সারাদেশে আরও বেড়েছে শীতের তীব্রতা
- আপডেট সময় : ০৯:১১:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৪
- / ৪২০ বার পড়া হয়েছে
সারাদেশে আরও বেড়েছে শীতের তীব্রতা। দিনাজপুরসহ দেশের উত্তরাঞ্চলে রাভভর বৃষ্টির মতো ঝরছে কুয়াশা। মাঝরাত থেকে কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। সকাল থেকে ঢাকাসহ সারাদেশেই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির মতো ঘন কুয়াশা পড়ছে। বিশেষ করে উত্তরের জনপদে ঘন কুয়াশায় ও তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। সেইসাথে বেড়েছে শীতজনিত রোগের প্রকোপ। ব্যাহত হচ্ছে চলাফেরাসহ স্বাভাবিক কাজকর্ম। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছে শিশু ও বয়স্করা। অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলাচল করছে যানবাহন।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, দু’দিন পর থেকে কমবে শীতের তীব্রতা। ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি বৃষ্টি হতে পারে উত্তরাঞ্চলে। এতে ঘন কুয়াশা কেটে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে আসবে তাপমাত্রা।
দিনাজপুর আবহওয়া অফিসের তথ্যমতে রোববার (১৪ জানুয়ারি) দিনাজপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯০ ভাগ। চলতি বছরে এটি জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। জেলার ওপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। চলতি সপ্তাহে জেলায় স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্ভবনা আছে।
এদিকে প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশার কারণে অনেক বেলা পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে চলছে দূরপাল্লার যানবাহন। সন্ধ্যার পরে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না সাধারণ মানুষ।শীতের সকালে ছিন্নমূল আর গ্রামীণ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা।
দিনাজপুর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, জেলায় বর্তমানে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বইছে। দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়। শনিবার ও রোববার টানা দুই দিন ধরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্র দিনাজপুরে। এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯০ ভাগ। আকাশের উপরিভাগে ঘন কুয়াশা থাকায় সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পুরোপুরি আসছে না। এজন্য বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। চলতি সপ্তাহের শেষে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বৃষ্টি হলে তাপমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, আজকে দেশের চারটি জেলার উপর দিয়ে শৈত্য প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে আবহাওয়া পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হবে না। তার মানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আজকে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে দিনাজপুরে ৮.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও রাজধানী ঢাকায় আজ সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ব্যবধান কমে যাওয়ায় এতো বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানান এ আবহাওয়াবিদ।
সংস্থাটির তথ্যমতে, আগামী ২৪ ঘণ্টা অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়া, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠান্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
আগামীকাল সোমবার পূর্বাভাসে সংস্থাটি জানায়, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারাদেশে মাঝারী থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগে সাময়িকভাবে বিঘ্ন ঘটতে পারে। এছাড়া, সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পেতে পারে। দেশের কোথাও কোথাও দিনে ঠাণ্ডা পরিস্থিতি বিরাজ করতে পারে।
চলতি মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় কাঁপছে পুরো রাজশাহী। শীতজনিত নানা জটিলতায় রোগীদের ভিড় বাড়ছে হাসপাতালে। রোববার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৬টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। শনিবার (১৩ জানুয়ারি) সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ মৌসুমে সর্বনিম্ন ছিল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগের দিন বৃহস্পতিবার ছিল ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, সর্বোচ্চ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে। সর্বোচ্চ আর সর্বনিম্ন তাপমাত্রা খুব কাছাকাছি হওয়ায় শীতের তীব্রতা বেড়েছে।
এক সপ্তাহ ধরে উত্তরের জেলা নীলফামারীর এমন অবস্থা। প্রচণ্ড শীতে কাবু হয়ে পড়েছে জনজীবন। কুয়াশার ঘনত্ব এতটাই বেশি যে দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় রেলপথ ও সড়ক পথে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে যানবাহন চলাচল করছে। আকাশপথেও বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটেছে।
রোববার (১৪ জানুয়ারি) সকাল সাড়ে ১০টায়ও সূর্যের দেখা মেলেনি জেলার কোথাও। এদিন নীলফামারীর সৈয়দপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সৈয়দপুর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লোকমান হোসেন বলেন, উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশার কারণে শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
সিরাজগঞ্জে তিন দিন ধরে নেই সূর্যের দেখা। কুয়াশায় ঢাকা রয়েছে প্রকৃতি। সেই সঙ্গে বইছে মৃদু হিমেল বাতাস। যার ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। এর সঙ্গে রাত ও দিনের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
প্রচণ্ড শীতে স্বাভাবিক কর্মজীবনে নেমে এসেছে অনেকটাই স্থবিরতা। এদিকে এমন আবহাওয়া আরও দু-একদিন থাকতে পারে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
আগের দুই দিনের মতো রোববারও (১৪ জানুয়ারি) সকাল থেকেই কুয়াশাচ্ছন্ন রয়েছে সিরাজগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলা। এদিকে ঘন কুয়াশার কারণে সড়ক ও মহাসড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে।
তাড়াশ কৃষি আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, আজ রোববার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল রেকর্ড করা হয়েছিল ১১ দশমিক ৪।
তিনি আরও বলেন, দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। এই পার্থক্য বেশি থাকলে শরীর কিছুটা গরম হওয়ার সুযোগ পায় যার ফলে শীত কম অনুভূত হয়, যা এখন হচ্ছে না।
মো. জাহিদুল ইসলাম বলেন, তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। এখন শৈত্যপ্রবাহ নেই, তবে তিন দিন হলো সূর্যেরও দেখা নেই। আরও দু-একদিন এমন কুয়াশাচ্ছন্ন ও শীত থাকতে পারে।
কনকনে শীতের প্রভাব পড়েছে পার্বত্য জেলা বান্দরবানে। জেলায় আজকের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সনাতন কুমার মন্ডল।
তীব্র শীতের কারণে অসুবিধায় পড়েছে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। শীতের কারণে দিনের অনেকটা সময় সূর্যের দেখা মিলছে না। বিশেষ করে সাঙ্গু নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী জনসাধারণের ভোগান্তি একটু বেশি।