ঢাকা ০৯:০১ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বাংলা বাংলা English English हिन्दी हिन्दी

আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা, শীত বাড়বে

নিজস্ব প্রতিবেদক
  • আপডেট সময় : ০৬:৫২:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪
  • / ৪৫১ বার পড়া হয়েছে
৭১ নিউজ বিডির সর্বশেষ নিউজ পেতে অনুসরণ করুন গুগল নিউজ (Google News) ফিডটি

দেশজুড়ে শীতের ঠান্ডা আরও বেড়েছে। মাঝরাত থেকে কুয়াশায় ঢেকে আছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান। বিশেষ করে উত্তরের জনপদে ঘন কুয়াশায় ও তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে চলাফেরাসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম। অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারপাশ। অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে যানবাহন। শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। কনকনে ঠাণ্ডায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগীর চাপ। কয়েক জেলায় বইছে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ।

চলমান শীতের তীব্রতা কমার কোনো সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বরং আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। আর এর মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে।

আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আজকের তুলনায় আগামীকাল (শনিবার) শীত সামান্য বাড়বে। আজ চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, কিশোরগঞ্জ ও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই মাসজুড়েই শীত থাকবে। শীতের অনুভূতি কমবে না।

শীত বাড়ার কারণ হিসেবে কাজী জেবুন্নেসা বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে, যা এই মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে। মূলত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গেলেই শীতের অনুভূতি বেশি মনে হয়। এছাড়া, আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। যার ফলে শীতের অনুভূতি বেশি হতে পারে।

কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল হাওয়া। গত পাঁচ দিনে মেঘের আড়ালে সূর্য। রোদহীন দিনভর শীত দুর্ভোগে বিপর্যস্ত পঞ্চগড় জনপদ।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সকালে তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে মেঘ-কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্য। এ কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। গত দুই দিন ধরেই তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত পাঁচ দিন ধরেই কুয়াশার আড়ালে ঢাকা রয়েছে সূর্য। সকাল থেকে বিরাজ করছে মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে নানা শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। এ ছাড়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরে মানুষরাও পড়েছে শীত দুর্ভোগে।

এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে। সন্ধ্যার পর আবার ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কোলাহলহীন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলো। বাজারগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কাগজের কাটন, টায়ার ও কাগজে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়।

হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় উত্তরের জেলা নীলফামারীর জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। রাত থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। পাঁচ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে। দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরকম তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন এমন থাকবে। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিদিনই সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে।

এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুখেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল। প্রাণীগুলোর শীতজনিত রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পৌষের শেষে এসে জয়পুরহাটে ঘন কুয়াশা আর শীতল হাওয়ার দাপট আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। দিনে ও রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মত পড়ছে কুয়াশা। শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পুরো অঞ্চল। ফলে গরম কাপড় না পেয়ে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ। ঠাণ্ডায় কাজে যেতে পারেনি বয়স্ক শ্রমজীবীরা।

নওগাঁর বদলগাছি আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে, আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাবে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এ দিনও কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এদিকে, কুয়াশার ঘনত্ব কেটে যাওয়ায় প্রায় ৭ ঘণ্টা পর শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিআইডব্লিউটিসির নরসিংহপুর ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে প্রচণ্ড কুয়াশা দেখা দিয়েছিল। কুয়াশার মধ্যে নৌপথের দুর্ঘটনা এড়াতে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে কুয়াশার ঘনত্ব কেটে গেলে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনা, শীত বাড়বে

আপডেট সময় : ০৬:৫২:২৮ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৪

দেশজুড়ে শীতের ঠান্ডা আরও বেড়েছে। মাঝরাত থেকে কুয়াশায় ঢেকে আছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থান। বিশেষ করে উত্তরের জনপদে ঘন কুয়াশায় ও তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। ব্যাহত হচ্ছে চলাফেরাসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম। অনেক বেলা পর্যন্ত কুয়াশায় ঢেকে থাকছে চারপাশ। অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে যানবাহন। শীতে বেশি কষ্ট পাচ্ছে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষেরা। কনকনে ঠাণ্ডায় হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে বিভিন্ন ঠাণ্ডাজনিত রোগীর চাপ। কয়েক জেলায় বইছে মৃদ্যু শৈত্যপ্রবাহ।

চলমান শীতের তীব্রতা কমার কোনো সম্ভবনা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। বরং আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে সংস্থাটি। আর এর মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনে শীতের তীব্রতা আরও বাড়বে বলেও জানানো হয়েছে।

আজ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গা ও কিশোরগঞ্জের নিকলিতে ৯.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে বলেও জানান এই আবহাওয়াবিদ।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা এ তথ্য জানান।

তিনি বলেন, আজকের তুলনায় আগামীকাল (শনিবার) শীত সামান্য বাড়বে। আজ চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, কিশোরগঞ্জ ও দিনাজপুরের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই মাসজুড়েই শীত থাকবে। শীতের অনুভূতি কমবে না।

শীত বাড়ার কারণ হিসেবে কাজী জেবুন্নেসা বলেন, আমাদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার ব্যবধান কমে গেছে, যা এই মাসজুড়েই অব্যাহত থাকবে। মূলত সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমে গেলেই শীতের অনুভূতি বেশি মনে হয়। এছাড়া, আগামী ১৭ ও ১৮ জানুয়ারি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা আরও কমে যাবে। যার ফলে শীতের অনুভূতি বেশি হতে পারে।

কুয়াশার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল হাওয়া। গত পাঁচ দিনে মেঘের আড়ালে সূর্য। রোদহীন দিনভর শীত দুর্ভোগে বিপর্যস্ত পঞ্চগড় জনপদ।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ভোর ৬টায় রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা। সকালে তাপমাত্রার রেকর্ডের তথ্যটি জানান জেলার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাসেল শাহ।

তিনি জানান, গত পাঁচ দিন ধরে মেঘ-কুয়াশার চাদরে ঢাকা পড়েছে সূর্য। এ কারণে ঠান্ডা অনুভব হচ্ছে। গত দুই দিন ধরেই তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রির মধ্যে রেকর্ড হয়েছে। দিনের তাপমাত্রা নিম্নমুখী। গতকাল দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তর-পূর্ব বা উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হওয়ার কারণে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। সে অনুপাতে এ অঞ্চলে এখন শীতের তীব্রতা বেশি হচ্ছে।

জেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত পাঁচ দিন ধরেই কুয়াশার আড়ালে ঢাকা রয়েছে সূর্য। সকাল থেকে বিরাজ করছে মেঘাচ্ছন্ন পরিবেশ। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। পাথর-চা শ্রমিক, দিনমজুর থেকে শুরু করে নানা শ্রমজীবী মানুষ। কমে গেছে তাদের দৈনন্দিন রোজগার। পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিনযাপন করছেন তারা। প্রয়োজন ছাড়া অনেকে ঘর থেকে বের না হলেও জীবিকার তাগিদে শীত উপেক্ষা করেই কাজে বেরিয়েছেন নিম্ন আয়ের পেশাজীবীরা। বিপাকে পড়েছেন চাষিরাও। তারাও ঠান্ডার প্রকোপে খেতখামারে কাজ করতে পারছেন না। এ ছাড়া শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের মিলছে না প্রয়োজনীয় গরম কাপড়। রাস্তায় চলা ভবঘুরে মানুষরাও পড়েছে শীত দুর্ভোগে।

এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের তাপমাত্রা রেকর্ড হচ্ছে ১৫ থেকে ১৬ ডিগ্রির মধ্যে। সন্ধ্যার পর আবার ঠান্ডা বাতাস প্রবাহিত হওয়ায় কোলাহলহীন হয়ে পড়ে শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলো। বাজারগুলোতে বিভিন্ন জায়গায় কাগজের কাটন, টায়ার ও কাগজে আগুন ধরিয়ে শীত নিবারণ করতে দেখা যায়।

হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডায় উত্তরের জেলা নীলফামারীর জনজীবন কাহিল হয়ে পড়েছে। রাত থেকে শুরু করে সকাল ১০টা পর্যন্ত বৃষ্টির ফোঁটার মতো শিশির পড়ছে। পাঁচ দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যের। রাত থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশায় আচ্ছন্ন থাকছে। দিনের বেলায়ও যানবাহনকে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে হচ্ছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সৈয়দপুরে সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরকম তাপমাত্রা আরও কয়েক দিন এমন থাকবে। সৈয়দপুরের আকাশে ঘন কুয়াশা বিরাজ করছে। এই ঘন কুয়াশা দুপুর পর্যন্ত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে প্রায় প্রতিদিনই সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিমান ওঠানামায় বিঘ্ন ঘটছে।

এদিকে রাত ও দিনের তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি হওয়ায় দিনের চেয়ে রাতে অনেক বেশি ঠান্ডা বেশি অনুভূত হচ্ছে। মানুষ আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। প্রচণ্ড শীতে কাজে বের হতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ছেন শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ। ঠান্ডা বাতাসে ঘরে থাকা দায় হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের মানুষদের। ঘন কুয়াশা আর ঠান্ডায় নষ্ট হচ্ছে ধানের বীজতলা ও আলুখেত। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। ঠান্ডায় কষ্ট পাচ্ছে গরু-ছাগল। প্রাণীগুলোর শীতজনিত রোগের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

পৌষের শেষে এসে জয়পুরহাটে ঘন কুয়াশা আর শীতল হাওয়ার দাপট আরও বেড়েছে। সেই সঙ্গে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠাণ্ডায় শ্রমজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষ পড়েছেন চরম বিপাকে। দিনে ও রাতে বৃষ্টির ফোঁটার মত পড়ছে কুয়াশা। শুক্রবার জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ০৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

গত সোমবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত জেলায় সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশায় ঢাকা পড়েছে পুরো অঞ্চল। ফলে গরম কাপড় না পেয়ে ঠাণ্ডায় কাবু হয়ে পড়েছে ছিন্নমূল ও দরিদ্র মানুষ। ঠাণ্ডায় কাজে যেতে পারেনি বয়স্ক শ্রমজীবীরা।

নওগাঁর বদলগাছি আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, এই পরিস্থিতি আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে।

এদিকে, আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক জানিয়েছেন, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে, যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে।

শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়বে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাবে এবং দিনের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।

শনিবার (১৩ জানুয়ারি) অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে।

এ দিনও কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে।

এদিকে, কুয়াশার ঘনত্ব কেটে যাওয়ায় প্রায় ৭ ঘণ্টা পর শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে ফেরি চলাচল শুরু হয়েছে। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিআইডব্লিউটিসির নরসিংহপুর ফেরিঘাট কর্তৃপক্ষ ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দেয়। এর আগে বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটের সহ-ব্যবস্থাপক মো. ইকবাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃহস্পতিবার দিবাগত মধ্যরাত থেকে প্রচণ্ড কুয়াশা দেখা দিয়েছিল। কুয়াশার মধ্যে নৌপথের দুর্ঘটনা এড়াতে শরীয়তপুর-চাঁদপুর নৌপথে রাত ১টা ২০ মিনিট থেকে ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে কুয়াশার ঘনত্ব কেটে গেলে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক করে দেওয়া হয়েছে।