এবার শোবিজ অঙ্গনের একঝাঁক তারকা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লড়াই করছেন। এরমধ্যে কেউ দলীয়ভাবে আবার কেউ স্বতন্ত্র হিসেবেই লড়াই করছেন। শোবিজ ছাড়াও ক্রীড়াঙ্গণের কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় ইনফ্লুয়েন্সাররাও ভোটের মাঠে অবতীর্ণ হয়েছেন। রাত পোহালেই ভোট গ্রহণ শুরু। রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হবে ভোটগ্রহণ, শেষ হবে বিকেল ৪টায়। প্রায় ১২ কোটি ভোটার দেশের পরবর্তী শাসক নির্বাচন করবেন। বিএনপি ও সমমনাদের বর্জনের মধ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ২৮টি দল। এর মধ্যে দলীয় প্রার্থী ১ হাজার ৫৩৪ জন আর স্বতন্ত্র ৪৩৬ জন।
প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে মাঠে নেমেছেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘হঠাৎ বৃষ্টি’-খ্যাত নায়ক ফেরদৌস আহমেদ (ঢাকা-১০)। তার বিপরীতে প্রার্থী হলেন চারজন। জাতীয় পার্টি থেকে হাজী মো. শাহজাহান, এনপিপির কে. এম শামসুল আলম, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের শাহরিয়ার ইফতেখার ও বিএনএফ প্রার্থী মো. বাহারানে সুলতান বাহার।
ফেরদৌসের মতোই প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী নৌকা প্রতীক নিয়ে ভোটের মাঠে বিশ্বসেরা ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান (মাগুরা-১)। যেখানে তার প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ কংগ্রেসের অ্যাডভোকেট কাজী রেজাউল হোসেন, জাতীয় পার্টির মো. সিরাজুস সায়েফিন সাঈফ, বিএনএফের কে. এম. মোতাসিম বিল্লা, তৃণমূল বিএনপির সনজয় কুমার রায় (রনি)। এ আসনে সাকিবসহ সকলেই প্রায় নতুন মুখ।
হবিগঞ্জ-৪ এ আসনে মোট প্রার্থী ৮ জন। আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচনের জন্য চেষ্টা করেও সফল হননি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। যার কারনে শেষ পর্যন্ত তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দলীয় প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী। এছাড়াও রয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. আল আমিন, ইসলামী ঐক্যজোটের আবু ছালেহ, জাতীয় পার্টির আহাদ উদ্দিন চৌধুরী, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের মোহাম্মদ আব্দুল মমিন, বিএনএমের মো. মোখলেছুর রহমান, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের মো. রাশেদুল ইসলাম খোকন।
বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্তজা (নড়াইল-২)। রাজনীতিতে তিনি বেশ পুরাতন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদের নির্বাচিত এমপি। এবার তাকে লড়াই করতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আর সাত প্রার্থীর সঙ্গে। এনপিপির মনিরুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির খন্দকার ফায়েকুজ্জামান, গণফ্রন্টের লতিফুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ হাফিজুর রহমান, ইসলামী ঐক্যজোটের মাহবুবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী নূর ইসলাম ও সৈয়দ ফয়জুল আমির।
বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনের কিংবদন্তি অভিনেতা আসাদুজ্জামান নূর (নীলফামারী-২)। তিনি এর আগে ২০০১, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মোট চারবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এবার নিয়ে পঞ্চমবারের মতো নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তার সঙ্গে রয়েছে আরও তিন প্রার্থী। জাতীয় পার্টির শাহজাহান আলী চৌধুরী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোরছালীন ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়নাল আবেদিন।
দেশের সুপরিচিত কণ্ঠশিল্পী মমতাজ বেগম (মানিকগঞ্জ-২) আসনে গত দুই নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এবং ২০১৮ সালে ২ লাখ ৭২ হাজার ৫২১ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। এবারও তিনি নৌকার প্রার্থী। এই আসনে এবার আওয়ামী লীগের চার প্রার্থীসহ মোট ৯ প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়াই করছেন তিনি। যেখানে রয়েছেন বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের ফেরদৌস আহমেদ আসিফ, বিএনএমের এ, কে, এম ইকবাল হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জাকির হোসেন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির এ কে নাহিদ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের তানভীর হাসান, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাহাব উদ্দিন আহমেদ, দেওয়ান জাহিদ আহমেদ, দেওয়ান সফিউল আরেফিন এবং মুশফিকুর রহমান খান।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসন থেকে নৌকার টিকিটে লড়াই করতে চেয়েছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী মাহিয়া মাহি। মনোনয়ন না পেয়ে তিনি রাজশাহী-১ আসনে ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। তার আসনে হেভিওয়েট প্রার্থী টানা তিনবারের সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীসহ ১০ প্রার্থী লড়াই করছেন। বাকিরা হলেন- বিএনএফের আল-সাআদ, তৃণমূল বিএনপির জামাল খান দুদু, বিএনএমের মো. শামসুজ্জোহা, এনপিপির নূরুন্নেসা, মুক্তিজোটের বশির আহমেদ, জাতীয় পার্টির মো. শামসুদ্দীন, স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম রাব্বানী, মো. আখতারুজ্জামান ও শাহনেওয়াজ আয়েশা আখতার জাহান।
নানা কারণেই আলোচনায় থাকেন ইউটিউবার হিরো আলম। তার রাজনীতিতে যোগ দেয়ার বিষয়টি তাকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে মূলধারার গণমাধ্যমেও আলোচিত করে তোলে। এর আগে সিটি নির্বাচন, ঢাকা ১৭ উপনির্বাচনে অংশ নিয়ে বেশ আলোচনায় আসেন। এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে এবার বগুড়া-৪ আসনে বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে মনোনয়ন জমা দেন। প্রাথমিকভাবে তার প্রার্থিতা বাতিল হলেও আপিলে টিকে যায়। তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা হলো- জাসদের এ কে এম রেজাউল করিম তানসেন, জাতীয় পার্টির শাহীন মোস্তফা কামাল, গণতন্ত্রী পার্টির মনজুরুল ইসলাম, স্বতন্ত্র মোশফিকুর রহমান ও জিয়াউল হক মোল্লা।
নতুন রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন বিএনএম থেকে নোঙ্গর প্রতীকে লড়াই করছেন সংগীতশিল্পী ডলি সায়ন্তনী (পাবনা-২)। নৌকার প্রার্থী আহমেদ ফিরোজ কবিরসহ সাতজন প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন এই আসনের নির্বাচনে। বাকিরা হলেন- এনপিপির আজিজুল হক, তৃণমূল বিএনপির আবুল কালাম আজাদ, তরিকত ফেডারেশনের মমিনুল ইসলাম, জাতীয় পার্টির মেহেদী হাসান রুবেল, জাসদের শেখ আনিসুজ্জামান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আজিজ খান।
বরিশাল-২ আসনে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হয়ে গামছা প্রতীকে নির্বাচন করছে কণ্ঠশিল্পী নকুল কুমার বিশ্বাস। আওয়ামী লীগের সমর্থন পাওয়া বাংলাদেশ ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেননের মতো হেভিওয়েট প্রার্থীর বিরুদ্ধে ভোটযুদ্ধ করছেন নকুল কুমার বিশ্বাস। বাকিরা হলো- এনপিপির সাহেব আলী, তৃণমূল বিএনপির আলহাজ্ব মো.শাহজাহান, জাতীয় পার্টির ইকবাল হোসেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফাইয়াজুল হক ও মনিরুল ইসলাম।