উত্তরের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ
- আপডেট সময় : ০৫:৩৪:১৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪২২ বার পড়া হয়েছে
পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে কাঁপছে উত্তরের জনপদ। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে রয়েছেন খেটে খাওয়া ছিন্নমূল মানুষ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কোথাও সূর্যের দেখা মিললেও কমছে না শীতের দাপট।
উত্তরের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিচ্ছে শীতজনিত নানা রোগ। হাসপাতালে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা। পঞ্চগড়ে ঘনকুয়াশার সঙ্গে টানা তিনদিন ধরে চলছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। শনিবার সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। এরপর থেকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ থেকে ১০ এর মধ্যেই ওঠানামা করছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ জানান, আজ সোমবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শনিবার থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় ঘনকুয়াশা। পরদিন সকাল পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকে এলাকা।
এদিকে শীতের প্রকোপ বাড়তে শুরু করায় জেলার হাসপাতালগুলোতে দিনদিন শীতজনিত রোগে শিশু এবং বয়স্ক মানুষ আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছে। জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, টানা তীব্র শীতে গবাদি পশুর নানা রোগ বালাই দেখা দিয়েছে। গরু ছাগলের সর্দি, ডাইরিয়াসহ খুরা রোগ দেখা দিয়েছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দরিদ্র শীতার্তদের জন্য সামান্য পরিসরে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। নতুন করে শীতবস্ত্র বরাদ্দের জন্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মন্ত্রনালয়ে বার্তা পাঠানো হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ডিসেম্বর এবং জানুয়ারি এই দুই মাস পঞ্চগড়ের মানুষের জীবনে নেমে আসে অর্বননীয় দুর্ভোগ। তীব্র শীতে মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ে। আগামী দুমাস শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়াতে সরকারিভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।
ইতোমধ্যে হিমালয় থেকে ধেঁয়ে আসতে শুরু করেছে ঠান্ডা বাতাস। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সূয্যের হালকা তাপ থাকছে। তারপর হিমালয় থেকে বাতাস বইতে শুরু হলে সন্ধ্যা হতেই হাটবাজারসহ রাস্তাঘাট হয়ে পড়ছে জনশুন্য। মানুষজন হয়ে পড়ছে ঘরমুখী। বিশেষ করে এই অঞ্চলের সমতলের চা বাগানের চা শ্রমিকসহ নদী কেন্দ্রীক পাথর শ্রমিকরা নদীর ঠান্ডা জলে নামতে না পেরে তাদের জীবন জীবিকায় টান পড়েছে। জীবিকার তাগিদে নদী পাড়ে বসে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষা করে অবশেষে ঠান্ডা পানিতে নেমে পাথর সংগ্রহ করছে। জীবন জীবিকার স্বার্থে শীত বস্ত্রের সঙ্গে শীতার্ত মানুষের মাঝে সরকারি খাদ্য সহায়তা জরুরি হয়ে পড়েছে।
তবে সকাল ৯টার পর সূর্যের আলো ছড়ালে স্বস্তি ফেরে জনজীবনে। কনকনে শীতে দুঃস্থ ও খেটে খাওয়া মানুষের মধ্যে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে সকালে কাজে যোগ কৃষি শ্রমিক, চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে নিম্ন আয়ের মানুষদের দুর্ভোগ বেড়েছে।
চা শ্রমিক ও পাথর শ্রমিকরা জানান, কুয়াশা নেই। তবে কনকনে শীত। ভোরে প্রচন্ড হিমশীতের মধ্যেই তারা চা বাগানে পাতা তুলতে এসে হাত-পা অবশ হয়ে আসছে। কিন্তু কী করব, জীবিকার তাগিদে কাজ করতে হচ্ছে। একই কথা বলেন নদীতে পাথর তুলতে যাওয়া শ্রমিকরা।
উপজেলা সদরের শিংপাড়া এলাকা কৃষি শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, রাতভর বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির পড়েছে। সকাল ৮টা পর্যন্ত কনকনে শীত ছিল। হাত-পা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে যায়। সকালে কাজ করতে গিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে আসছিল।
এদিকে, ঠাকুরগাঁওয়ে শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে চারদিক। উত্তরের হিমেল বাতাসে রাতে বাড়ছে শীতের অনুভূতি। ঘন কুয়াশার কারণে সকালে সড়কে চলা যানবাহনগুলোকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
গত তিনদিন ধরে তাপমাত্রার পারদ ১২ থেকে ১৬ ডিগ্রির ঘরে ওঠানামা করলেও সোমবার (১৮ ডিসেম্বর) জেলার কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে সকাল ৬টায় ঠাকুরগাঁওয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সকাল থেকে জেলা শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল ৮টা পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়ে আছে জেলা শহরের চারপাশ। এ সময় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন যানবাহনের উপস্থিতি কম দেখা গেছে। এর মাঝে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে কিছু মানুষকে বিভিন্ন যানবাহনের হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে দেখা গেছে।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত দেশের উত্তরাঞ্চল এবং নদী অববাহিকায় মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা এবং দেশের অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারী ধরনের কুয়াশা পরতে পারে। সেইসাথে সারাদেশে রাত ও দিনের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকবে।