নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হতে আর মাত্র দুই সপ্তাহ বাকি। অথচ মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ের প্রায় ৫ কোটি পাঠ্যবই এখনও ছাপা হয়নি। পান্ডুলিপি না পাওয়ায় অষ্টম ও নবম শ্রেণির চারটি পাঠ্যবই ছাপা শুরুই হয়নি। এছাড়া বিএনপি জোটের হরতাল অবরোধেরর কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে পাঠ্যপুস্তক পরিবহন। প্রকাশকরা বলছেন, ছাপা শেষ হলেও অনন্ত ৭ কোটি বই জানুয়ারির আগে উপজেলা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে কিনা এ নিয়ে শংকা রয়েছে। অনেকেই আশঙ্কা করছেন, আগামী ফেব্রুয়ারির আগে আসন্ন শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যবই শিক্ষার্থীরা পাবে না। তবে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, পাঠ্যবই নিয়ে তারা কোনো শঙ্কা দেখছে না। নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই পেয়ে যাবে। অবশ্য ‘নির্ধারিত সময়’ কখন তারা সেটি বলেননি।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) তথ্যমতে, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৯১ শতাংশ, সপ্তম শ্রেণিতে ৭৮ শতাংশ বই ছাপা শেষ হয়েছে। প্রাথমিক শ্রেণির অধিকাংশ বইই ছাপা ও সরাবরাহ প্রায় শেষ। জানতে চাইলে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. ফরহাদুল ইসলাম বলেন, পাঠ্যবই নির্ধারিত সময়েই চলে যাবে। এ নিয়ে কোনো চিন্তা নেই। কিন্তু বছর শেষ হতে আর কিছুদিন বাকি, এই সময়ের মধ্যে সব বই ছাপা শেষ হবে কী করে- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বলেছি তো, পাঠ্যবই নিয়ে চিন্তা নেই। চিন্তা অন্য জায়গায়। সেই অন্য জায়গা কোনটি তা অবশ্য বলেননি তিনি। প্রেসে দেয়ার পর তুলে এনে শিক্ষা উপমন্ত্রীর পাঠ্যবই সংশোধন সম্পর্কে তিনি বলেন, স্যার এটি করেছেন। আর তিনি দেখায় ভালো হয়েছে বলে জানান চেয়ারম্যান।
২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাক্-প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বিতরণ করা হবে ৩২কোটি ৩৮লাখের বেশি বই। এরমধ্যে প্রাথমিকে বই ৯কোটি ৩৮ লাখ আর মাধ্যমিক স্তরের বই ২৩কোটির কিছু বেশি। চলতি শিক্ষাবর্ষে সব শিক্ষার্থীর হাতে বই পেতে এপ্রিল পর্যন্ত সময় লেগেছিল। এবারও তা ফেব্রুয়ারি নাগাদ গড়াবে বলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে অষ্টম ও নবম শ্রেণিতে পাঠদান শুরু হচ্ছে নতুন শিক্ষাক্রমে। এই দুই শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ কোটির বেশি বই ছাপাতে হবে। এর মধ্যে অষ্টম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের কয়েকটি বই ছাপানোর কাজ শুরু হলেও নবম শ্রেণির প্রায় ৯৫ ভাগ বই মুদ্রণের কাজ শুরুই হয়নি। এছাড়া নবম শ্রেণির বইয়ের ফর্মা অনেক বড়। মাধ্যমিকের তিন শ্রেণির মোট বইয়ের প্রায় সমান নবম শ্রেণির বই। তাই এই বই ছাপানো অনেক সময়ের ব্যাপার। এবার প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপাতে হবে প্রায় ৩১ কোটি পাঠ্যবই। এখনো পর্যন্ত সব শ্রেণির বইয়ের মুদ্রণচুক্তি সম্পন্ন করতে পারেনি জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।
দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ প্রদান- দুইই এ বছর দেরিতে হয়েছে। তারওপর নতুন শিক্ষাক্রমে আগামী বছর যুক্ত হতে চলেছে অষ্টম ও নবম শ্রেনীর বই। প্রকাশকদের সাথে চুক্তি সই হয়েছে ৫ই ডিসেম্বর। এখনও নবম শ্রেনীর সাধারণ বিজ্ঞান (অনুসন্ধানী পাঠ), সাধারণ বিজ্ঞান (অনুশীলন) এবং ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান আর অষ্টম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ের পান্ডুলিপি ছাপার কাজ শুরুই হয়নি। এমনটাই জানালেন বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম।
নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই সব বই ছাপানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। পহেলা জানুয়ারি সব শিক্ষার্থী নতুন বই পাবে। আর ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই শিক্ষার্থীদের হাতে থাকবে। এনসিটিবি সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের তিন কোটি ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৬৩০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য প্রায় ৩১ কোটি বই ছাপার কাজ করছে এনসিটিবি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের মোট বই ১৮ কোটি ৬১ লাখ ১ হাজার ২০৬টি। আর প্রাথমিক স্তরের মোট বই প্রায় ৯ কোটি ৭৫ লাখ। প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য ছাপা হচ্ছে ৫ কোটি ৩৮ লাখ ৩ হাজার ৪২৩ কপি বই। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণির বইয়ের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৬ লাখ ১ হাজার ২৭৪টি। প্রাক-প্রাথমিকের জন্য ৬১ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭৮ কপি বই ছাপা হবে। এছাড়া ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৬ কোটি ৪৫ লাখ ৪৮ হাজার ৩০৮ কপি, সপ্তম শ্রেণির ৪ কোটি ৪৫ লাখ ৫৭ হাজার কপি, অষ্টম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ৩৪ লাখ ৮৪ হাজার ২৭১ কপি এবং নবম শ্রেণির জন্য ৫ কোটি ছয় লাখ ৮৪ হাজার ৫৭৩ কপি বই ছাপা হচ্ছে।
বাংলাদেশ মুদ্রণ শিল্প সমিতি সাবেক সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম জানালেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে আগামী শিক্ষাবর্ষের প্রাথমিকের বই ছাপার কাজ আগেভাগে শেষ হলেও দুশ্চিন্তার কারণ কাগজের অতি নিম্নমান।
অবশ্য জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড এনসিটিবি এর পাঠ্যক্রম সদস্য মশিউজ্জামান বলেন পান্ডুলিপি চূড়ান্ত করতে কিছুটা দেরি হলেও নির্ধারিত সময়েই নতুন বই হাতে পাবে সব শিক্ষার্থী।
বিএনপি জোটের হরতাল অবরোধে উপজেলা পর্যায়ে পাঠ্যবই পরিবহন বিঘ্নিত হওয়ার আশংকাও অনিশ্চয়তা বাড়াচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।