০৬:০৪ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কলকাতায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন

মহান বিজয় দিবস পালন করল ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা। ৫৩তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল নানা অনুষ্ঠান।

বিজয় দিবসের দিন বিশেষ অতিথি হয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ৭১ জনের একটি প্রতিনিধি দল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারাও।

সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন এয়ার ভাইস মার্শাল রাহুল ভাসিন, ন্যাভাল অফিসার-ইন-চার্জ (পশ্চিমবঙ্গ) পি সশী কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল,(আইপিএস), ভারতের সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব:) অরূপ রাহা, ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মোঃ হোসেন আলী মুর্শেদ, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী বিপি (অব:) প্রমুখ। সবশেষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটাটেন্ট জেনারেল আর.পি কলিতা।

এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন।

পরে গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন ‘১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কিভাবে এই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা আপনারা সকলেই জানেন। এরপর ১৪ দিন ধরে সেই সর্বাত্মক যুদ্ধ চলেছিল এবং তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সর্বতোভাবে সহায়তা দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এই যুদ্ধে প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।

এই যুদ্ধে জয়ের ফলে কেবলমাত্র বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মই নেয়নি বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন করেছে। এটাও সকলেরই জানা যে ১৯৭১ এর যুদ্ধে একদম সামনের সারিতে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, আর সেই কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিজয় দিবস একটা আলাদা গর্বের জায়গা করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুধু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগসূত্রই নেই, আমার মনে হয় বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম প্রক্রিয়া এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার মধ্যে মানসিক যোগসূত্র রয়েছে। আর সেই কারণে আমরা সেই বন্ধন ও বন্ধুত্ব ভাগাভাগি করি।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী বিপি (অব:) বলেন ‘একাত্তরের যুদ্ধে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। সেই যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়েছেন। উভয়ের রক্ত মিশে গিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই যুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে পরাজিত করা, আর আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন করা। আমাদের মনে হয় আমরা উভয় দেশই নিজেদের জায়গা থেকে জয়লাভ করেছি।’

এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন হচ্ছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনেও। এ উপলক্ষে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের শুরু হয় সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। পতাকা উত্তোলন করেন উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। পরে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিব চিরঞ্জীব’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এরপরে বাংলাদেশ গ্যালারিতে শুরু হয় বাণী পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে।

শেখ হাসিনাকে ফেরত চাওয়া হবে: আইন উপদেষ্টা

কলকাতায় মহান বিজয় দিবস উদযাপন

আপডেট : ০৯:৩১:৩৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৩

মহান বিজয় দিবস পালন করল ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখা। ৫৩তম মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল থেকে সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় সদর দপ্তর কলকাতার ফোর্ট উইলিয়ামে ছিল নানা অনুষ্ঠান।

বিজয় দিবসের দিন বিশেষ অতিথি হয়ে ফোর্ট উইলিয়ামে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা এবং সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং তাদের পরিজন মিলিয়ে ৭১ জনের একটি প্রতিনিধি দল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ভারতের সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিমান বাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় শাখার শীর্ষ কর্মকর্তারাও।

সকালে ফোর্ট উইলিয়ামের মূল ফটকের কাছে অবস্থিত বিজয় স্মারক স্মৃতিস্তম্ভে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন করেন এয়ার ভাইস মার্শাল রাহুল ভাসিন, ন্যাভাল অফিসার-ইন-চার্জ (পশ্চিমবঙ্গ) পি সশী কুমার, কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল,(আইপিএস), ভারতের সাবেক বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব:) অরূপ রাহা, ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল মোঃ হোসেন আলী মুর্শেদ, মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী বিপি (অব:) প্রমুখ। সবশেষে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করেন সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান লেফটাটেন্ট জেনারেল আর.পি কলিতা।

এরপর সেনাবাহিনীর মাঠে আয়োজিত একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ সম্বলিত একটি প্রদর্শনী ঘুরে দেখেন বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধা প্রতিনিধি দলটি। সেদিনকার সেই স্মৃতিবিজড়িত দৃশ্য দেখে অনেকেই আবেগ তাড়িত হয়ে পড়েন।

পরে গণমাধ্যমের কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পূর্বাঞ্চলীয় সেনাপ্রধান বাংলাদেশ থেকে আগত মুক্তিযোদ্ধা, ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্য এবং গণমাধ্যমের কর্মীদের উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন ‘১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর কিভাবে এই সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা আপনারা সকলেই জানেন। এরপর ১৪ দিন ধরে সেই সর্বাত্মক যুদ্ধ চলেছিল এবং তাতে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সর্বতোভাবে সহায়তা দিয়েছিল মুক্তিযোদ্ধারা। এই যুদ্ধে প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা আত্মসমর্পণ করে।

এই যুদ্ধে জয়ের ফলে কেবলমাত্র বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্মই নেয়নি বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন করেছে। এটাও সকলেরই জানা যে ১৯৭১ এর যুদ্ধে একদম সামনের সারিতে ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনী, আর সেই কারণে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ইতিহাসে বিজয় দিবস একটা আলাদা গর্বের জায়গা করে নিয়েছে।’

তিনি বলেন ‘ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শুধু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক যোগসূত্রই নেই, আমার মনে হয় বাংলাদেশ নামক একটি নতুন রাষ্ট্রের জন্ম প্রক্রিয়া এবং স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করার মধ্যে মানসিক যোগসূত্র রয়েছে। আর সেই কারণে আমরা সেই বন্ধন ও বন্ধুত্ব ভাগাভাগি করি।

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ মোমেন উল্লাহ পাটওয়ারী বিপি (অব:) বলেন ‘একাত্তরের যুদ্ধে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করেছি। সেই যুদ্ধে বহু মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়েছেন। উভয়ের রক্ত মিশে গিয়ে আমরা আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি। সেই যুদ্ধে ভারতের উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে পরাজিত করা, আর আমাদের উদ্দেশ্য ছিল স্বাধীনতা অর্জন করা। আমাদের মনে হয় আমরা উভয় দেশই নিজেদের জায়গা থেকে জয়লাভ করেছি।’

এদিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় মহান বিজয় দিবস পালন হচ্ছে কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনেও। এ উপলক্ষে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের শুরু হয় সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে। পতাকা উত্তোলন করেন উপ-হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস। পরে উপ-হাইকমিশন প্রাঙ্গণে বঙ্গবন্ধুর ‘মুজিব চিরঞ্জীব’ ভাস্কর্যে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করা হয়। এরপরে বাংলাদেশ গ্যালারিতে শুরু হয় বাণী পাঠ ও আলোচনা অনুষ্ঠান। বিকেলেও উদ্বোধনী অনুষ্ঠান এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান রাখা হয়েছে।