ঢাকা ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

দেশের বিভিন্ন জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:১১:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪২৩ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঁপছে দেশের বিভিন্ন জনপদ। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও দুদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে। এরপর এক সপ্তাহের মতো তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। জানুয়ারির মাঝামাঝি দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।

গত সপ্তাহে জেলায় মৃদু ঠান্ডা অনুভূত হলেও এই সপ্তাহ থেকে ঠান্ডা বেড়েই চলেছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে কমছে তাপমাত্রা। রাতে তা গিয়ে ঠেকছে আরও কমে। আর তার সঙ্গে রয়েছে কুয়াশা। রাতের বেলা টিনের চালে অনেকটা বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির ঝরছে, সকাল হলেই সেই শিশির ঘাসে, গাছে ও ফসলে সূর্যের আভায় ঝিলিমিলি করছে। কিন্তু দুদিন ধরে চিত্র কিছুটা ভিন্ন হয়েছে। সকাল হয়ে দুপুর গড়ালেও সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে তাপমাত্রার পারদ উঠছে না। ফলে শীতে কাবু হতে হচ্ছে মানুষ। শীত থেকে বাচতে ভারি কাপর, সোয়েটার জ্যাকেট পড়তে হচ্ছে। কনকনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাচতে কান মুখ ঢেকে চলতে হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে আরও অন্তত দুদিন। যদিও এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে শুরু করবে। তবে মাসের মাঝামাঝি দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে আজ বুধবার (৩ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে এখানে। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা একটু বেশি। এই সময়টাতে তাপমাত্রাও নিচে নেমে আসে এখানে। তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে এই জেলায়।

তীব্র শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। যার ফলে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলাবাসীর। ঘন কুয়াশা থাকায় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জয়পুরহাটেও। অন্যদিকে, উত্তরের জেলা নীলফামারীতে ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। দুইদিন ধরে দেখা মিলছেনা সূর্যের।

এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজ সকালে সূর্য দেখা গেছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কমে আজ সকাল ৬টায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি, সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে, যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। এতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ জেলা হিমালয় বিধৌত এলাকায় অবস্থান হওয়ায় এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

তাপমাত্রা কমেছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) থেকে সূর্যের তেমন দেখা না মেলায় কনকনে শীতে কাঁপছে লালমনিরহাটবাসী। বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় ও সকাল নয়টায় জেলার তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিমাপ করা হয়েছে। শিগগিরই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বগতি হলেও এ মাসে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ ও বৃষ্টি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

দিনাজপুরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় হিমেল বাতাস সঙ্গে ঘন কুয়াশা। এতে করে দিনের বেলায়ও যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে অঞ্চল। গত কয়েকদিন থেকে সূর্যে দেখা মিলছে না।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, বুধবার (৩ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাতাসে আর্দ্রতা ১০০ ভাগ। চলিত বছরে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া এই মাসে জেলার ওপর দিয়ে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা আরো কমেছে। বুধবার (৩ জানুয়ারি) আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমে নেমেছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের আভাস। এদিন সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস।

ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল। পথ চলতে যানবাহনকে ব্যবহার করতে হচ্ছে হেড লাইট।

দুদিন ধরে হিমেল বাতাসের কারণে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন জেলার ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার বাসিন্দারা। আর রাতে টিনের চালে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। সকালে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা মানুষজন পড়েছেন ভোগান্তিতে। অন্যদিকে তীব্র ঠান্ডায় সবজি ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছেন কৃষকেরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। শৈত্যপ্রবাহ কবে নাগাদ হতে পারে তা দুপুরের মধ্যে জানানো যাবে।

ঘন কুয়াশায় মঙ্গলবার রাত থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল। আবহাওয়া অফিস বলছে, সারাদেশে আরও অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন এমন কুয়াশা থাকবে।

বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের নদী অববাহিকায় ভোর ৫টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টা ঘন থেকে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটার বা কোথাও কোথাও তার থেকে কমে যেতে পারে। এই সময় নৌ-যানসমূহকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো সংকেত দেখাতে হবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

টানা চারদিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন। কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হাচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল। বুধবার সকালের হাড়কাপানো শীতকে উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটেছে নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। দিনভর হিমেল বাতাসে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। কুয়াশার ঘনত্ব বেশি থাকায় কমে গেছে দৃষ্টিসীমা।

চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা আরও কমে গেছে। এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পৌঁছেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। আজ বুধবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীত অনুভুত হচ্ছে বেশি। তীব্র শীতে কাপছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন বলেন, আজ কুয়াশা দ্রুত কেটে গেছে। সকাল ১০টার আগেই ঝলমলে রোদ দেখা দিয়েছে। তবে তাপমাত্রা কমে যাওযায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। দুদিন এমন থাকতে পারে। এরপর আবারও ঘন কুয়াশা এবং বৃষ্টিরও পূর্বাভাস আছে।

অন্যদিকে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এই সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি সারাদেশের কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

অন্যদিকে, আগামী শুক্রবারের (৪ জানুয়ারি) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এছাড়া শুক্রবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে আগামী ৫ (পাঁচ) দিনে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

নিউজটি শেয়ার করুন

দেশের বিভিন্ন জেলায় বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ

আপডেট সময় : ০৬:১১:৪০ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ৩ জানুয়ারী ২০২৪

সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। ঘন কুয়াশার পাশাপাশি ঠাণ্ডা হাওয়ায় কাঁপছে দেশের বিভিন্ন জনপদ। উত্তরাঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। আবহাওয়া অফিস বলছে, আরও দুদিন এমন অবস্থা বিরাজ করবে। এরপর এক সপ্তাহের মতো তাপমাত্রা বাড়তে থাকবে। জানুয়ারির মাঝামাঝি দেশের বিভিন্ন স্থানে আবারও মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হতে পারে।

গত সপ্তাহে জেলায় মৃদু ঠান্ডা অনুভূত হলেও এই সপ্তাহ থেকে ঠান্ডা বেড়েই চলেছে। দিনের বেলা তাপমাত্রা কিছুটা উষ্ণ থাকলেও সন্ধ্যার পর থেকে কমছে তাপমাত্রা। রাতে তা গিয়ে ঠেকছে আরও কমে। আর তার সঙ্গে রয়েছে কুয়াশা। রাতের বেলা টিনের চালে অনেকটা বৃষ্টির ফোটার মতো শিশির ঝরছে, সকাল হলেই সেই শিশির ঘাসে, গাছে ও ফসলে সূর্যের আভায় ঝিলিমিলি করছে। কিন্তু দুদিন ধরে চিত্র কিছুটা ভিন্ন হয়েছে। সকাল হয়ে দুপুর গড়ালেও সূর্যের দেখা মিলছে না। এতে তাপমাত্রার পারদ উঠছে না। ফলে শীতে কাবু হতে হচ্ছে মানুষ। শীত থেকে বাচতে ভারি কাপর, সোয়েটার জ্যাকেট পড়তে হচ্ছে। কনকনে শৈত্যপ্রবাহ থেকে বাচতে কান মুখ ঢেকে চলতে হচ্ছে।

আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, চুয়াডাঙ্গাসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাবে আরও অন্তত দুদিন। যদিও এরপর তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে শুরু করবে। তবে মাসের মাঝামাঝি দেশের বিভিন্ন স্থানে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

এদিকে আজ বুধবার (৩ জানুয়ারি) দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত কয়েকদিন ধরে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে এখানে। হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় এখানে শীতের তীব্রতা একটু বেশি। এই সময়টাতে তাপমাত্রাও নিচে নেমে আসে এখানে। তাপমাত্রা আরও কমার আশঙ্কা রয়েছে এই জেলায়।

তীব্র শীতের সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মত কুয়াশা পড়ছে ঠাকুরগাঁওয়ে। যার ফলে জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জেলাবাসীর। ঘন কুয়াশা থাকায় দিনের বেলায় হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহনগুলো। ঘন কুয়াশার কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জয়পুরহাটেও। অন্যদিকে, উত্তরের জেলা নীলফামারীতে ঘন কুয়াশা আর হিমশীতল বাতাসে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। দুইদিন ধরে দেখা মিলছেনা সূর্যের।

এদিকে শীতের কারণে নিউমোনিয়া, অ্যাজমা, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়াসহ শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশু থেকে বয়স্ক মানুষ। জেলা ও উপজেলার হাসপাতালগুলোর আউটডোরে ঠান্ডাজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। চিকিৎসার পাশাপাশি শীতজনিত রোগ থেকে নিরাময় থাকতে বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করছেন চিকিৎসকরা।

জেলার প্রথম শ্রেণির তেঁতুলিয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ বলেন, আজ সকালে সূর্য দেখা গেছে। তবে গত দুই দিনের চেয়ে তাপমাত্রা কমে আজ সকাল ৬টায় ৭ দশমিক ৮ ডিগ্রি, সকাল ৯টায় ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রিতে নেমে এসেছে, যা এই মৌসুমে সর্বনিম্ন। এতে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বইছে। এ জেলা হিমালয় বিধৌত এলাকায় অবস্থান হওয়ায় এখানে অন্যান্য এলাকা থেকে শীত আগে নামে। এ সময়টাতে তাপমাত্রা অনেক কম থাকে। আগামীতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে।

তাপমাত্রা কমেছে উত্তরের জেলা লালমনিরহাটে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) থেকে সূর্যের তেমন দেখা না মেলায় কনকনে শীতে কাঁপছে লালমনিরহাটবাসী। বুধবার (৩ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় ও সকাল নয়টায় জেলার তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পরিমাপ করা হয়েছে। শিগগিরই তাপমাত্রা ঊর্ধ্বগতি হলেও এ মাসে আরও একটি শৈত্যপ্রবাহ ও বৃষ্টি দেখা দিতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

দিনাজপুরে তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বাড়ছে শীতের প্রকোপ। সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় হিমেল বাতাস সঙ্গে ঘন কুয়াশা। এতে করে দিনের বেলায়ও যানবাহনে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। রাত থেকে সকাল পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় ঢাকা থাকে অঞ্চল। গত কয়েকদিন থেকে সূর্যে দেখা মিলছে না।

দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, বুধবার (৩ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস, আর বাতাসে আর্দ্রতা ১০০ ভাগ। চলিত বছরে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এছাড়া এই মাসে জেলার ওপর দিয়ে দুটি মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।

কুড়িগ্রামে তাপমাত্রা আরো কমেছে। বুধবার (৩ জানুয়ারি) আগের দিনের তুলনায় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি কমে নেমেছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। রয়েছে শৈত্যপ্রবাহের আভাস। এদিন সকাল ৭টায় জেলার সর্বনিম্ন এ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। তবে রাতে তাপমাত্রা আরও কমবে বলে জানিয়েছে কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিস।

ঘন কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়ার কারণে ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। কুয়াশার কারণে বিঘ্নিত হচ্ছে যান চলাচল। পথ চলতে যানবাহনকে ব্যবহার করতে হচ্ছে হেড লাইট।

দুদিন ধরে হিমেল বাতাসের কারণে সবচেয়ে কষ্টে পড়েছেন জেলার ১৬টি নদ-নদীর অববাহিকার বাসিন্দারা। আর রাতে টিনের চালে বৃষ্টির মতো পড়ছে কুয়াশা। সকালে কাজের সন্ধানে ছুটে চলা মানুষজন পড়েছেন ভোগান্তিতে। অন্যদিকে তীব্র ঠান্ডায় সবজি ক্ষেত ও বীজতলা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় পড়েছেন কৃষকেরা।

কুড়িগ্রামের রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, আজ জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাতে তাপমাত্রা আরও কমতে থাকবে। শৈত্যপ্রবাহ কবে নাগাদ হতে পারে তা দুপুরের মধ্যে জানানো যাবে।

ঘন কুয়াশায় মঙ্গলবার রাত থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল। আবহাওয়া অফিস বলছে, সারাদেশে আরও অন্তত ৩ থেকে ৪ দিন এমন কুয়াশা থাকবে।

বুধবার দুপুর ১টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দর সমূহের জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, দেশের নদী অববাহিকায় ভোর ৫টা থেকে পরবর্তী ৩-৪ ঘণ্টা ঘন থেকে ঘন কুয়াশার কারণে দৃষ্টিসীমা ১০০ মিটার বা কোথাও কোথাও তার থেকে কমে যেতে পারে। এই সময় নৌ-যানসমূহকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তবে কোনো সংকেত দেখাতে হবে না।

আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। সেই সঙ্গে মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

টানা চারদিন ধরে ঘন কুয়াশা আর তীব্র শীতে বিপর্যস্ত মেহেরপুরের জনজীবন। কনকনে ঠান্ডায় ব্যাহত হাচ্ছে স্বাভাবিক চলাচল। বুধবার সকালের হাড়কাপানো শীতকে উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে ছুটেছে নিম্ন আয়ের কর্মজীবী মানুষ। দিনভর হিমেল বাতাসে বাড়ছে শীতের তীব্রতা। কুয়াশার ঘনত্ব বেশি থাকায় কমে গেছে দৃষ্টিসীমা।

চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা আরও কমে গেছে। এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পৌঁছেছে চুয়াডাঙ্গা জেলা। আজ বুধবার জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এ মৌসুমের সর্বনিম্ন। তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় শীত অনুভুত হচ্ছে বেশি। তীব্র শীতে কাপছে চুয়াডাঙ্গার মানুষ।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক তহমিনা নাছরিন বলেন, আজ কুয়াশা দ্রুত কেটে গেছে। সকাল ১০টার আগেই ঝলমলে রোদ দেখা দিয়েছে। তবে তাপমাত্রা কমে যাওযায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। দুদিন এমন থাকতে পারে। এরপর আবারও ঘন কুয়াশা এবং বৃষ্টিরও পূর্বাভাস আছে।

অন্যদিকে, আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এই সময়ে সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পাশাপাশি সারাদেশের কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

অন্যদিকে, আগামী শুক্রবারের (৪ জানুয়ারি) আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। পাশাপাশি মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এছাড়া শুক্রবার সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। সেই সঙ্গে সারাদেশের কোথাও কোথাও ঘন কুয়াশার কারণে দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে। তবে আগামী ৫ (পাঁচ) দিনে রাতের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।