবার জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের জোট থেকে বের হয়ে যেতে চাইলেও শেষ পর্যন্ত জোটেই থেকে যায়। ২০১৮ সালেও আওয়ামী লীগের সাথে অনেকটা সমঝোতা করেই নির্বাচনে আসে তারা। ওই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হলে ২২টি আসন নিয়ে সংসদে প্রধান বিরোধী দলের স্থান ধরে রাখে জাতীয় পার্টি।