গাজার জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ‘দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’
- আপডেট সময় : ০৬:৫০:৩৩ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩
- / ৪৩১ বার পড়া হয়েছে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে টানা আড়াই মাসেরও বেশি সময় ধরে অবিরাম হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জার পাশাপাশি হামলা হচ্ছে হাসপাতালেও। এতে করে গাজায় দেখা দিয়েছে তীব্র মানবিক সংকট। এমনকি সংকট এতোটাই প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, ভূখণ্ডটির প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ ‘দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’ রয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। ফিলিস্তিনে নিযুক্ত জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে।
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ৫ লাখ ৭৬ হাজার ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার’ সম্মুখীন হয়েছেন বলে গত সপ্তাহে জাতিসংঘের এক রিপোর্টে বলা হয়েছে। আর গাজার সমগ্র জনসংখ্যাই তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সংকটে রয়েছে বলে ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) রিপোর্টে জানানো হয়।
যদি ‘তীব্র সংঘাত এবং সীমিত মানবিক সহায়তার প্রবেশাধিকার’ বর্তমান পরিস্থিতির মতো অব্যাহত থাকে, তাহলে আইপিসি ভবিষ্যদ্বাণী করে জানায়, ‘আগামী ছয় মাসের মধ্যে সেখানে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি রয়েছে।’
এদিকে গাজায় আবারও খাদ্যসংকটের সতর্কতা জারি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। গত বুধবার সংস্থাটির প্রধান এক বিবৃতিতে বলেছেন, এখনই পদক্ষেপ না নিলে ভয়ঙ্কর খাদ্যসংকটের মুখে পড়বে গাজা। কয়েকলাখ মানুষ তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ডব্লিউএইচও বিবৃতিতে বলেছে, গাজার সর্বত্র স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছেন না মানবিক কর্মীরা। বহু জায়গায় তাদের বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। লড়াইয়ে তাদেরও প্রাণ গেছে। জিনিস নিয়ে তারা বের হলেই ক্ষুধার্ত মানুষ তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছেন।
সব মিলিয়ে এক ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়ে আছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে খাদ্যসংকট থেকে গাজাকে বাঁচানো যাবে না। এর আগেও এবিষয়ে দীর্ঘ রিপোর্ট দিয়েছিল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। একাধিকবার যুদ্ধবিরতির আবেদনও জানানো হয়েছে ডব্লিউএইচওর পক্ষ থেকে।
গত বৃহস্পতিবার (২৮শে ডিসেম্বর) রাতে এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুদের জন্য জাতিসংঘের এই সংস্থা সতর্ক করে বলেছে- ইসরাইলি নিষেধাজ্ঞার মধ্যে অবরুদ্ধ গাজায় পর্যাপ্ত ত্রাণ প্রবেশ করছে না এবং এতে করে গাজার মোট জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ ‘দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে’ পড়েছেন।
গত ৭ অক্টোবর থেকেই গাজায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলি বাহিনী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ভূখণ্ডটিতে ইসরাইলি হামলায় নিহত ফিলিস্তিনিদের সংখ্যা ২১ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। নিহতদের মধ্যে ১৫ হাজারেরও বেশি নারী ও শিশু।
এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের ত্রাণ ও কর্মবিষয়ক সংস্থা (ইউএনআরডব্লিউএ) বৃহস্পতিবার গাজা ইস্যুতে আবারও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে। সংস্থাটি বলছে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ড ‘বিপর্যয়কর ক্ষুধার সাথে লড়াই করছে’। ইসরাইলের অবিরাম বোমা বৃষ্টির মধ্যে গাজায় ‘মানবিক যুদ্ধবিরতির’ আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেছে সংস্থাটি।
গাজার ইউএনআরডব্লিউএ বিষয়ক পরিচালক থমাস হোয়াইটকে উদ্ধৃত করে সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে বলা হয়েছে, ‘প্রতিটি দিন বেঁচে থাকার জন্য, খাদ্য এবং খাবার পানীয় খুঁজে বের করার জন্য (গাজাবাসীদের) সংগ্রাম করতে হচ্ছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের আরও সাহায্য দরকার। আর এই পরিস্থিতিতে আমাদের একমাত্রটি যে আশা অবশিষ্ট আছে তা হচ্ছে- মানবিক যুদ্ধবিরতি কার্যকর।’আল জাজিরা বলছে, গত ৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরাইলের আরোপিত ‘সম্পূর্ণ অবরোধ’ এবং তার আগে টানা কয়েক বছর ধরে চলে আসা অবরোধের কারণে গাজার ফিলিস্তিনিরা খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মানবিক সহায়তার কনভয় প্রাথমিকভাবে মিসর হয়ে প্রবেশ করার মাধ্যমে তীব্র ঘাটতি বিক্ষিপ্তভাবে কমানো সম্ভব হয়েছে।
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া একটি রেজুলেশনে ‘নিরাপদ এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে মানবিক সহায়তা প্রদানের’ আহ্বান জানানো হয়েছে। কিন্তু সেই প্রস্তাবে অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়নি।
কয়েকদিন বিলম্বের পরে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাস হওয়া এই প্রস্তাবকে সাহায্য গোষ্ঠী এবং অধিকার কর্মীরা ‘দুঃখজনকভাবে অপর্যাপ্ত’ এবং ‘প্রায় অর্থহীন’ বলে বর্ণনা করেছেন।