ভীতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বন্ধ করতে চায় বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী
- আপডেট সময় : ০৭:৪৬:০৭ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪৮৯ বার পড়া হয়েছে
আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসলে জনগণের উন্নয়ন হয়। আগামী নির্বাচনে মানুষ নৌকায় ভোট দিলে পুরো দেশ উন্নত হবে। যারা অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত, মানুষ হত্যা করে তাদের ক্ষমা নেই। মানুষ মেরে ভীতি সৃষ্টি করে নির্বাচন বন্ধ করতে চায় বিএনপি।
আজ বুধবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.) ও হযরত শাহপরান (রহ.) এর মাজার জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপাকালে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা। এর আগে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচার শুরু করতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের বিজি-৬০১ এর একটি ফ্লাইটে বেলা ১১টা ৩৩ মিনিটে সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। এ সময় তাকে অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এরপর তিনি ওসমানী বিমানবন্দর থেকে সরাসরি হযরত শাহজালাল (রহ.) মাজারে পৌঁছান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা ভোটের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। আমাদের দলকেও। যে সবাই দাঁড়াবে, সবাই কাজ করবে। জনগণ যাকে বেছে নিবে, সেটাই।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, কিন্তু সেটাকে কার্যকর করতে হবে। আমি জানি, আমাদের সরকার এলেই এটা কার্যকর হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা নির্বাচন করতে চায় না, করবে না। আগুন দিয়ে সরকারি সম্পত্তি পোড়ানো, সরকারি সম্পত্তি মানে জনগণের সম্পত্তি, নতুন করে রেল, কোচ নিয়ে এসেছি; রেললাইন তুলে ফেলে এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে মানুষ হত্যা করা, এগুলো সম্পূর্ণ সন্ত্রাসী কাজ, জঙ্গিবাদী কাজ। আর এসব সন্ত্রাসী-জঙ্গিবাদী কাজ করে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে। বিএনপি এই একইভাবে ২০৩-২০১৪তেও মানুষ পুড়িয়ে মারতে দেখেছি। এটা কোন ধরনের আন্দোলন?’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে দেশে অরাজকতা শুরু করেছে। তারা আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারছে। নারী-শিশু, পুলিশ, সাংবাদিক সবার ওপর হামলা করছে। আমি মনে করি মানুষ তাদেরকে কখনো মেনে নিবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গতকাল যে ঘটনা ঘটল, তারা হরতাল দিয়েছে, জনগণ সেটি মানেনি। তাদের ডাকে কোনো সাড়া দেয়নি, তাদের বোঝা উচিত—এদেশের মানুষ নির্বাচন চায়, ভোট দিতে চায়। আমরা ভোটের জন্য সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করে দিয়েছি। সবাই দাঁড়াবে, সবাই কাজ করবে, জনগণ যাকে বেছে নেয়। কিন্তু আমরা কী দেখলাম! রেলে আগুন দিল, একজন মা তার সন্তানকে নিয়ে সে আগুনে পুড়ে মারা গেল। মা সন্তানকে বুকে জড়িয়ে রেখেছিল। এর চেয়ে কষ্টের দৃশ্য মনে হয়, আর কিছু হতে পারে না। কী করে এভাবে মানুষ হত্যা করল?’
তিনি বলেন, মানুষ এতো শান্তিতে ছিল। আজ এতো কষ্টের পরেও, কোভিড-১৯ এর অতিমারী-ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন সব কিছুর পরও আমরা অর্থনীতির চাকা ধরে রাখছি, ভর্তুকি দিয়ে দিয়ে তাদের খাবার দিচ্ছি। আমরা সব রকম ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। রাস্তা-ঘাট সব কিছুই তো উন্নতি করেছি। কিন্তু কোথায়, কোন জায়গাটা আমরা বাদ রেখেছি যে আমাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের নাম দিয়ে তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাবে। ভোট জনগণের অধিকার, সাংবিধানিক অধিকার। সেই ভোট জনগণ দিবে। সেই ভোট দিতে জনগণ আসবে, তাদের বাধা দেয়া, তাদের খুন করা। এটার অধিকার কারও নাই। এটা বাংলাদেশের কেউ মানবে না।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে এলে দেশের উন্নয়ন করে। ২০০৯ সালে সরকার গঠন করেছিলাম, বাংলাদেশের জনগণ ২০১৪ সালে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে, ২০১৮ সালে নির্বাচিত করেছে। আজকে আমি যে সিলেটে এসেছি, এখানে আর কেউ ভূমিহীন-গৃহহীন নেই। প্রত্যেকটি ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে আমরা ঘর করে দিয়েছি। চিকিৎসাসেবায় কমিউনিটি ক্লিনিক দিয়েছি। মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলো আমরা পূরণ করে দিয়েছি। যে কাজগুলো বাকি আছে, আগামী ৭ জানুয়ারি নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ যদি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়, আবার যদি সরকার গঠন করতে পারি, ইনশাল্লাহ পুরো বাংলাদেশটাই আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করব। কোনো মানুষই ঠিকানাহীন, ভূমিহীন-গৃহহীন থাকবে না। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়ে পুরো বাংলাদেশকে আমরা উন্নত-সমৃদ্ধ করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা সমস্ত জায়গায় পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই যে হঠাৎ তারা এ ঘটনাগুলো ঘটিয়ে ফেলে। যারা এই অগ্নিসন্ত্রাসে জড়িত, যারা এই হত্যা করছে, কারো ক্ষমা নেই। তাদের বিরুদ্ধে আমরা কঠোর ব্যবস্থা নেবই। এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে জনগণকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন ঘিরে সিলেটজুড়ে বইছে উৎসবের আমেজ। তোরণ, ব্যানার-ফেস্টুনে সেজেছে সিলেট নগরী। নগরীর ব্যস্ততম সড়কগুলো সেজেছে বর্ণিল সাজে। জনসভায় লাখো মানুষের সমাগম ঘটাতে কাজ করেছেন নেতা-কর্মীরা।
প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা হয়েছে। নগরীজুড়ে জোরদার করা হয়েছে পুলিশের টহল। সাদা পোশাকে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। জনসভা মঞ্চ ও আশপাশের এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা।
আজ বিকেলে নগরের সরকারি আলিয়া মাদরাসার মাঠে নির্বাচনী জনসভায় যোগ দেয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। সেখানে জড়ো হবেন সিলেট বিভাগের চার জেলার ১৯টি সংসদীয় আসনের নেতা-কর্মীরা। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সভাপতির দিক-নির্দেশনা শোনার অপেক্ষায় রয়েছেন তারা।