চলছে বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ কর্মসূচি। টানা তিনদিন 'ভোট বর্জন ও বর্তমান সরকারকে অসহযোগিতার' আহ্বান জানিয়ে লিফলেট বিতরণের পর আজ রোববার সকাল ৬টা থেকে এই কর্মসূচি পালন করছে দলগুলো। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে রাজধানীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ ও আনসার সদস্যদের সতর্ক অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে।
বিএনপি-জামায়াত ও সমমনা দলগুলোর ডাকা অবরোধ কর্মসূচি শুরু হওয়ার আগেই গতকাল শনিবার রাজধানীতে তিনটি বাসে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এর মধ্যে, গুলিস্তানে রজনীগন্ধা পরিবহনের বাস, মিরপুর-১৩ নম্বরে ট্রাস্ট পরিবহনের বাস ও কলাবাগানে শিকড় পরিবহনের বাসে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
অবরোধের সকালে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, যানবাহন চলছে স্বাভাবিক দিনের মতো। গণপরিবহনও স্বাভাবিক। সপ্তাহের প্রথমদিন হওয়াতে অফিসমুখী মানুষের ভিড়ও রয়েছে রাস্তায়।
নির্বাচন বর্জনের দাবিতে ডাকা অবরোধ সফলে রাজধানীতে ঝটিকা মিছিল করেছে বিএনপির অঙ্গ সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা। রোববার (২৪ নভেম্বর) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় এই ঝটিকা মিছিল হয়। এতে নেতৃত্ব দেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইয়াছিন আলী ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান।
এছাড়া মিছিলে অংশ নেয় সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি কামরুজ্জান বিপ্লব, আব্দুল কুদ্দুস, সরদার নুরুজ্জামান, যুগ্ম সম্পাদক জেড আই কামাল, সহ সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান, মাসুম ভুঁইয়া, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সাহাবুদ্দিন সাবু, তৌহিদুল ইসলাম টিটু, শাহ আলম তপু, শফি মাহমুদ জুয়েল, প্রচার সম্পাদক জাকিরুল ইসলাম জাকির, সহ সমাজসেবা সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ পলাশ, সহ শিক্ষা বিষয়ক ইমামুল ইসলাম ইমাম, সহ কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ইমদাদুল হক মজুমদার, সহ আপ্যায়ন সম্পাদক সাইদুজ্জামান পাশা, সহ বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক নুর আমিন লালন প্রমুখ।
এদিকে অবরোধের সমর্থনে বগুড়ায় রাস্তা বন্ধ করে আলাদা আলাদা মিছিল ও সমাবেশ করেছে বিএনপি ও জামায়াত। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৮টায় বগুড়া পৌরসভার ২য় বাইপাসের ফনিরমোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে মিছিল ও সমাবেশ করে তারা। এতে নেতৃত্ব দেন কেন্দ্রীয় বিএনপি’র নির্বাহী কমিটির সদস্য ভিপি সাইফুল ইসলাম ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা। এসময় সড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
নির্বাচন বন্ধ ও গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের মুক্তির দাবীতে সকাল ৭টায় ১ম বাইপাসের বারোপুরে ও ২য় বাইপাসের ঘুনিয়াতলায় মিছিল-সমাবেশ করে জামায়াত।
এদিকে রংপুরে রোববার দিনব্যাপী সরকারের পদত্যাগ, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও মহানগর শাখা ছাত্রদলের ডাক চলছে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল।
সরকারের পদত্যাগ, নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও ভোট বর্জনের আহ্বান জানিয়ে ডাকা অবরোধের সমর্থনে ফেনীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) সকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের লালপোল, শহরের আদালতপাড়া ও শহীদ শহিদুল্লাহ কায়সার সড়কে পৃথকভাবে এ কর্মসূচি পালন করে তারা। এ সময় তারা অবরোধের সমর্থনে এবং সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
ফেনী পৌর বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন ভূঞা বলেন, এ ফ্যাসিস্ট সরকার ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের মতো আরও একটি পাতানো নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে। তবে এসব করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না। আজকে দেশের সাধারণ মানুষ আমাদের সঙ্গে রয়েছে। মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়েছে এ সরকার। অবিলম্বে নির্বাচন বাতিল করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন ও বিএনপির নেতাকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
সিরাজগঞ্জে ‘ডামি নির্বাচন’ বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে বিএনপির ডাকা সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের সমর্থনে বিক্ষোভ মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা। রোববার (২৪ ডিসেম্বর) ভোরে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান বাচ্চুর নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ-কড্ডা আঞ্চলিক সড়কের রামগতিতে এ মিছিল করা হয়।
এ সময় জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি নাজমুল হাসান তালুকদার রানা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল হাসান রঞ্জন, মোস্তফা নোমান আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা মোস্তফা জামান, শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মুন্সি জাহেদ আলম, জেলা বিএনপির স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক আলোয়ার হোসেন রাজেশ, জেলা যুবদলের সভাপতি মির্জা আব্দুল জব্বার বাবু, সাধারণ সম্পাদক মুরাদুজ্জামান মুরাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক আব্দুল্লাহ আল কায়েস, সদস্য সচিব মিলন হক রঞ্জু, জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সেরাজুল ইসলাম সেরাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত বুধবার বিকেলে ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আজ রোববার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের ডাক দেয়। একই সঙ্গে ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর সারা দেশে গণসংযোগের কর্মসূচি দেন।
রিজভী বলেন, 'অবৈধ আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠার দাবিতে নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে ২১, ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর গণসংযোগ কর্মসূচি হবে। একই দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর রোববার সকাল-সন্ধ্যা অবরোধ হবে।'
বিএনপির এই ঘোষণার পর শুক্রবার বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মাছুমও এক বিবৃতিতে অবরোধ পালনের আহ্বান জানান।
এদিকে রোববারের সকাল-সন্ধ্যা অবরোধের আগের রাতে রাজধানীতে তিনটি যানবাহনে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে এসব ঘটনায় কোনো হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সন্ধ্যার পর থেকে গুলিস্তানে রজনীগন্ধা পরিবহন, কলাবাগানে শিকড় পরিবহন ও মিরপুর-১৩ নম্বরে ট্রাস্ট পরিবহনের বাসে আগুন দেওয়া হয়।
সরকার পতনের একদফা দাবি আদায়ে ২৮ অক্টোবরের পর থেকে ধারাবাহিক হরতাল অবরোধ কর্মসূচি দিয়ে আসছে বিএনপি। গত ২৮ অক্টোবর বিএনপি মহাসমাবেশ করতে না পারার প্রতিবাদে ২৯ অক্টোবর সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ, দ্বিতীয় দফায় ৫ নভেম্বর সকাল ৬টা থেকে ৭ নভেম্বর সকাল ৬টা পর্যন্ত অবরোধ, তৃতীয় দফায় ৮ ও ৯ নভেম্বর, চতুর্থ দফায় ১২ ও ১৩ নভেম্বর, পঞ্চম দফায় ১৫ ও ১৬ নভেম্বর, ষষ্ঠ দফায় ২২ ও ২৩ নভেম্বর, সপ্তম দফায় ২৬ ও ২৭ নভেম্বর এবং অষ্টম দফায় ২৯ নভেম্বর অবরোধ ঘোষণা করা হয়। এছাড়া গত ১৯ নভেম্বর ভোর ৬টা থেকে ২১ নভেম্বর ভোর ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী হরতালের ডাক দেয় দলটি। নবম দফায় (৩ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা থেকে (৫ ডিসেম্বর) ভোর ৬টা পর্যন্ত চলে অবরোধ। ১০ম দফায় ৬ ডিসেম্বর (বুধবার) ভোর থেকে অবরোধ শুরু হয়, তা শুক্রবার (৮ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় পর্যন্ত চলবে। এছাড়া ১১তম দফায় মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) সকাল ৬টা থেকে বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টা অবরোধ ডাকে বিএনপি। ১৯ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) ভোর ৬টা থেকে সন্ধ্যায় ৬টা পর্যন্ত বিএনপি- জামায়াতসহ বিরোধীদল ও জোটের ১২ ঘণ্টার সকাল- সন্ধ্যা হরতাল চলে। এবার (২৪ ডিসেম্বর) ১২তম দফায় এই অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছে বিএনপি।