আরও আসন চায় ১৪ দল, আওয়ামী লীগ বলছে সুযোগ নেই
- আপডেট সময় : ০৫:৪৫:০০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ১৪ দলীয় জোট শরিকদের জন্য ৭টি আসন ছাড়তে সম্মত হয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু এই ৭ আসনে সন্তুষ্ট নয় ১৪ দল। জোট নেতারা আরও কয়েকটি আসন দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীনদের। তবে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, এর চেয়ে বেশি আসন দেওয়ার সুযোগ নেই।
আসন ভাগাভাগি নিয়ে গত ২৬ নভেম্বরের পর থেকে আওয়ামী লীগের সাথে চার পাঁচ দফা বৈঠক করেছে ১৪ দল। জোট থেকে ২০টি আসন দাবি করলেও শেষ পর্যন্ত সমঝোতা হয়নি।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জোট নেতাদের সঙ্গে এক বৈঠক শেষে শরিকদের ৭টি আসন ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেয় আওয়ামী লীগ। এর মধ্যে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে তিনটি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলকে (জাসদ) তিনটি ও জাতীয় পার্টিকে (জেপি) একটি আসন ছাড়া হয়েছে।
ওয়ার্কার্স পার্টি পেয়েছে বরিশাল-৩, রাজশাহী-২ ও সাতক্ষীরা-১। জাসদ কুষ্টিয়া-২, লক্ষ্মীপুর-৪, ও বগুড়া–৪ আর জেপি পেয়েছে পিরোজপুর-২।
বরিশাল–৩ আসনে প্রার্থিতা করতে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন কুষ্টিয়া–২ আসনে আর জেপি সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু নির্বাচন করছেন পিরোজপুর–২ আসন থেকে।
এছাড়া রাজশাহী-২ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হোসেন বাদশা, সাতক্ষীরা-১ এ একই দলের মোস্তফা লুৎফুল্লাহ আহসান, লক্ষীপুর-৪ এ জাসদের মোশারফ হোসেন এবং বগুড়া-৪ এ একই দলের রেজাউল করিম তানসেন নির্বাচন করবেন।
শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠান শেষে জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানান, তাঁদের আসন আরও বাড়ানো দরকার। শরিকদের সাথে বৈষম্য না করার অনুরোধ জানিয়ে ছেড়ে দেয়া আসনগুলোতে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহারের দাবিও করেন তিনি।
হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘১৪ দলের জন্য যে প্রস্তাব করা হয়েছে এটা একটা প্রাথমিক প্রস্তাব, আপাতত। আমরা বিনয়ের সঙ্গে তা পুনঃবিবেচনার দাবি করেছি। জোটের প্রার্থীর এখান থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রত্যাহার করা দরকার।’
এদিকে ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানান, অতিরিক্ত আসন দেওয়ার আর সুযোগ নেই। আওয়ামী
লীগের ছাড়া আসনগুলোর বাইরে শরিক দলগুলোর নেতারা চাইলে নিজ দলের প্রতীকে নির্বাচন করতে পারবেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘ইলেকশন তারা সবাই করুক, তাঁদের দলের প্রতীক নিয়ে। সাতটি নির্বাচনি এলাকায় নৌকা আমরা সেক্রিফাইস করতে পারব। এ সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। যা হবার হয়েছে, এর বাইরে যাওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।’
অন্যদিকে, শুক্রবার দুপুরে রাজধানীতে নিজ বাস ভবনে আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ জানান, ভোটের মাঠে অবস্থা ভালো নয় বলেই শরিকদের আসন বাড়ানো হয়নি।
তথ্যমন্ত্রী হাছান ‘মনোনয়ন দিলে বা ১৪ দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করলে নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম, তাদের ক্ষেত্রে তো সমঝোতা করা কঠিন। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ওপর নিয়ন্ত্রণ তো আওয়ামী লীগের নাই। তারা তো আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিপক্ষেই স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছে। তাদেরকে আমরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করব।’
এছাড়া, জাতীয় পার্টি আলাদা নির্বাচন করতে চাইলেও তাদের সাথে সমঝোতা হবে বলেও জানান হাছান মাহমুদ।
নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টিসহ ২৯টি দলের প্রার্থীরা এবার নির্বাচনে আসছেন। অন্যদিকে, বিএনপিসহ ১৫টি রাজনৈতিক দলের কোনো প্রার্থী এই নির্বাচনে নেই।
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, দেশের ৩০০টি সংসদীয় আসনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা চেয়েছেন ৩০৩ জন। পাঁচটি আসনে নৌকার বিপরীতে দুজন করে প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোও নিজেদের মতো করে প্রার্থী ঘোষণা করেছে।
এর মধ্যে তরিকত ফেডারেশনের ‘ফুলের মালা’ প্রতীকে মনোনয়ন জমা দিয়েছেন ৪৭ জন, সাম্যবাদী দলের ‘চাকা’ প্রতীকে ৬ জন, গণতন্ত্রী পার্টির ‘কবুতর’ প্রতীকে ১২ জন, জাতীয় পার্টির (জেপি) ‘বাইসাইকেল’ প্রতীকে ২০ জন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির ‘হাতুড়ি’ প্রতীকে ৩৩ জন এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) ‘মশাল’ প্রতীকে ৯১ জন।
এদের মধ্যে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে গণতন্ত্রী পার্টির সব প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন। ফলে তারা এবারের নির্বাচনে অংশ নিতে পারছে না।
বর্তমানে ভোটের মাঠে থাকা রাজনৈতিক জোটগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরোনো বলা যেতে পারে ১৪ দলীয় জোটকে। বিএনপি-জামায়াতকে প্রতিহত করতে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে ২০০৪ সালে গঠিত হয় রাজনৈতিক জোট কেন্দ্রীয় ১৪ দল। জোটের প্রধান শরিক আওয়ামী লীগ।
২০০৯ সালে এক–তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বৃহত্তর জোট মহাজোট ক্ষমতায় আসে। এ সময় ১৪ দলের শরিক দলগুলোর কয়েকজন নেতা মন্ত্রিসভায়ও স্থান পান। ২০১৪ সালের নির্বাচনেও এ ধারা অব্যাহত ছিল। টানা দুই মেয়াদে মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং জাতীয় পার্টির (জেপি) সভাপতি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।
তবে ২০১৮ সালের নির্বাচনে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর শরিক দলের কোনো নেতাই মন্ত্রিসভায় স্থান পাননি। এ নিয়ে জোটনেতাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের মতবিরোধ তৈরি হয়। জোটের অনেক নেতাই প্রকাশ্যে ক্ষমতাসীনদের সমালোচনাও করেন। অবশ্য বরফ গলতেও সময় লাগেনি। গত জুলাইয়ে জোটনেতারা আবার ঐক্যবদ্ধ হয়ে নির্বাচনে আসার ঘোষণা দেন। আগের মতো এবারও আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে নামবেন কেন্দ্রীয় ১৪ দলের প্রার্থীরা।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী ভোট হবে আগামী ৭ জানুয়ারি। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর, আর প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনের প্রচার শুরু হবে ১৮ ডিসেম্বর থেকে। চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত।