যা বললেন নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা
- আপডেট সময় : ০৫:৫২:১৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪০৪ বার পড়া হয়েছে
নতুন সরকারে দায়িত্ব নেওয়ার পর সম্ভাব্য অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় কাজ করার কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পাওয়া নতুন মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীরা। বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনে শপথ গ্রহণের পর নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানান তারা।
দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিসভায় নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে পাওয়া খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। আমাদের যে ইশতেহার সেখানে কর্মসংস্থানের কথা বলা হয়েছে। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক চ্যালেঞ্জ আগেও মোকাবেলা করেছি, আশা করি এবারও উত্তরণ হবে।’
আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা জুনায়েদ আহমেদ পলক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘প্রথমত কৃতজ্ঞতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। খুব অল্প বয়সে তিনি তিনবার আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি চেষ্টা করব যাতে সেটা রক্ষা করতে পারি। শ্রম দিয়ে মেধা দিয়ে তিনি যে দায়িত্ব দেবেন তা পালন করার চেষ্টা থাকবে।
এবারই প্রথম মন্ত্রিসভায় ডাক পেয়েছেন জিল্লুর হাকিম। তিনি মনে করছেন, এর মাধ্যমে তাঁকে তারঁ কাজের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
জিল্লুর হাকিম বলেন, ‘অবশ্যই এটা স্বীকৃতি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের কাজের স্বীকৃতি দিয়েছেন এজন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। দায়িত্ব যাতে নিষ্ঠা ও সততার সাথে পালন করতে পারি সে চেষ্টা থাকবে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কর্মসংস্থান, দেশকে মাদকমুক্ত করা, মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে এবং আইন শৃঙ্খলার উন্নতি।’
বর্তমান মন্ত্রিসভায় প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে থাকার ফরহাদ হোসেন এবার পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই প্রধানমন্ত্রী আমার উপর আস্থা রেখেছেন। গত ৫ বছর তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। আমার পিতা বঙ্গবন্ধুর সহকর্মী ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে লক্ষ্য থাকবে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়তে ভূমিকা রাখা। প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দুরদৃষ্টিসম্পন্ন একজন নেতা। তাঁর সাথে আবার কাজ করতে পারা আমার জন্য অনেক বড় সুযোগ।’
সাবেক শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু কন্যা আবারও আস্থা ও বিশ্বাস রেখে মন্ত্রিনসভায় রেখেছেন এটা অত্যন্ত আনন্দের। তিনি যখনইট আমাকে কোনো দায়িত্ব দিয়েছেন চেষ্টা করেছি সবটুকু দিয়ে তা পালনের। এবারও সেটা করব।’
সন্ধ্যা ৭টায় নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যদের শপথ পড়াবেন রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন। শপথের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।
টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীসহ ৩৭ সদস্যের মন্ত্রিসভা হচ্ছে এবার।
এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী ছাড়া, ২৫ জন পূর্ণ মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী থাকছেন। ২৫ মন্ত্রীর মধ্যে নতুন মুখ রয়েছেন ১২ জন। অন্যদিকে ১১ প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে নতুন নিয়োগ পেয়েছেন সাত জন।
যদিও তাদের মধ্যে কয়েকজন আগে মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের জন্য বঙ্গভবনে ১ হাজার ৪০০ অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
কে কোন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনে থাকছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রী
১) আ ক ম মোজাম্মেল হক- মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
২) ওবায়দুল কাদের- সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
৩) আবুল হাসান মাহমুদ আলী- অর্থ মন্ত্রণালয়।
৪) আনিসুল হক- আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৫) নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন- শিল্প মন্ত্রণালয়।
৬) আসাদুজ্জামান খান (কামাল)- স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
৭) মো. তাজুল ইসলাম- স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
৮) মুহাম্মদ ফারুক খান- বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৯) মোহাম্মদ হাছান মাহমুদ- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
১০) ডা. দীপু মনি- সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
১১) সাধন চন্দ্র মজুমদার- খাদ্য মন্ত্রণালয়।
১২) আব্দুস সালাম- পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়।
১৩) মো. ফরিদুল হক খান- ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
১৪) র আ ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী- গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়।
১৫) নারায়ণ চন্দ্র চন্দ- ভূমি মন্ত্রণালয়।
১৬) জাহাঙ্গীর কবির নানক- বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়।
১৭) মো. আব্দুর রহমান- মৎস্য ও প্রাণি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
১৮) মো. আব্দুস শহীদ- কৃষি মন্ত্রণালয়।
১৯) স্থপতি ইয়াফেস ওসমান- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
২০) ডা. সামন্ত লাল সেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
২১) মো. জিল্লুল হাকিম- রেলপথ মন্ত্রণালয়।
২২) মো. ফরহাদ হোসেন- জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
২৩) নাজমুল হাসান (পাপন)- যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।
২৪) সাবের হোসেন চৌধুরী- পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
২৫) মহিবুল হাসান চৌধুরী- শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
প্রতিমন্ত্রী হলেন যারা
১) নসরুল হামিদ- বিদ্যুৎ বিভাগ।
২) খালিদ মাহমুদ চৌধুরী- নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়।
৩) জুনাইদ আহমেদ পলক- ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়।
৪) জাহিদ ফারুক- পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়।
৫) সিমিন হোমেন রিমি- মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৬) কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা- পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়।
৭) মো. মহিববুর রহমান- দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়।
৮) মোহাম্মদ আলী আরাফাত- তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়।
৯) শফিকুর রহমান চৌধুরী- প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
১০) রুমানা আলী- প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
১১) আহসানুল ইসলাম (টিটু)- বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এদিকে নতুন মন্ত্রী–প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সংবিধানের ৫৬ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আজ সরকারের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের নিয়োগ দিয়েছেন।
এর আগে গত বুধবার আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত জানান রাষ্ট্রপতি মো সাহাবুদ্দিন। একইসঙ্গে তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের অনুমতিও দেন তিনি।
এতে বলা হয়, রাষ্ট্রপতি দেশের সংবিধান অনুযায়ী, দ্বাদশ জাতীয় সংসদের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের আস্থাভাজন সংসদ সদস্য শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে নিয়োগের সিদ্ধান্ত প্রদান করেছেন। তার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের জন্য সম্মতি জানানো হয়েছে।
এছাড়া নতুন মন্ত্রিসভা গঠনের সঙ্গে সঙ্গে বর্তমান মন্ত্রিসভা ভেঙে দেয়া হয়েছে বলে গণ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২টি আসন পেয়ে টানা চতুর্থবারের মতো নির্বাচিত হয়েছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বধীন আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে ৫ বারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।