রাশিয়ার সঙ্গে চলমান যুদ্ধে ইউক্রেন পরাজিত হলে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশ ছেড়ে পালিয়ে আমেরিকায় আশ্রয় নেবেন এবং এ উদ্দেশ্যে তিনি আমেরিকার ফ্লোরিডায় একটি বাড়িও কিনে ফেলেছেন—এমন বক্তব্যযুক্ত পোস্ট বেশ শোরগোল ফেলে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদের এমন দাবি কি আসলেই সত্যি? এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ব্রাসেলসভিত্তিক সম্প্রচারমাধ্যম ইউরোনিউজ।
ইউরোনিউজ জানিয়েছে, কোনও কোনও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারী এমনও লিখছেন যে, জেলেনস্কি ইতিমধ্যে আমেরিকায় পালিয়ে গেছেন!
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক ব্যক্তি লিখেছেন, যুদ্ধে পরাজয়ের পর ভলোদিমির জেলেনস্কি যেন দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেত পারেন, এই উদ্দশ্যে তিনি আমেরিকায় নাগরিকত্ব চেয়ে আবেদন করেছেন।
শুধু সাধারণ মানুষই নয়, সাবেক রিপাবলিকান সিনেট প্রার্থী লরেন উইটজ পর্যন্ত এক্সে এ রকম একটি পোস্ট করেছেন। পোস্টটি ইতিমধ্যে ১ কোটিবার দেখা হয়েছে। পোস্টটির সঙ্গে তিনি একটি বাড়ির ছবিও যুক্ত করেছেন। ওই পোস্টে উইটজ দাবি করেছেন, ‘জেলেনস্কি ফ্লোরিডায় ২ কোটি ডলার দিয়ে একটি বাড়ি কিনেছেন। তিনি আসলে ইউক্রেন থেকে পালানোর কথা ভাবছেন।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা যে ছবিটিকে জেলেনস্কির কেনা বাড়ি হিসেবে দাবি করছেন, সেই ছবিগুলো যাচাই করেছে দ্য কিউব নামের একটি ফ্যাক্ট চেকিং প্রতিষ্ঠান। তারা জানিয়েছে, পোস্টে যে বাড়িটি দেখানো হচ্ছে, সেটি পন্টে ভেদরা বিচে অবস্থিত। পোস্টকারীদের দাবি করা পন্টে ভেদরা বিচ থেকে সেটির অবস্থান ৩০০ কিলোমিটারেরও বেশি।
আবাসন ক্রয়–বিক্রয়ের অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ‘জিলো’ ওয়েবসাইটে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িটিকে বিক্রয়ের তালিকায় দেখা গেছে। সেখানে বাড়িটির মূল্য লেখা ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ডলার।
আমেরিকায় আবাসন কেনাবেচার সমস্ত নথিপত্র অনলাইনে দেখা যায়। সেসব নথি পর্যালোচনা করে দ্য কিউব জানিয়েছে, আলোচিত বাড়িটি ২০১৯ সালে ৬০ লাখ ৩০ হাজার ডলারে আটলান্টার এক দম্পতি কিনে নিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরাই বাড়িটির মালিক। সুতরাং বাড়িটি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির নয়, তা স্পষ্ট।
এ ছাড়া জেলেনস্কির মার্কিন নাগরিকত্বের আবেদনপত্র হিসেবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি নিয়ে অনুসন্ধান চালিয়েছে মার্কিন সামাজিক প্রতিষ্ঠান রেডিট। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের নাগরিকত্বের আবেদনপত্র হিসেবে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি প্রকৃত আবেদনপত্র নয়। এটি একটি ভুয়া আবেদনপত্র। কাস্টমাইজড টেমপ্লেট ব্যবহার করে এটি তৈরি করা হয়েছে।
ইউরোনিউজ জানিয়েছে, আলোচিত আবেদনপত্রে জেলেনস্কির নামের মধ্যম অংশেও বানান ভুল রয়েছে। এ ছাড়া আবেদনপত্রটিতে তাঁর কোনও স্বাক্ষর নেই, যা আইনত থাকা বাধ্যতামূলক।
মার্কিন সাংবাদিক লাচলান মার্কে বলেন, ডিসি উইকলি নামের একটি ওয়েবসাইট থেকে প্রথম এসব ছবি ছড়ানো হয়েছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এটি একটি রুশপন্থী ওয়েবসাইট। বিভিন্ন সময়ে এই ওয়েবসাইট থেকে রাশিয়া সংশ্লিষ্ট ছবি ও খবর প্রকাশ করতে দেখা গেছে।