দৃষ্টান্ত গড়লেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
- আপডেট সময় : ০৫:৫৭:০২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪২৯ বার পড়া হয়েছে
দেশের ইতিহাসে বিরল এক দৃষ্টান্ত গড়লেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। টানা আটবারের মতো হয়েছেন সংসদ সদস্য। এরপর তাঁকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত দেন রাষ্ট্রপতি। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা টানা ৪র্থ মেয়াদে এবং মোট পঞ্চমবারের মতো বাংলাদেশের সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখালেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। গড়লেন সবচেয়ে বেশিবার সরকার গঠনের রেকর্ডও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় বঙ্গভবনে তাঁকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন।
উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনা, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নদ্রষ্টা। বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্রনায়ক। কেউ তাকে অভিহিত করেন ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’ হিসেবে।
রূপকথার গল্পের মতো হলেও বাস্তবের অনন্য উদাহরণ শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে কাঁধে দায়িত্ব নেন আওয়ামী লীগের। নামেন গণতন্ত্রের সংগ্রামে। স্বৈরাচারকে উৎখাত করার আন্দোলনের পাশাপাশি প্রথম নির্বাচনে অংশ নেন ১৯৮৬ সালে গোপালগঞ্জ–৩ আসনে। সেই থেকে প্রতিবারই জয় লাভ করেছেন এই আসনে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অষ্টমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
এই নির্বাচনে জেতার মধ্য দিয়ে দেশ পরিচালনায় অনন্য রেকর্ড গড়লেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সাল থেকে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করলেন তিনি। এর আগে ১৯৯৬ সালে দলকে ক্ষমতায় আনেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই বঙ্গবন্ধু হত্যার বিশ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ।
শুধু দেশের রাজনীতি নয়, বিশ্ব রাজনীতিরও আলোচিত ব্যক্তিত্ব বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। একাত্তরের প্রেক্ষাপট মনে রেখে, মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে প্রসংশিত হন গোটা বিশ্বে। যে দেশকে একদিন বলা হয়েছিল তলাবিহীন ঝুড়ি, তাঁর দক্ষ নেতৃত্বে সেই দেশ যাচ্ছে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথেই বাংলাদেশকে গোটা বিশ্বে অনন্য উচ্চতায় তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার মূল কারিগর বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়, সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব’— এই পররাষ্ট্রনীতিতে নানামুখী ভূরাজনীতির মেরুকরণেও অনড় রেখেছেন সরকারের অবস্থান। বারবার উঠে এসেছেন বিশ্বের প্রভাবশালী নারী নেতৃত্বের তালিকায়।
এশিয়ার দেশগুলোতে টানা মেয়াদে রাষ্ট্র–ক্ষমতায় থাকা নতুন কোনো প্রবণতা নয়। এমনকি বিশ্বজুড়েই এমন প্রবণতা রয়েছে। যদিও আফ্রিকার দেশগুলোতে এ প্রবণতা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। সেই অনন্য রেকর্ডের দিকে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
১৯৬৮ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্রুনাইয়ের সুলতান হিসেবে দেশ শাসন করছেন হাসানাল বলখিয়া। বলা হচ্ছে, ব্রিটিশ রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যুর পর তিনিই এখন বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের রাষ্ট্রপ্রধান। ডেনমার্কের রানি দ্বিতীয় মার্গারেটের চেয়ে পাঁচ বছর বেশি সময় রাজত্ব করছেন বলখিয়া। দ্বিতীয় মার্গারেট বর্তমানে দীর্ঘতম রাজত্বের অধিকারের তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন।
কম্বোডিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে ক্ষমতায় ছিলেন হুন সেন। ১৯৯৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২৫ বছর তিনি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর আগেও উপ–প্রধানমন্ত্রী থেকে রাষ্ট্রের নানা ক্ষমতাধর পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন হুন সেন। সব মিলিয়ে প্রায় চার দশক ধরে কম্বোডিয়া শাসন করেছেন ৭০ বছর বয়সী এই শাসক। তবে গত বছরের ২২ আগস্ট তিনি প্রধানমন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। উত্তরসূরী হিসেবে তাঁর ছেলে হুন মেনেতের নাম ঘোষণা করেন হুন সেন।
নুরসুলতান নাজারবায়েভ ছিলেন বর্তমান বিশ্বে সোভিয়েত যুগের সর্বশেষ নেতা। তিনি কাজাখস্তানের ক্ষমতায় ছিলেন তিরিশ বছর। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যাওয়ার পর কাজাখস্তান যখন স্বাধীন রাষ্ট্র হলো, তখন থেকেই ক্ষমতায় ছিলেন নুরসুলতান নাজারবায়েভ। ২০১৯ সালের মার্চে তিনি পদত্যাগ করেন।
তাজিকিস্তানের লৌহমানব হিসেবে পরিচিত ইমোমালি রাখমন। ১৯৯২ সাল থেকে ৯৫ লাখ জনগণের দেশটি পরিচালনা করছেন রাখমন। তাঁর শাসনামলে একটি গৃহযুদ্ধও হয়েছে। ধীরে ধীরে তিনি নিজের ক্ষমতা সুসংহত করেছেন এবং ২০১৬ সালে সংবিধান সংশোধন করে প্রেসিডেন্টের দায়িত্বে থাকার মেয়াদ বাড়িয়ে সাত বছর করেছেন। ২০২০ সালে নির্বাচনের মাধ্যমে টানা পঞ্চমবারের মতো প্রেসিডেন্টের দায়িত্বগ্রহণ করেছেন ইমোমালি রাখমন।
উত্তর কোরিয়ার প্রতিষ্ঠাতা কিম ইল সুং টানা ৪৬ বছর রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। ১৯৯৪ সালে ৮২ বছর বয়সে নিজ কার্যালয়েই তাঁর মৃত্যু হয়। তাইওয়ানের প্রথম প্রেসিডেন্ট চিয়াং কাই শেক ৪৭ বছর ধরে রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিলেন।
মাহাথির মোহাম্মদ ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত টানা ২২ বছর মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৮০–এর দশকে মালয়েশিয়ার ব্যাপক অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং রূপান্তরের জন্য তাঁকেই কৃতিত্ব দেওয়া হয়। ২০১৮ সালে অবসর থেকে আবারো রাজনীতিতে ফেরেন তিনি।
১৯৬৭ সালে সুকর্ণের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণের পর সুদীর্ঘ ৩১ বছর ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশ শাসন করেছেন সুহার্তো।