রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনে আগুন লাগানোর ঘটনায় সরকারের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ থেকে আসার সময় তেজগাঁও এলাকায় ট্রেনে আগুন লাগানো হয়েছে। একই ট্রেনে কয়েক দিন আগে স্লিপার খুলে ফেলা হয়েছিল। সেখানে একজন মারা গিয়েছিল। একই ট্রেন সেই ট্রেনের নিরাপত্তা কোথায়? কেন আজ চারজন মানুষ পুড়ে মারা গেল? এটার সাথে রাষ্ট্রক্ষমতার নিশ্চিত সম্পর্ক আছে।
তদন্ত ছাড়াই ট্রেন পোড়ানোর ঘটনায় আন্দোলনকারীদের দোষারোপ করায় ডিএমপি কমিশনারের বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন,'পুলিশ কমিশনার বলেছেন এটার সাথে আন্দোলনকারীদের সম্পৃক্ততা আছে। সরকার সব জায়গায় ক্রীতদাস বসিয়ে রেখেছে। তারা তো একই কথা বলবে। শেখ হাসিনার সুরে কথা বলছেন। আপনি তো এখনও তদন্ত শুরুই করেননি তার আগে বলে দিলেন। অনেকগুলো সিমটম থেকে বুঝা যায় এটার সাথে সরকারের সংশ্লিষ্টতা আছে এটা আমরা মনে করি এবং জনগণ মনে করে। একই ট্রেন বারবার আক্রান্ত হচ্ছে আর সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। অবলীলায় এতগুলো প্রাণ ঝরে গেল। এগুলো থেকে কি মনে হয় না এই ঘটনার সাথে সরকারের সম্পৃক্ততা আছে। কমিশনার সাহেব আপনি তদন্ত না করেই বলে দিলেন অবরোধ হরতালকারীরা এ কাজ করেছে। এই অবরোধ হরতাল কারীদের উপর দোষ চাপানোর জন্যই এটা একটা পরিকল্পনা। সরকার এখন জঙ্গি নাশকতার আশঙ্কা করবে এটা আমরা প্রতিদিনই বলে আসছি। এবং সেটা আজ বাস্তবে প্রতিপালিত হচ্ছে রেলের ঘটনা নিয়ে।
মঙ্গলবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকালে ভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী বলেন,'এক গণবিরোধী ও মানবতাবিরোধী সরকার রাষ্ট্র ক্ষমতা আকড়ে ধরে আছে। তারা জনগণের দাবি আকাঙ্ক্ষা কর্ণপাত করেন না। তারা যে জোড় করে ক্ষমতা ধরে আছে এটা তারা মানতে চায় না বলেই জনগণের উপর ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।
বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন,' আবারো সরকার একতরফা নির্বাচন করতে চাচ্ছে। অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দেশ-বিদেশ থেকে অনেকে আহ্বান জানিয়েছেন এবং অনুরোধ জানিয়েছেন কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা আওয়ামী লীগ নেতারা প্রধানমন্ত্রীসহ মুখ দিয়ে একবারও বের করে না। উন্নয়নের কথা বলে পদ্মা সেতুর কথা বলে কথার ফুলঝুরি ঝরে কিন্তু অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা বলে না। দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী দেশের জনগণ অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এই ক্ষমতা জনগণের কাছে যাবে তারা জনগণের কাছে ক্ষমতা দিতে চায় না।
রিজভী বলেন,'রাষ্ট্র চালাতে গেলে কিছু আইন আছে সেই আইন অনুযায়ী রাষ্ট্র চালাতে হয় কিন্তু এটা তিনি (শেখ হাসিনা )কখনোই গুরুত্ব দেন না। দীর্ঘ দেড় দশক ধরে এটাকে তিনি কখনো পাত্তা দিচ্ছেন না। মধ্যযুগীয় রাজা-বাদশারা যতটুকু আইন মানতেন শেখ হাসিনা সেই অন্ধকার যুগ অতিক্রম করে আরো গভীর নিবিড় অন্ধকারের মধ্যে চলে গেছে। তার অত্যন্ত ক্ষমতার দরকার। তিনি নিজেই বলেছে আমার আরও ক্ষমতা দরকার। এই আরো ক্ষমতা দরকার বলেই তিনি সরকারি সব প্রতিষ্ঠান ভেঙ্গে চুরমার করে ফেলেছে। নির্বাচন কমিশন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন সবাই তার কৃতি দাস। সবাইকে তার কৃতিদাস বানিয়ে জনগণের উপর ছুরি ঘুরাচ্ছে। এই বিপন্ন সময় এদেশের জনগণ এর আগে দেখেছি কিনা আমার জানা নেই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব বলেন,' একতরফা নির্বাচন ডামি নির্বাচনের দিকে তিনি শেখ হাসিনা এগোচ্ছেন। আর এই জন্যেই যত প্রকার অন্যায় অবিচার করা দরকার একটার পর একটা তিনি করে যাচ্ছেন।
রিজভী আরও বলেন, 'গণমাধ্যমে এসেছে যারা নৌকায় ভোট দিবে না তাদেরকে এলাকায় থাকতে দেওয়া হবে না। কি অনাচার এর মধ্য দিয়ে দেশ চলছে। শেখ হাসিনার মনবাসনা পূরণ করার জন্য তিনি সবাইকে লেলিয়ে দিয়েছে। এই লেলিয়ে দিয়ে দিতে গিয়ে কোন মানবতা তিনি রাখছেন না। এই মানবতা হরণকারী কারা আমরা জানি না। এই মানবতার শত্রু কারা? এই নাশকতা কারি কারা?
তিনি বলেন,'একটা পরিপত্র দেখলাম পুলিশের পক্ষ থেকে হেলথের ডিজিকে দেওয়া হয়েছে যে ডাক্তাররা যেন স্ট্যান্ডবাই থাকে এটা কেন কিসের জন্য? এটাতো সাধারণ জনগণের মনে সন্দেহ জাগছে।
রিজভী বলেন,'শেখ হাসিনা ভাবছে রাশিয়া ও ভারত আমার পক্ষে আছে আমার আবার কিসের ভোট জনগণ লাগবে। বাংলাদেশের গণতন্ত্র থাকুক আর না থাকুক এটা ভারতের কিছু যায় আসে না এবং রাশিয়ার তো মোটেই যায় আসে না। কারণ তাদের নিজের দেশেই তো গণতন্ত্রের বিশাল ঘাটতি। ভারত একটি গণতান্ত্রিক দেশ কিন্তু তারা অন্য দেশে গণতন্ত্র চাচ্ছে না। ভারত থেকে যে কজন কর্মকর্তা এসেছেন বা এসেছিলেন তারা সবাই একজন গণতন্ত্রহীন জনসমর্থহীন সরকারকে সমর্থন দিচ্ছেন। এটা বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত হতবাক।
দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হামলা মামলার বিবরণ তুলে ধরে তিনি আরও বলেন,'গত ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের মোট গ্রেফতার ২২৫ জনের অধীক নেতাকর্মী মোট মামলা ৮টি মোট আসামি ৭৭৫ জনের অধীক নেতাকর্মী মোট আহত ৬০ জনের অধীক নেতাকর্মী।