০৫:১৯ পূর্বাহ্ন, রোববার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৩ ভাদ্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষুধায় ধুঁকছে গাজার সব বাসিন্দা, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় গত আড়াই মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত এ উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দা ক্ষুধায় ধুঁকছে। সেইসঙ্গে গাজায় বাড়ছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) রিপোর্টে বলা হয়, গাজার সব মানুষই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটে রয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-সহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে আইপিসি এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে। আইপিসি হচ্ছে একটি বহু-অংশীদার ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মান অনুযায়ী ক্ষুধা সংকটের তীব্রতা এবং মাত্রা নির্ধারণ করতে তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকে।

গাজায় মিসর থেকে ট্রাকে করে কিছু খাবার, পানি ও ওষুধ আনা হচ্ছে, তবে জাতিসংঘ বলছে এটি প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে।

আইপিসি বলছে, গাজায় তীব্র সংঘাতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সীমিত মানবিক প্রবেশাধিকার চলতে থাকলে ৬ মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজাবাসী তাদের সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করেছে। জীবিকা শেষ হয়ে গেছে। দোকানগুলো খালি পড়ে আছে। লোকজন খাবার খুঁজে পাচ্ছে না। সেখানকার বাসিন্দারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মীদের জানিয়েছে, তারা প্রায়শই পুরো দিন না খেয়ে থাকে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে যাতে শিশুরা খেতে পারে। পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সেবা দিতে না পারলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।

মহামারির আশঙ্কা করে ডব্লিউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হোসাইন বলেন, গাজার বাসিন্দারা মহামারির খুব কাছাকাছি। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। শিশু, মহিলা ও পুরুষদের মানবিক সংকটের যে মাত্রা তা নজিরবিহীন।

আসন্ন এ বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করে ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেন, গাজার কেউই অনাহার থেকে নিরাপদ নয়। আমরা পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পারি না। বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষায় এখন মানবিক সহায়তা পাঠানোর সুযোগ প্রয়োজন। যেকোনো কিছুর চেয়ে এখন যেটা দরকার তা হলো শান্তি। মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, জীবন বাঁচাতে বিশ্বকে এখনই একত্রিত হতে হবে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজায় ৫২ হাজার ৫৮৬ জন আহত হয়েছে। ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে আরও হাজার হাজার মানুষ।

ক্ষুধায় ধুঁকছে গাজার সব বাসিন্দা, বাড়ছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি

আপডেট : ০৮:২১:০৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৩

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ ভূখণ্ড গাজায় গত আড়াই মাস ধরে চলা যুদ্ধের কারণে তীব্র মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী হামাস নিয়ন্ত্রিত এ উপত্যকার প্রায় ২৩ লাখ বাসিন্দা ক্ষুধায় ধুঁকছে। সেইসঙ্গে গাজায় বাড়ছে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) রিপোর্টে বলা হয়, গাজার সব মানুষই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটে রয়েছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)-সহ জাতিসংঘের অন্যান্য সংস্থা ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তথ্য অন্তর্ভুক্ত করে আইপিসি এই প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেছে। আইপিসি হচ্ছে একটি বহু-অংশীদার ভিত্তিক প্ল্যাটফর্ম যা আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক মান অনুযায়ী ক্ষুধা সংকটের তীব্রতা এবং মাত্রা নির্ধারণ করতে তথ্য বিশ্লেষণ করে থাকে।

গাজায় মিসর থেকে ট্রাকে করে কিছু খাবার, পানি ও ওষুধ আনা হচ্ছে, তবে জাতিসংঘ বলছে এটি প্রয়োজনের মাত্র ১০ শতাংশ চাহিদা পূরণ করছে।

আইপিসি বলছে, গাজায় তীব্র সংঘাতের বর্তমান পরিস্থিতি এবং সীমিত মানবিক প্রবেশাধিকার চলতে থাকলে ৬ মাসের মধ্যে দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা রয়েছে। খাদ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গাজাবাসী তাদের সমস্ত সম্পদ ব্যবহার করেছে। জীবিকা শেষ হয়ে গেছে। দোকানগুলো খালি পড়ে আছে। লোকজন খাবার খুঁজে পাচ্ছে না। সেখানকার বাসিন্দারা বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির কর্মীদের জানিয়েছে, তারা প্রায়শই পুরো দিন না খেয়ে থাকে। অনেক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ ক্ষুধার্ত থাকে যাতে শিশুরা খেতে পারে। পর্যাপ্ত খাবার, বিশুদ্ধ পানি, স্বাস্থ্য ও স্যানিটেশন সেবা দিতে না পারলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।

মহামারির আশঙ্কা করে ডব্লিউএফপির প্রধান অর্থনীতিবিদ আরিফ হোসাইন বলেন, গাজার বাসিন্দারা মহামারির খুব কাছাকাছি। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার না পাওয়ায় তাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ছে। শিশু, মহিলা ও পুরুষদের মানবিক সংকটের যে মাত্রা তা নজিরবিহীন।

আসন্ন এ বিপর্যয়ের বিষয়ে সতর্ক করে ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক সিন্ডি ম্যাককেইন বলেন, গাজার কেউই অনাহার থেকে নিরাপদ নয়। আমরা পাশে দাঁড়িয়ে মানুষকে ক্ষুধার্ত অবস্থায় দেখতে পারি না। বেসামরিক নাগরিকদের জীবন রক্ষায় এখন মানবিক সহায়তা পাঠানোর সুযোগ প্রয়োজন। যেকোনো কিছুর চেয়ে এখন যেটা দরকার তা হলো শান্তি। মানবিক যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, জীবন বাঁচাতে বিশ্বকে এখনই একত্রিত হতে হবে।

গত ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া হামাস–ইসরায়েল যুদ্ধে গাজায় এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই যুদ্ধে গাজায় ৫২ হাজার ৫৮৬ জন আহত হয়েছে। ধসে পড়া ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে আরও হাজার হাজার মানুষ।