ঢাকা ১১:৫৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

ফিলিস্তিনের ব্যাপারে আরব দেশগুলো কেন বিকারহীন?

ওমর হাসান
  • আপডেট সময় : ০৫:১৩:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৫১৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে আরব নেতাদের কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থতার জন্য গভীর দুঃখবোধের মধ্যে আছেন। কিন্তু এটা কেন হচ্ছে, তা বোঝা সহজ।

যতবারই ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালায়, ততবারই তার পশ্চিমা মিত্ররা মাঠে নেমে পড়ে। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও আমেরিকার মতো দেশের নেতারা ইসরায়েলের সমর্থনে আবেগপূর্ণ বার্তা পাঠান। সংবাদমাধ্যমও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। বর্ণবাদী প্রশস্তি রচনা করে তারা ইসরায়েলের অপরাধকে ন্যায্যতা দেয়। এবং ইসরায়েল যে নিপীড়ক ও আগ্রাসী, তা পাল্টে ফেলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গণহত্যায় সহায়তার জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের জরুরি সহায়তা পার্লামেন্টের মাধ্যমে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ফিলিস্তিনিদের নিধনে ইসরায়েলকে এসব সমর্থন দেওয়া হলেও আরব ও মুসলিম দেশের সরকারগুলো মুখে বুড়ো আঙুল দিয়ে বসে থাকে। আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সাম্প্রতিক বিশেষ যৌথ সম্মেলনে এই শোচনীয় নিষ্ক্রিয়তা আরও প্রকট হয়েছে। গাজায় গণহত্যার প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই একটি জরুরি ও বিশেষ সভার নামে আয়োজিত সম্মেলনটি ছিল মাত্র একদিনের জন্য। অনেক চেঁচামেচি ও নানা অঙ্গভঙ্গির পর আরব ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর একমাত্র দৃঢ় দাবি ছিল ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আহ্বান করা’। এতে যেন ইসরায়েলিদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করবে।

বলা ভালো, এর চেয়ে অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। বরং তারচেয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতারা ধৈর্য সহকারে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শেষ করার জন্য অপেক্ষা করছেন বললে ভুল বলা হবে না। তাঁরা গাজায় সহায়তা পাঠানোর জন্য মিশরের উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। এটি শুনতে ভালোই। যদি অবশ্য আপনি না জানেন, রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় কিছু পাঠানোর ক্ষমতা মিশরের কত কম। আর এই মিশরই তো গত ১৭ বছর ধরে গাজায় অবরোধ বজায় রাখতে ইসরায়েলিদের সাহায্য করছে।

সেই শ্বাসরুদ্ধকর নিন্দাবাদের সাথে, বাধ্যতামূলক ভোজ ও ছবি তোলার সুযোগের মাধ্যমে আরব ও মুসলিম বিশ্বের আরেকটি সফল সমাবেশ সম্পূর্ণ হয়।

আশ্চর্যের কিছু নেই যে, ফিলিস্তিনিরা ও তাদের সমর্থকেরা এই করুণ আলোচনায় ক্ষুব্ধ। নেতাদের অগ্নিগর্ভ বক্তৃতার সাথে এই ধরনের আলোচনার কোনো মিলই নেই; তা সে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন জানাতে হোক বা বর্বরতা বন্ধে পশ্চিমাদের চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক।

এটা এমন নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইসরায়েল ও তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদের কিছু করতে পারবে না। আরব বা মুসলিম দেশগুলো বিশ্বের জ্বালানি তেলের মজুতের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এক সৌদি আরব ও ইরাকই তো দৈনিক তেল রপ্তানির ২১ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি তো এই দেশ দুটিকে প্রচুর বাড়তি সুবিধা দেয়।

তবে এটি কেবল জ্বালানি তেল নয়। মিশরের মালিকানাধীন সুয়েজ খাল বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। কায়রোতে নিউজিল্যান্ড দূতাবাসের এক হিসাব অনুযায়ী, সুয়েজ খালের মাধ্যমে বছরে ১ লাখ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন হয়, যা বিশ্বব্যাপী সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ। ২০২১ সালে একটি দুর্ঘটনার কারণে সুয়েজ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহন মাত্র ছয় দিনের জন্য বন্ধ ছিল। লন্ডন-ভিত্তিক লয়েডের তথ্য অনুসারে, এই একটি কারণে বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রতিদিন মূল্য দিতে হয়েছিল প্রায় ৯৬০ কোটি ডলার করে।

কারণ, তাঁরা চান না। বৈশ্বিক পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অংশ হিসেবে তাঁদের সাফল্য নির্ভর করে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও লাভের ওপর। এই কারণেই তাঁদের বেশির ভাগই আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধ, যে দেশটি কিনা বর্তমানে বিশ্ব মঞ্চে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়। বিশ্বের অন্যান্য শাসক শ্রেণির মতো, আরব ও মুসলিম নেতারা জাতিগত, জাতীয় বা ধর্মীয় সংহতি বা পরিচয়ে বিশ্বাস করেন না। তাঁদের একমাত্র অভিষ্ট নিজেদের মুনাফা ও ক্ষমতা। আর এর অর্থ যদি আমেরিকা ও ইসরায়েলের সাথে মিত্রতা করা হয়, তবে তাই হোক।

পাশাপাশি স্থানীয় দারিদ্র্য ও অসাম্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃত্ব দেন তাঁরা, যেখানে নারী ও বিভিন্ন সংখ্যালঘুরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কেন সৌদি আরবের যুবরাজ বা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনিদের নিপীড়নের কথা চিন্তা করবেন? তাঁরাই যেখানে নিজ দেশে শিয়া ও কুর্দি সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসভাবে নিপীড়ন করেন? এটি ইরানের ইসলামি একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। আমেরিকা ও ইসরায়েলের সাথে তাদের অতিমাত্রায় শত্রুতা সত্ত্বেও প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মবাদীরা কেন ফিলিস্তিনকে রক্ষার জন্য তাদের ব্যাপক দেশীয় ও আঞ্চলিক শক্তি প্রয়োগের ঝুঁকি নেবে? এই শাসনব্যবস্থাগুলো মাঝে মাঝে ফিলিস্তিনিদের নিপীড়নের কথা বলতে পারে নিজেদের সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য। কিন্তু তারা কখনই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবে না।

অবশ্যই, তারা এ ব্যাপারে একা নয়। পশ্চিমা নেতারা কখনোই জার্মানিতে নাৎসি গণহত্যা বা রুয়ান্ডা ও আর্মেনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে কিছুই করেনি। বরং এটাকে তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী অ্যাজেন্ডা পূরণে কাজে লাগিয়েছে। আসলে অভিন্ন ধারাটি হলো—শাসক শ্রেণি কখনোই ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে না।

তবে হ্যাঁ, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমরা আরব ও মুসলিম নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারি। কিন্তু এতে অবাক হওয়া উচিত না। তাঁদের এই নিষ্ক্রিয়তা খারাপ নীতির ফল নয়, বরং শাসক হিসেবে শোষণ, প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধ বিষয়ে প্রচলিত শক্তির অংশ হওয়ার কারণে। সত্যিকার অর্থে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামের সাথে অর্থপূর্ণ একাত্মতা প্রদর্শনের জন্য আরব ও মুসলিম বিশ্বকে প্রথমে নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বার্থান্বেষী পুঁজিবাদী অভিজাতদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।

লেখক: মার্ক্সিস্ট লেফট রিভিউ পত্রিকার সম্পাদক (লেখাটি অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ওয়েবসাইট রেডফ্লাগের সৌজন্যে প্রকাশিত হলো)

নিউজটি শেয়ার করুন

ফিলিস্তিনের ব্যাপারে আরব দেশগুলো কেন বিকারহীন?

আপডেট সময় : ০৫:১৩:৫৮ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৩

মধ্যপ্রাচ্যে ফিলিস্তিনের সমর্থকেরা দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে আরব নেতাদের কঠোর অবস্থান নিতে ব্যর্থতার জন্য গভীর দুঃখবোধের মধ্যে আছেন। কিন্তু এটা কেন হচ্ছে, তা বোঝা সহজ।

যতবারই ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ওপর নির্মম নিপীড়ন চালায়, ততবারই তার পশ্চিমা মিত্ররা মাঠে নেমে পড়ে। অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও আমেরিকার মতো দেশের নেতারা ইসরায়েলের সমর্থনে আবেগপূর্ণ বার্তা পাঠান। সংবাদমাধ্যমও বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে যায়। বর্ণবাদী প্রশস্তি রচনা করে তারা ইসরায়েলের অপরাধকে ন্যায্যতা দেয়। এবং ইসরায়েল যে নিপীড়ক ও আগ্রাসী, তা পাল্টে ফেলতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে। ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে গণহত্যায় সহায়তার জন্য বিলিয়ন ডলার মূল্যের জরুরি সহায়তা পার্লামেন্টের মাধ্যমে দ্রুত অনুমোদন দেওয়া হয়।

ফিলিস্তিনিদের নিধনে ইসরায়েলকে এসব সমর্থন দেওয়া হলেও আরব ও মুসলিম দেশের সরকারগুলো মুখে বুড়ো আঙুল দিয়ে বসে থাকে। আরব লীগ ও অর্গানাইজেশন ফর ইসলামিক কো-অপারেশনের (ওআইসি) সাম্প্রতিক বিশেষ যৌথ সম্মেলনে এই শোচনীয় নিষ্ক্রিয়তা আরও প্রকট হয়েছে। গাজায় গণহত্যার প্রতিক্রিয়ার মধ্যেই একটি জরুরি ও বিশেষ সভার নামে আয়োজিত সম্মেলনটি ছিল মাত্র একদিনের জন্য। অনেক চেঁচামেচি ও নানা অঙ্গভঙ্গির পর আরব ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর একমাত্র দৃঢ় দাবি ছিল ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব একটি আন্তর্জাতিক শান্তি সম্মেলন আহ্বান করা’। এতে যেন ইসরায়েলিদের হাঁটু কাঁপতে শুরু করবে।

বলা ভালো, এর চেয়ে অনেক বেশি প্রত্যাশা ছিল। বরং তারচেয়ে সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী নেতারা ধৈর্য সহকারে গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা শেষ করার জন্য অপেক্ষা করছেন বললে ভুল বলা হবে না। তাঁরা গাজায় সহায়তা পাঠানোর জন্য মিশরের উদ্যোগকে সমর্থন করেছেন। এটি শুনতে ভালোই। যদি অবশ্য আপনি না জানেন, রাফা সীমান্ত দিয়ে গাজায় কিছু পাঠানোর ক্ষমতা মিশরের কত কম। আর এই মিশরই তো গত ১৭ বছর ধরে গাজায় অবরোধ বজায় রাখতে ইসরায়েলিদের সাহায্য করছে।

সেই শ্বাসরুদ্ধকর নিন্দাবাদের সাথে, বাধ্যতামূলক ভোজ ও ছবি তোলার সুযোগের মাধ্যমে আরব ও মুসলিম বিশ্বের আরেকটি সফল সমাবেশ সম্পূর্ণ হয়।

আশ্চর্যের কিছু নেই যে, ফিলিস্তিনিরা ও তাদের সমর্থকেরা এই করুণ আলোচনায় ক্ষুব্ধ। নেতাদের অগ্নিগর্ভ বক্তৃতার সাথে এই ধরনের আলোচনার কোনো মিলই নেই; তা সে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি সমর্থন জানাতে হোক বা বর্বরতা বন্ধে পশ্চিমাদের চাপ দেওয়ার ক্ষেত্রেই হোক।

এটা এমন নয় যে, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ইসরায়েল ও তার সাম্রাজ্যবাদী মিত্রদের কিছু করতে পারবে না। আরব বা মুসলিম দেশগুলো বিশ্বের জ্বালানি তেলের মজুতের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে। এক সৌদি আরব ও ইরাকই তো দৈনিক তেল রপ্তানির ২১ শতাংশের বেশি নিয়ন্ত্রণ করে। এটি তো এই দেশ দুটিকে প্রচুর বাড়তি সুবিধা দেয়।

তবে এটি কেবল জ্বালানি তেল নয়। মিশরের মালিকানাধীন সুয়েজ খাল বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য অত্যাবশ্যক। কায়রোতে নিউজিল্যান্ড দূতাবাসের এক হিসাব অনুযায়ী, সুয়েজ খালের মাধ্যমে বছরে ১ লাখ কোটি ডলারের পণ্য পরিবহন হয়, যা বিশ্বব্যাপী সমুদ্র বাণিজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ। ২০২১ সালে একটি দুর্ঘটনার কারণে সুয়েজ খাল দিয়ে পণ্য পরিবহন মাত্র ছয় দিনের জন্য বন্ধ ছিল। লন্ডন-ভিত্তিক লয়েডের তথ্য অনুসারে, এই একটি কারণে বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রতিদিন মূল্য দিতে হয়েছিল প্রায় ৯৬০ কোটি ডলার করে।

কারণ, তাঁরা চান না। বৈশ্বিক পুঁজিবাদ ও সাম্রাজ্যবাদের অংশ হিসেবে তাঁদের সাফল্য নির্ভর করে সামগ্রিক স্থিতিশীলতা ও লাভের ওপর। এই কারণেই তাঁদের বেশির ভাগই আমেরিকার সাথে জোটবদ্ধ, যে দেশটি কিনা বর্তমানে বিশ্ব মঞ্চে সবচেয়ে শক্তিশালী খেলোয়াড়। বিশ্বের অন্যান্য শাসক শ্রেণির মতো, আরব ও মুসলিম নেতারা জাতিগত, জাতীয় বা ধর্মীয় সংহতি বা পরিচয়ে বিশ্বাস করেন না। তাঁদের একমাত্র অভিষ্ট নিজেদের মুনাফা ও ক্ষমতা। আর এর অর্থ যদি আমেরিকা ও ইসরায়েলের সাথে মিত্রতা করা হয়, তবে তাই হোক।

পাশাপাশি স্থানীয় দারিদ্র্য ও অসাম্যের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর নেতৃত্ব দেন তাঁরা, যেখানে নারী ও বিভিন্ন সংখ্যালঘুরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। কেন সৌদি আরবের যুবরাজ বা তুরস্কের প্রেসিডেন্ট ফিলিস্তিনিদের নিপীড়নের কথা চিন্তা করবেন? তাঁরাই যেখানে নিজ দেশে শিয়া ও কুর্দি সংখ্যালঘুদের ওপর সহিংসভাবে নিপীড়ন করেন? এটি ইরানের ইসলামি একনায়কতন্ত্রের ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য। আমেরিকা ও ইসরায়েলের সাথে তাদের অতিমাত্রায় শত্রুতা সত্ত্বেও প্রতিক্রিয়াশীল ধর্মবাদীরা কেন ফিলিস্তিনকে রক্ষার জন্য তাদের ব্যাপক দেশীয় ও আঞ্চলিক শক্তি প্রয়োগের ঝুঁকি নেবে? এই শাসনব্যবস্থাগুলো মাঝে মাঝে ফিলিস্তিনিদের নিপীড়নের কথা বলতে পারে নিজেদের সস্তা জনপ্রিয়তার জন্য। কিন্তু তারা কখনই এ ব্যাপারে শেষ কথা বলবে না।

অবশ্যই, তারা এ ব্যাপারে একা নয়। পশ্চিমা নেতারা কখনোই জার্মানিতে নাৎসি গণহত্যা বা রুয়ান্ডা ও আর্মেনিয়ায় গণহত্যা প্রতিরোধে কিছুই করেনি। বরং এটাকে তারা তাদের সাম্রাজ্যবাদী অ্যাজেন্ডা পূরণে কাজে লাগিয়েছে। আসলে অভিন্ন ধারাটি হলো—শাসক শ্রেণি কখনোই ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করে না।

তবে হ্যাঁ, ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানাতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে আমরা আরব ও মুসলিম নেতাদের ওপর ক্ষুব্ধ হতে পারি। কিন্তু এতে অবাক হওয়া উচিত না। তাঁদের এই নিষ্ক্রিয়তা খারাপ নীতির ফল নয়, বরং শাসক হিসেবে শোষণ, প্রতিযোগিতা ও যুদ্ধ বিষয়ে প্রচলিত শক্তির অংশ হওয়ার কারণে। সত্যিকার অর্থে ফিলিস্তিনিদের মুক্তির সংগ্রামের সাথে অর্থপূর্ণ একাত্মতা প্রদর্শনের জন্য আরব ও মুসলিম বিশ্বকে প্রথমে নিজেকে দুর্নীতিগ্রস্ত ও স্বার্থান্বেষী পুঁজিবাদী অভিজাতদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে।

লেখক: মার্ক্সিস্ট লেফট রিভিউ পত্রিকার সম্পাদক (লেখাটি অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক ওয়েবসাইট রেডফ্লাগের সৌজন্যে প্রকাশিত হলো)