ঢাকা ১০:৪৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी
ব্রেকিং নিউজ ::
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাজধানী ঢাকার যাত্রাবাড়ী-ডেমরা এলাকায় ৬ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। সোমবার (২৫ নভেম্বর) সকাল থেকে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ, কবি নজরুল ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ওই এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের বছর ২০২৩!

অনলাইন ডেস্ক
  • আপডেট সময় : ০৪:৪৩:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩
  • / ৪২৭ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

নির্বাচনী বছর হওয়ায় ২০২৩ সালে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্যে আছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল ও মেট্রোরেলের আগারগাঁও–মতিঝিল অংশ। এই বছরকে যদি মেগাপ্রকল্প বা বড় প্রকল্পের বছর বলা হয়, তাহলে হয়ত ভুল হবে না।

এই মেগাপ্রকল্পগুলো ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। তাই নির্বাচনের আগে আগে কোনোটি পূর্ণাঙ্গ, আবার কোনোটি আংশিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। সরকার বলছে, এই অবকাঠামোগুলোর ফলে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচলেও আসবে স্বস্তি।

দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন হয় গত ২ সেপ্টেম্বর। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন এটি খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। প্রাথমিকভাবে চালু হয়েছে উড়াল সড়কটির বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ।

এর ফলে যানজটের শহর ঢাকায় বিনা বাধায় বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ মিনিট। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো প্রকল্প শেষ হলে শুধু ঢাকার যানজট নিরসনই নয়, এ পথে রপ্তানি পণ্য দ্রুত চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। পুরোপুরি চালু হলে মাত্র ৩০ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছানো যাবে।

এ উড়াল সড়ক ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বাধাহীন বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে। মোট ৩ ধাপে নির্মাণ হচ্ছে এটি। প্রথম ধাপে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন, দ্বিতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এবং শেষ ধাপের কাজ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। আগামী বছরের জুনে শেষ হবে পুরো প্রকল্পের কাজ।

বিমানবন্দর থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারের এই প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ওঠা-নামার মোট ৩১টি র‍্যাম্প। বিমানবন্দর, কুড়িল, বিজয় স্মরণী, সোনারগাঁও মোড়, কমলাপুর রেল স্টেশন, পলাশীর মোড় ও শনির আখড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠার জন্য থাকবে ১৫টি, আর নামার জন্য থাকবে ১৬টি র‍্যাম্প।

৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে থাইল্যান্ডের একটি ও চীনের দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

পানির তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। গত ২৮ অক্টোবর টানেলটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম এ টানেল।

এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে কর্ণফুলির ওপারের সহজ সংযোগ তৈরি হয়। এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, মিয়ানমার ও চীনের পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যের সম্ভাবনা তৈরি করেছে এই টানেল।

৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লাগে ৩ মিনিট। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। আর উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী যান চলাচল করবে।

টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টিউবের ভেতরের ব্যস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।

এই টানেলের ফলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমেছে ৪০ কিলোমিটার। ২০৩০ সাল নাগাদ এই টানেল দিয়ে বছরে ১ কোটি ২৭ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালকে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মেগাপ্রকল্পের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে এভিয়েশন, পর্যটন, যোগাযোগ, আমদানি-রপ্তানি ও কৃষিতে। গত ৭ অক্টোবর টার্মিনালটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এটি যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন আগামী বছর থেকে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প। তারও আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে এ ব্যয় বেড়ে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়ের বড় অংশ আসছে জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। নকশা অনুযায়ী, টার্মিনালের মূল ভবনের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি, আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, শাহজালালে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি।

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এর অ্যাপ্রন বা পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। ভেতরে যুক্ত হবে নতুন ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার আর ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। এর পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।

তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণ করা হবে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে মেট্রোরেলও। আর বর্তমান দুই টার্মিনালের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল করছে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চালু হয় মেট্রোরেল। কিন্তু এর সুফল পুরোপুরি মিলছিল না।

এ বছরের ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও–মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে উত্তরা থেকে রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিল, ২১ কিলোমিটারের পথ যেতে লাগছে মাত্র ৩৮ মিনিট।

মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন–৬ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা সহায়তা হিসেবে দিয়েছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাকি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানীতে আরও ৫টি মেট্রোলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

এই প্রকল্পগুলো ছাড়াও ২২ অক্টোবর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪০টি সেতু, ১২টি ওভারপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিউজটি শেয়ার করুন

মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের বছর ২০২৩!

আপডেট সময় : ০৪:৪৩:১২ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩

নির্বাচনী বছর হওয়ায় ২০২৩ সালে বেশ কয়েকটি মেগাপ্রকল্প উদ্বোধন হয়েছে। এর মধ্যে আছে, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের থার্ড টার্মিনাল ও মেট্রোরেলের আগারগাঁও–মতিঝিল অংশ। এই বছরকে যদি মেগাপ্রকল্প বা বড় প্রকল্পের বছর বলা হয়, তাহলে হয়ত ভুল হবে না।

এই মেগাপ্রকল্পগুলো ছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী অঙ্গীকার। তাই নির্বাচনের আগে আগে কোনোটি পূর্ণাঙ্গ, আবার কোনোটি আংশিকভাবে উন্মুক্ত করা হয়েছে। সরকার বলছে, এই অবকাঠামোগুলোর ফলে দেশের অর্থনীতিতে গতি আসবে। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের চলাচলেও আসবে স্বস্তি।

দেশের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশের উদ্বোধন হয় গত ২ সেপ্টেম্বর। উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনের পরদিন এটি খুলে দেওয়া হয় সাধারণ মানুষের জন্য। প্রাথমিকভাবে চালু হয়েছে উড়াল সড়কটির বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট অংশ।

এর ফলে যানজটের শহর ঢাকায় বিনা বাধায় বিমানবন্দর থেকে ফার্মগেট পর্যন্ত আসতে সময় লাগছে ১০ থেকে ১২ মিনিট। বিশেষজ্ঞদের মতে, পুরো প্রকল্প শেষ হলে শুধু ঢাকার যানজট নিরসনই নয়, এ পথে রপ্তানি পণ্য দ্রুত চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছাবে। পুরোপুরি চালু হলে মাত্র ৩০ মিনিটেই বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে পৌঁছানো যাবে।

এ উড়াল সড়ক ঢাকার উত্তর-দক্ষিণে বাধাহীন বিকল্প সড়ক হিসেবে কাজ করবে। মোট ৩ ধাপে নির্মাণ হচ্ছে এটি। প্রথম ধাপে কাওলা থেকে বনানী রেলস্টেশন, দ্বিতীয় ধাপ মগবাজার রেলক্রসিং পর্যন্ত এবং শেষ ধাপের কাজ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত। আগামী বছরের জুনে শেষ হবে পুরো প্রকল্পের কাজ।

বিমানবন্দর থেকে শনির আখড়া পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটারের এই প্রকল্পের সংযোগ সড়কসহ দৈর্ঘ্য ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। ওঠা-নামার মোট ৩১টি র‍্যাম্প। বিমানবন্দর, কুড়িল, বিজয় স্মরণী, সোনারগাঁও মোড়, কমলাপুর রেল স্টেশন, পলাশীর মোড় ও শনির আখড়াসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ওঠার জন্য থাকবে ১৫টি, আর নামার জন্য থাকবে ১৬টি র‍্যাম্প।

৮ হাজার ৯৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়ন করছে থাইল্যান্ডের একটি ও চীনের দুটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে প্রতিদিন প্রায় ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করতে পারবে।

পানির তলদেশে নির্মিত দেশের প্রথম টানেল চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদীতে নির্মিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। গত ২৮ অক্টোবর টানেলটি উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রথম এ টানেল।

এর মধ্য দিয়ে দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে কর্ণফুলির ওপারের সহজ সংযোগ তৈরি হয়। এশিয়ান হাইওয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সাত রাজ্য, মিয়ানমার ও চীনের পূর্বাঞ্চলের বাণিজ্যের সম্ভাবনা তৈরি করেছে এই টানেল।

৬০ কিলোমিটার গতিতে টানেলটি পার হতে সময় লাগে ৩ মিনিট। ১১ হাজার কোটি টাকার প্রকল্পটিতে চীনের এক্সিম ব্যাংকের ঋণ প্রায় ৫ হাজার ৯১৩ কোটি টাকা। বাকি টাকা সরকারের।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের দুটি টিউব। দক্ষিণ পাশের টিউব দিয়ে আনোয়ারা থেকে পতেঙ্গামুখী যান চলাচল করবে। আর উত্তরের টিউব দিয়ে পতেঙ্গা থেকে আনোয়ারামুখী যান চলাচল করবে।

টানেল টিউবের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। টিউবের ভেতরের ব্যস ১০ দশমিক ৮০ মিটার। টিউবসহ মূল টানেলের দৈর্ঘ্য ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার।

এই টানেলের ফলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব কমেছে ৪০ কিলোমিটার। ২০৩০ সাল নাগাদ এই টানেল দিয়ে বছরে ১ কোটি ২৭ লাখ গাড়ি চলাচল করবে। এর মাধ্যমে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত খুলবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

দেশের অর্থনীতিতে গেম চেঞ্জার হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনালকে। ধারণা করা হচ্ছে, এই মেগাপ্রকল্পের প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়বে এভিয়েশন, পর্যটন, যোগাযোগ, আমদানি-রপ্তানি ও কৃষিতে। গত ৭ অক্টোবর টার্মিনালটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে এটি যাত্রীরা ব্যবহার করতে পারবেন আগামী বছর থেকে।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় শাহজালাল বিমানবন্দরের সম্প্রসারণ প্রকল্প। তারও আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর প্রকল্পটির অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। সে সময় এর নির্মাণব্যয় ধরা হয়েছিল ১৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। পরে এ ব্যয় বেড়ে প্রায় ২১ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকায় দাঁড়ায়।

প্রকল্পটির নির্মাণব্যয়ের বড় অংশ আসছে জাপানের সহযোগিতা সংস্থা জাইকার কাছ থেকে। সংস্থাটি ঋণ হিসেবে দিচ্ছে ১৬ হাজার ১৪১ কোটি ২ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। আর বাকি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার।

তৃতীয় টার্মিনালের নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি রোহানি বাহারিন। নকশা অনুযায়ী, টার্মিনালের মূল ভবনের আয়তন ২ লাখ ৩০ হাজার বর্গমিটার। জাপানি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমুজি, আর কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান স্যামসাং যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ বলছে, শাহজালালে বর্তমানে যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে, তার যাত্রী ধারণক্ষমতা বছরে প্রায় ৭০ লাখ। তৃতীয় টার্মিনাল তৈরি হলে এ সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটির কাছাকাছি।

তৃতীয় টার্মিনাল নির্মাণ হলে এর অ্যাপ্রন বা পার্কিং এলাকায় একসঙ্গে রাখা যাবে ৩৭টি উড়োজাহাজ। ভেতরে যুক্ত হবে নতুন ১২টি বোর্ডিং ব্রিজ, ১১টি বডি স্ক্যানার আর ১৬টি লাগেজ বেল্ট। এ ছাড়া থাকবে স্বয়ংক্রিয় ইমিগ্রেশন ব্যবস্থাপনা। এর পার্কিংয়ে একসঙ্গে রাখা যাবে ১ হাজার ২৩০টি গাড়ি।

তৃতীয় টার্মিনালে নির্মাণ করা হবে আমদানি ও রপ্তানির জন্য আলাদা কার্গো কমপ্লেক্স। থাকবে ১১৫টি চেক-ইন কাউন্টার। এই টার্মিনালের সঙ্গে যুক্ত করা থাকবে মেট্রোরেলও। আর বর্তমান দুই টার্মিনালের সঙ্গে সুড়ঙ্গপথে যুক্ত হবে তৃতীয় টার্মিনাল।

রাজধানীতে মেট্রোরেল চলাচল করছে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর থেকে। শুরুতে উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে চালু হয় মেট্রোরেল। কিন্তু এর সুফল পুরোপুরি মিলছিল না।

এ বছরের ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও–মতিঝিল অংশ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ফলে উত্তরা থেকে রাজধানীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র মতিঝিল, ২১ কিলোমিটারের পথ যেতে লাগছে মাত্র ৩৮ মিনিট।

মেট্রোরেলের এমআরটি লাইন–৬ প্রকল্পটির মোট ব্যয় ধরা হয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাইকা সহায়তা হিসেবে দিয়েছে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। বাকি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার।

২০৩০ সাল নাগাদ রাজধানীতে আরও ৫টি মেট্রোলাইন স্থাপনের পরিকল্পনা আছে সরকারের।

এই প্রকল্পগুলো ছাড়াও ২২ অক্টোবর তেজগাঁওয়ে সড়ক ভবনে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৪০টি সেতু, ১২টি ওভারপাস উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।