গাজীপুরে প্রার্থীদের সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ
- আপডেট সময় : ১০:০৬:৫২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে
গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের প্রার্থীদের অনেকেরই সম্পদ গত ৫ বছরে বহুগুণ বেড়েছে। আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী টুসীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ বেড়েছে অন্তত ২৪ গুণ। গত ১০ বছরে লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন নৌকার প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকি। সিমিন হোসেন রিমি ও তাঁর স্বামী মোশতাক হোসেনের আয় ও সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। নগদ অর্থ ও সম্পদ বেড়েছে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেলের। আর গত ১৫ বছরে আয় কমে গেলেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের।
গাজীপুর-১ আসনের নৌকার প্রার্থী ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ১৫ বছরে আয় কমে গেলেও স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে। তিনি এবার চতুর্থ দফায় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। হলফনামায় তিনি বাৎসরিক আয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ ৩৯ হাজার ৮৮২ টাকা। এর মধ্যে কৃষি খাত থেকে এক লাখ ৯৫ হাজার, ব্যাংকের আমানত থেকে ১৮ হাজার ৯৯৪ টাকা এবং মন্ত্রী হিসাবে সম্মানি ভাতা বাবদ ২৩ লাখ ২৫ হাজার ৮৮৮ টাকা দেখিয়েছেন। ২০০৮ সালে তাঁর কোনও গাড়ি ছিল না। তবে ২০১৩ সাল থেকে তিনি দুটি গাড়ি ব্যবহার করছেন। করমুক্ত গাড়ি দুটির মূল্য দেখিয়েছেন ৭৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নিজ নামে স্বর্ণ আছে ৭ ভরি।
গাজীপুর-২ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী এবং যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল এবার পঞ্চম দফায় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। হলফনামা বিশ্লেষণ করে জানা যায় গত ১৫ বছরে তাঁর নগদ অর্থ ও সম্পদ বেড়েছে আর কমেছে ব্যবসা থেকে আয়। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাহিদ আহসান হলফনামায় ব্যবসা থেকে বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ৪ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি হিসেবে ছিল নগদ ১৫ হাজার টাকা। এবারের হলফনামা অনুযায়ী, ব্যবসায় রাসেলের বাৎসরিক আয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা এবং শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত ৯৮ হাজার ৩৯০ টাকা। তার করমুক্ত একটি গাড়িসহ নিজ নামে তিনটি এবং তাঁর স্ত্রীর নামে একটি গাড়ি দেখিয়েছেন। নিজের তিনটি গাড়ির দাম ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৬৩৪ টাকা। আর স্ত্রীর নামে থাকা গাড়ির দাম ১৩ লাখ টাকা। প্রতিমন্ত্রী হিসেবে বাৎসরিক ভাতা পান ১৭ লাখ ৯৪ হাজার ৪২০ টাকা এবং বিশেষ সুবিধাদি হিসেবে পান ৩৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৩৮ টাকা।
গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী টুসীর গত পাঁচ বছরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমার পরিমাণ বেড়েছে অন্তত ২৪ গুণ। পাঁচ বছর আগে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর তিন লাখ ৪৫ হাজার ১২০ টাকা ছিল। পাঁচ বছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৩ লাখ ৪০ হাজার ৯৯৮ টাকা। এদিকে ২০১৮ সালে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তাঁর স্বামীর কোনো টাকা ছিল না। তবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার স্বামীর জমার পরিমাণ ২৫ লাখ ১০ হাজার ১৮২ টাকা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় টুসীর কোনো স্বর্ণ ছিল না। এবার তিনি ৪০ ভরি স্বর্ণের মালিক। এছাড়া স্থাবর সম্পদ হিসেবে তার কৃষি জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৩৯ লাখ ১৭ হাজার ৮১০ টাকা।
গাজীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সিমিন হোসেন রিমি ও তাঁর স্বামী মোশতাক হোসেনের আয় ও সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। গত ১০ বছরে দুজনই কোটিপতি হয়েছেন। রিমির হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২০১৩ সালে রিমির নগদ ১৯ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭ টাকা এবং তাঁর স্বামীর ১৪ লাখ ৪১ হাজার ১০৪ টাকা ছিল। এবারের হলফনামা অনুযায়ী রিমির নগদ ১ কোটি ১০ লাখ ৬৫ হাজার ৭৫৮ এবং তাঁর স্বামীর আছে ১ কোটি ৭ লাখ ৬৯ হাজার ৩৬০ টাকা। দ্য গোল্ডেন ফাইবার ট্রেড সেন্টার লিমিটেডের পরিচালক হিসেবে সম্মানী বাবদ রিমির বার্ষিক আয় ৭ লাখ টাকা। পৈতৃক সূত্রে পাওয়া রাজধানীর ধানমন্ডির ফ্ল্যাট ভাড়া থেকে বার্ষিক ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা আয় হয়। এ ছাড়া শেয়ার, সঞ্চয়, ব্যাংক আমানতের সুদ বাবদ বছরে ১ হাজার ৪৭৬ টাকা আয় করেন। সিমিন হোসেন রিমি সংসদ সদস্য হিসেবে ভাতা বাবদ বছরে ২৩ লাখ ২২ হাজার ৫৯৫ টাকা পান। কাপাসিয়া ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি হিসেবে সম্মানী বাবদ বার্ষিক ৬ লাখ ৫০ হাজার ৬৮৮ টাকা পান।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন মেহের আফরোজ চুমকি। গত ১০ বছরে লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন তিনি। আর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুমকির জমা টাকা বেড়েছে ১৫ গুণ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত চুমকির কাছে কোনো নগদ টাকা না থাকলেও বর্তমানে আছে ৩৮ লাখ টাকার বেশি। আর দশম জাতীয় নির্বাচনের সময় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে চুমকির টাকা ছিল ২২ লাখ ৪০ হাজার। বর্তমানে আছে ৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকার বেশি। হলফনামায় তিনি তাঁর স্বামীর জমা টাকার কোনো তথ্য দেননি।