গাজা ভূখন্ডে আল-মাগাজি শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি বিমান হামলায় কমপক্ষে ৭০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও বহু মানুষ। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইসরাইলি এই বর্বর হামলাকে ‘গণহত্যা’ বলে আখ্যায়িত করেছে। সোমবার (২৫ শে ডিসেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। হামলাটি এমন সময় করা হলো যখন বিশ্ব বড়দিন উদযাপনে ব্যস্ত।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। কারণ ভয়াবহ এ হামলায় অনেকেই গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে আল আকসা হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। অনেকের অবস্থাই আশঙ্কাজনক। হামলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, অনেক শিশুর রক্তাক্ত দেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আশরাফ আল কুদরা জানিয়েছেন বলেন, শরণার্থী ক্যাম্পে বিমান হামলা চালানোর পাশাপাশি আবাসিক এলাকার তিনটি বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে তারা। জনবসতিপূর্ণ এলাকাটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইসরায়েলি বিমানবাহিনী।
ইসরায়লি বাহিনীর এ হামলায় মেয়ে, জামাতা ও নাতিকে হারিয়েছেন বলে স্খানীয় এক ব্যক্তি বিবিসিকে বলেছেন। তিনি জানান, তারা উত্তর গাজা থেকে পালিয়ে এসে আল মাগহাজি ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছিলেন। ক্যাম্পটির তৃতীয় তলায় তারা বাস করতেন। গতকাল রাতের হামলায় ভবনটির দেয়াল ধসে পড়লে তাঁর নাতি, মেয়ে ও মেয়ের স্বামী নিহত হন।
ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি জানিয়েছে, ইসরায়েল বাহিনী প্রধান সড়কের সঙ্গে থাকা তিনটি শরণার্থী শিবিরে হামলা চালিয়েছে। সেখানে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
এদিকে শুভ বড়দিনের প্রাক্কালে এ ধরনের হামলা হওয়ায় নিন্দা জানিয়েছেন পোপ ফ্রান্সিস। তিনি বলেন, যীশু যেখানে জন্মেছিলেন সেখানেই আজ রক্ত ঝরছে। যীশুর শান্তির বার্তাকে যুদ্ধের নিরর্থক যুক্তি দিয়ে ঢেকে দেওয়া হচ্ছে।
গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস যোদ্ধারা। ইসরায়েল দাবি করেছে, ওই অভিযানে প্রায় এক হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি নিহত হয়। এ ছাড়া প্রায় ২৪০ জনকে জিম্মি করা হয়। তারপর ওই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী। পরে ২৮ অক্টোবর থেকে অভিযানে যোগ দেয় স্থল বাহিনীও।
ইসরায়েলি বাহিনীর দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ২০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। এই নিহতদের ৭০ শতাংশই নারী, শিশু, অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোর-কিশোরী এবং বয়স্ক লোকজন। সেই সঙ্গে আহত হয়েছেন আরও ৫২ হাজার ৫৮৬ জন এবং এখনও নিখোঁজ রয়েছেন ৬ হাজার ৭০০ জন। এ ছাড়া হাজার হাজার পরিবার বাড়িঘর-সহায় সম্বল হারিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বিভিন্ন স্কুল, সরকারি প্রতিষ্ঠান ও হাসপাতাল প্রাঙ্গণে।