০১:১৩ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা: প্রথম দিনের শুনানিতে যা হলো

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (এমসিজে) বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানি। গত ডিসেম্বরে তেল আবিবের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরই মধ্যে প্রথম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হবে।

প্রথম দিনের শুনানিতে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, ১৯৪৮ সালের গণহত্যার যে কনভেশন, তা লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। দক্ষিণ আফ্রিকাও জাতিসংঘের গণহত্যার কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আইসিজেতে বিরোধের নিষ্পত্তি পাওয়ার এখতিয়ার রয়েছে তাঁদের।

১৭ জন বিচারকের সামনে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। দেশটির আইনজীবী ব্লিন নি ঘ্রালাইগ বলেন, গাজায় যাতে আর হত্যাকাণ্ড না চালানো হয়, সেজন্য ইসরায়েলকে সম্মানের সঙ্গেই আদালতের মুখোমুখি করা হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই সবাই জানেন।

শুক্রবার শুনানিতে নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন ইসরায়েলের আইনজীবীরা। এর আগেই অবশ্য তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। এমনকি হামাসকে দায়ী করেছেন তারা।

হামাসের ব্যাপারেও আদালতে কথা বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। এর মধ্যে একজন ব্রিটিশ আইনজীবী বেভান লয়ি। তিনি বলেন, হামাসকে গণহত্যার মামলা দেওয়ার কোনো মানে নেই। ১৯৪৮ সালের গণহত্যার যে কনভেশন, তাতে তাদের স্বাক্ষর নেই।

প্রথম দিনের শুনানিতেই গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে আদালতকে আদেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, এই মামলার কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে চলবে। এর আগেই গাজায় হামলা বন্ধ করা দরকার। আদালত যেন সেই আদেশ দেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রথম এমন অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে ‘কাঠগড়ায়’ দাঁড়াতে হচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে। এই ইহুদিদের ওপরই একসময় চালানো হয় গণহত্যা। নামটি কখনও ভুলার নয়, হলোকাস্ট। তেমনই গণহত্যার অভিযোগ এবার তাদের বিরুদ্ধে।

গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে বলে মামলার আবেদনে বলা হয়। তবে জাতিসংঘের আদালতে মামলাটি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা’।

গাজায় তিন মাস ধরে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও বোমা হামলায় ২২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় গত মাসের শেষদিকে এমন অভিযোগে দেশটি এই মামলা করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার ৮৪ পৃষ্ঠার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলের কার্যকলাপ এক ধরনের গণহত্যা। কারণ, তারা গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের একটি বড় অংশকে ধ্বংস করে দিতেই এই কাজ করছে। ইসরায়েলের গণহত্যামূলক কার্যকলাপের মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, গুরুতর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যাতে সমগ্রভাবে ওই গোষ্ঠীর শারীরিক ক্ষতি হয়।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আইন বিভাগের অধ্যাপক জুলিয়েট ম্যাকিনটায়ার বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার এই মামলায় সবকিছু সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, সবকিছু নিয়েই মাঠে নেমেছে তারা।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলা: প্রথম দিনের শুনানিতে যা হলো

আপডেট : ০৬:০৭:২৬ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৪

আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (এমসিজে) বৃহস্পতিবার শুরু হয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় গণহত্যার অভিযোগে দায়ের করা মামলার শুনানি। গত ডিসেম্বরে তেল আবিবের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। এরই মধ্যে প্রথম দিনের শুনানি শেষ হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরা বলছে, শুক্রবার দ্বিতীয় দিনের শুনানি হবে।

প্রথম দিনের শুনানিতে নিজেদের অভিযোগের পক্ষে যুক্তি দেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। তাঁরা বলেন, ১৯৪৮ সালের গণহত্যার যে কনভেশন, তা লঙ্ঘন করেছে ইসরায়েল। দক্ষিণ আফ্রিকাও জাতিসংঘের গণহত্যার কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। এতে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আইনি সংস্থা আইসিজেতে বিরোধের নিষ্পত্তি পাওয়ার এখতিয়ার রয়েছে তাঁদের।

১৭ জন বিচারকের সামনে বিভিন্ন যুক্তি উপস্থাপণ করেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। দেশটির আইনজীবী ব্লিন নি ঘ্রালাইগ বলেন, গাজায় যাতে আর হত্যাকাণ্ড না চালানো হয়, সেজন্য ইসরায়েলকে সম্মানের সঙ্গেই আদালতের মুখোমুখি করা হয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই সবাই জানেন।

শুক্রবার শুনানিতে নিজেদের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন ইসরায়েলের আইনজীবীরা। এর আগেই অবশ্য তাঁরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। এমনকি হামাসকে দায়ী করেছেন তারা।

হামাসের ব্যাপারেও আদালতে কথা বলেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। এর মধ্যে একজন ব্রিটিশ আইনজীবী বেভান লয়ি। তিনি বলেন, হামাসকে গণহত্যার মামলা দেওয়ার কোনো মানে নেই। ১৯৪৮ সালের গণহত্যার যে কনভেশন, তাতে তাদের স্বাক্ষর নেই।

প্রথম দিনের শুনানিতেই গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করতে আদালতকে আদেশ দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা। তাঁরা বলছেন, এই মামলার কার্যক্রম বছরের পর বছর ধরে চলবে। এর আগেই গাজায় হামলা বন্ধ করা দরকার। আদালত যেন সেই আদেশ দেন।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, এই প্রথম এমন অপরাধে আন্তর্জাতিক আদালতে গিয়ে ‘কাঠগড়ায়’ দাঁড়াতে হচ্ছে ইহুদি রাষ্ট্র ইসরায়েলকে। এই ইহুদিদের ওপরই একসময় চালানো হয় গণহত্যা। নামটি কখনও ভুলার নয়, হলোকাস্ট। তেমনই গণহত্যার অভিযোগ এবার তাদের বিরুদ্ধে।

গাজায় ফিলিস্তিনিদের হত্যাসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং মানুষের জীবন বিপর্যস্ত করে তোলা হয়েছে বলে মামলার আবেদনে বলা হয়। তবে জাতিসংঘের আদালতে মামলাটি প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলছেন, ‘এই অভিযোগ মিথ্যা’।

গাজায় তিন মাস ধরে চালানো ধ্বংসযজ্ঞ ও বোমা হামলায় ২২ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হওয়ার ঘটনায় গত মাসের শেষদিকে এমন অভিযোগে দেশটি এই মামলা করে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, দক্ষিণ আফ্রিকার দায়ের করা মামলার ৮৪ পৃষ্ঠার নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসরায়েলের কার্যকলাপ এক ধরনের গণহত্যা। কারণ, তারা গাজায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনিদের একটি বড় অংশকে ধ্বংস করে দিতেই এই কাজ করছে। ইসরায়েলের গণহত্যামূলক কার্যকলাপের মধ্যে রয়েছে ফিলিস্তিনিদের হত্যা, গুরুতর মানসিক ও শারীরিক ক্ষতি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা, যাতে সমগ্রভাবে ওই গোষ্ঠীর শারীরিক ক্ষতি হয়।

ইউনিভার্সিটি অব সাউথ অস্ট্রেলিয়ার আইন বিভাগের অধ্যাপক জুলিয়েট ম্যাকিনটায়ার বলছেন, দক্ষিণ আফ্রিকার এই মামলায় সবকিছু সবিস্তারে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে হচ্ছে, সবকিছু নিয়েই মাঠে নেমেছে তারা।