শপথের বিষয়ে দলের বিজয়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (জাপা) জিএম কাদের। আজ সোমবার রংপুর নগরীর সেনপাড়ায় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
নির্বাচনের ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, ‘নিয়ন্ত্রিত নির্বাচনের জন্য সরকারকে চরম মাশুল দিতে হবে। সরকার যেখানে যাকে দরকার মনে করেছে, তাকেই জয়ী করে এনেছে। আমার বিশ্বাস এ নির্বাচন জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্যতা পাবে না।’
শপথ নেওয়া ও সংসদ অধিবেশে যোগ দেওয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, ‘এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখনও সময় আসেনি। তবে এ নির্বাচনে আমরা আসতে চাইনি। আমাদের বলা হয়েছিল, এ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে। সরকার তাদের দেওয়া অঙ্গীকার পালনে ব্যর্থ হয়েছে।’
জাতীয় পার্টির সঙ্গে আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী জোট হয় ২০০৮ সালে। ওই নির্বাচনে মহাজোট সঙ্গী জাতীয় পার্টিকে ৩২ আসন ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আর উন্মুক্ত ১৭টি আসন উভয় দলের প্রার্থীরা নিজ নিজ প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২০ আসনে এবং নির্বাচনের মাধ্যমে ১৩টি আসনে বিজয়ী হন।
এরপর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন মহাজোট থেকে জাতীয় পার্টিকে দেওয়া হয় ২৯টি আসন। তারা শেষ পর্যন্ত ২২টি আসনে জয়লাভ করে সংসদে বিরোধী দল হয়ে ওঠে। এবার ১১টি আসন দিয়ে জাতীয় পার্টি কেমন বিরোধী দল হবে, সেই প্রশ্ন যেমন দেখা দিয়েছে। তেমনি দুর্গখ্যাত রংপুরের রাজনীতিতেও দুমড়েমুচড়ে পড়া জাতীয় পার্টি ঘুরে দাঁড়াতে পারবে কি না সেটিও এখন দেখার বিষয়।
গতকাল রোববার অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি মাত্র ১১টি আসনে জয়ী হয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবারের নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসনে ছাড় দিয়ে নিজেদের প্রার্থী প্রত্যাহার করে নিয়েছিল।
এবার দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আড়াই শ এর বেশি আসনে প্রার্থী দেয় জাতীয় পার্টি। তবে নির্বাচনের আগেই ৭৬ জন প্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। দলের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হকসহ ১১ প্রার্থী জয় পেয়েছেন।
গত ১৫ নভেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ছিল গত ৩০ নভেম্বর। মনোনয়নপত্র বাছাই করা হয় ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর। আর রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করা হয় ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর।
এছাড়া প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ছিল ১৭ ডিসেম্বর। আর প্রতীক বরাদ্দ করা হয় ১৮ ডিসেম্বর। ওই দিনই প্রচার শুরু করেন প্রার্থীরা। এরপর গত শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত চলে প্রচার।
এবারের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিবন্ধিত ৪৪টি দলের মধ্যে ২৮টি দল অংশ নেয়। বিএনপিসহ বাকি সমমনা দলগুলো অংশ নেয়নি।