আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দেশের ২৯৯টি সংসদীয় আসনে ভোট গ্রহণ চলছে। আজ প্রায় ১২ কোটি ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে তাদের শাসক নির্বাচন করবেন। জনগণ যাদের পক্ষে রায় দেবেন, আগামী পাঁচ বছরের জন্য তাদের হাতেই থাকবে বাংলাদেশের শাসনভার।
ভোরবেলা থেকে প্রিসাইডিং অফিসারদের কাছে ব্যালট হস্তান্তর করা হয়। ঢাকার বাইরে উপজেলা পরিষদগুলো থেকে ব্যালট পৌঁছানো হয় বিভিন্ন কেন্দ্রে। এ ক্ষেত্রে দূরের কেন্দ্রগুলোতে সরকারি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে ব্যালট পাঠানো হয় কয়েকটি হাবে। পরে হাবগুলো থেকে প্রিসাইডিং অফিসারের মাধ্যমে যায় কেন্দ্রে কেন্দ্রে।
এবারের নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২৮টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের দেড় হাজারেরও বেশি প্রার্থী। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ৪শ ৩৬ জন। দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের। প্রার্থীর সংখ্যা -২৬৬ , জাতীয় পার্টির, ২৬৫, তৃণমূল বিএনপি থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন- ১৩৫, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির- ১২২, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সংখ্যা ৫৬। এছাড়াও প্রার্থী দিয়েছে, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট,জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল। বিএনপি-জামায়াতসহ সমমনা দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন করেছে।
এ ছাড়া নির্বাচনে ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, জাতীয় পার্টি, জাতীয় পার্টি-জেপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ, তৃণমূল বিএনপি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ কংগ্রেস, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল) প্রার্থী দিয়েছে।
এবারের নির্বাচনের ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ৩শ কোটি টাকা। বিশাল অংকের এ বাজেটের সিংহভাগই খরচ হচ্ছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পেছনে। তাদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি টাকা। আর নির্বাচন পরিচালনা বাবদ সম্ভব্য খরচ ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা
এবারের নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ২৫টি । এর মধ্যে দূর্গম ২ হাজার ৯৬৪ টি ভোট কেন্দ্র ছাড়া সবগুলো কেন্দ্রে ব্যালট বক্স পাঠানো হয় ভোট গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা আগে। নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ পুরুষ, ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ নারী এবং ৮৫২ জন হিজড়া।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সার্বিক আইন-শৃংখলা নিশ্চিতে কাজ করছে সাত লাখ পুলিশ, আনসার, আনসার ব্যাটালিয়ান, রেব, কোস্টগার্ড ও বিজিবি সদস্য ও নৌবাহিনীর সদস্য। পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে নিয়োজিত আছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেই সাথে সাড়ে তিন হাজার বিচারিক ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাঠে দায়িত্ব পালন করছেন এরই মধ্যে।
আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক হিসাবে সংসদ নির্বাচন দেখতে ১৮৬ জনকে অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের কর্মী। তবে দেশি পর্যবেক্ষকের সংখ্যা প্রায় ২১ হাজার।
সংসদ নির্বাচন ২০২৪
> রোববার (৭ জানুয়ারি) ভোটগ্রহণ চলবে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত।
> এক প্রার্থীর মৃত্যু হওয়ায় ৩০০ আসনের মধ্যে রোববার ভোট হবে ২৯৯ আসনে। স্বতন্ত্র প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে নওগাঁ-২ আসনে পরে ভোটগ্রহণ করবে ইসি।
> ৩০০ আসনে ৫.১ শতাংশ নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিগত নির্বাচনের তুলনায় যা রেকর্ড সংখ্যা।
> এই নির্বাচনে ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০১ সালের পর যা সর্বোচ্চ।
> এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে রয়েছেন ১৯৭০ জন প্রার্থী। তাদের মধ্যে ১ হাজার ৫৩৪ জন দেশের ২৮টি রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী, বাকি ৪৩৬ জন স্বতন্ত্র।
> দেশে মোট ভোটার ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। এর মধ্যে ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন পুরুষ আর ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন নারী। এ ছাড়া তৃতীয় লিঙ্গের ভোটারের সংখ্যা ৮৫২। এছাড়া নতুন করে ভোট দেবেন ১৫ লাখ মানুষ।
> ৪২ হাজার ১০৩টি কেন্দ্রে ভোটকক্ষ থাকবে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২টি।
> এবার সব আসনেই সনাতন পদ্ধতিতে ব্যালট পেপার ব্যবহার করে ভোটগ্রহণ করা হবে।
> নির্বাচনের দিন পরিস্থিতি শান্ত রাখতে ৮ হাজার পুলিশ এবং আধা সামারিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যরাও মাঠে থাকছেন।
> এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সংখ্যা ২৬৬ জন। এ ছাড়া জাতীয় পাটির ২৬৫ জন, তৃণমূল বিএনপির ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের ৯৬ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ৫৬ জন জন।
> দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ৭২ ঘণ্টা মোটরসাইকেল ও ২৪ ঘণ্টা সর্বসাধারণের যান চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এসময় কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সশস্ত্র বাহিনী, প্রশাসনের সদস্য ও অনুমোদিত পর্যবেক্ষক, জরুরি সেবার যানবাহন, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম ও অভিন্ন কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র এবং সংবাদপত্র বহনকারী সব ধরনের যানবাহন, দূরপাল্লার যানবাহন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের ক্ষেত্রে এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে। সাংবাদিক, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী, জাতীয় মহাসড়ক, প্রধান আন্তঃজেলা রুট, মহাসড়ক এবং প্রধান মহাসড়কের সংযোগ সড়কের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ শিথিল করা হবে।
> ভোট গণনার কাজ শেষ হওয়ার পর পরই প্রত্যেক প্রিজাইডিং অফিসার ব্যবহৃত ব্যালট পেপার ভর্তি সিলমোহরকৃত বিভিন্ন ধরনের প্যাকেট, ভোট গণনার বিবরণী ও ব্যালট পেপারের হিসাব সরাসরি অথবা সহকারী রিটার্নিং অফিসারের মাধ্যমে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পাঠাবেন। তিনি প্রিজাইডিং অফিসারদের কাছ থেকে প্রাপ্ত ফলাফল যোগ করে প্রত্যেক প্রার্থীর ফলাফল নির্ধারণ করবেন।
> দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন দেখার জন্য ১৮৬ জন পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তাদের মধ্যে ১২৭ জন পর্যবেক্ষক আর ৫৯ জন বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের কর্মী। এ ছাড়া নির্বাচন পর্যবেক্ষণে দেশি ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। তাদের মধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবে।
> দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যয় হচ্ছে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা। এ নির্বাচনে আসনপ্রতি সাত কোটি টাকার বেশি ব্যয় করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ ব্যয়ের তিন ভাগের দুই ভাগ রাখা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য।